নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
একটা সময় আসে যখন কিছুই ঠিকঠাক হয় না। প্রত্যাশার সঙ্গে মেলে না মাঠের পারফরম্যান্স। যেকোনো দলের ক্ষেত্রেই এটা হতে পারে। বাংলাদেশ দলে সম্ভবত এখন সেই সময়টা চলছে। অন্তত টি-টোয়েন্টি সংস্করণে তো বটেই। বিশ্বকাপ এবং এরপর ঘরের মাঠে পাকিস্তান সিরিজে খুবই হতাশ করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। রঙিন পোষাকে সময়টা যাচ্ছে ধুসর। এবার টেস্ট পরীক্ষা। সাদা পোষাকের ক্রিকেট কি রাঙাতে পারবে বাংলাদেশ? প্রশ্নটা আরো জোরালো হয় পারফরম্যান্সের পাশাপাশি দলের অবস্থা বিবেচনায়।
টি-টোয়েন্টিতে যতটা টেস্টে পাকিস্তান-বাংলাদেশের তফাৎ তারচেয়ে অনেক বেশি। সাম্প্রতিক ফর্ম, ছন্দে থাকা সেরা ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিও বাংলাদেশকে রাখছে অনেক পিছিয়ে। রঙিন পোষাকে বাংলাদেশ দল অন্তত ক্রিকেটার পায় লড়াই করার। অধিনায়করাও অন্তত শক্তি প্রদর্শেনের জায়গা পান কারো না কারো ব্যাটে কিংবা বলে চেপে। কিন্তু মুমিনুল হকের বোধ হয় কপালটাই খারাপ। টেস্ট অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর খুব কম টেস্টেই পুরো শক্তির দল নিয়ে নামতে পেরেছেন। তিনি নেতৃত্ব পাওয়ার পর যতগুলো টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ, কারও না কারও চোট, কারও বিশ্রাম বা ছুটি লেগেই আছে। আজ থেকে শুরু চট্টগ্রাম টেস্টেই তো নিয়মিত চার ক্রিকেটারকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এই সিরিজ দিয়েই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু করবে বাংলাদেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের চক্রে পাকিস্তানের এটি দ্বিতীয় সিরিজ। এমনিতে এই আসরে দুই দলের লক্ষ্যও আসলে ভিন্ন মেরুতে। পাকিস্তান নিশ্চিতভাবে চাইবে শিরোপা দৌড়ে থাকতে। বাংলাদেশ সর্বশেষ অবস্থান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতেই দিশেহারা।
চোটের কারণে চট্টগ্রাম টেস্টের দলে নেই সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্টের দলে থাকা মাহমুদউল্লাহ এর মধ্যেই এই সংস্করণকে বিদায় বলেছেন। হুট করেই মূল দলের চার খেলোয়াড় না থাকা একটা বড় ধাক্কা তো অবশ্যই। মাহমুদউল্লাহ টেস্ট খেলবেন না- এটা কিছুটা অনুমিতই ছিল। তবে সাকিব ও তামিমকে পাওয়ার আশা তো কিছুদিন আগেও ছিল। আর তাসকিনের চোটটা তো একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এই সিরিজে তাই বেশ কয়েকজন অনভিজ্ঞ ও নতুন ক্রিকেটার সুযোগ পাবেন।
চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে অভিষেক হতে পারে দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে থাকা তরুণ ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলীর। বদলের হাওয়া লাগতে পারে টপ অর্ডারেও। তামিম না থাকায় ওপেনার সাদমান ইসলামের সঙ্গে ইনিংসের সূচনা করতে দেখা যেতে পারে সাইফ হাসানকে। ‘ব্যাকআপ’ ওপেনার হিসেবে প্রথমবারের মতো দলে ডাক পাওয়া মাহমুদুল হাসানও পরে ফেলতে পারেন নিজের প্রথম টেস্ট ক্যাপ।
সব মিলিয়ে টেস্ট দলের প্রায় নতুন চেহারা। মুমিনুলের এই তরুণ টেস্ট দল কোন পথে এগোচ্ছে, সেটিই হয়তো বোঝা যাবে এবারের পাকিস্তান সিরিজ ও আগামী মাসের নিউজিল্যান্ড সফরে। এটা যে খুব বড় একটা চ্যালেঞ্জ, সেটা জানেন মুমিনুলও। সিনিয়র খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি দলের জন্য বিশাল ধাক্কার হলেও বাস্তবতা না মেনে উপায় নেই বলে জানালেন মুমিনুল, ‘টেস্টে ম্যাচে সব সময় অভিজ্ঞদের দরকার বেশি হয়। সাকিব ভাই, তামিম ভাই, তাসকিন—অভিজ্ঞরা না থাকলে একজন তরুণ অধিনায়ক হিসেবে আমার কাজটা কঠিন হয়ে যায়।’ সামনের দুটি সিরিজকে বড় পরীক্ষা মনে করেন মুমিনুলও, ‘আমাদের চারজন ক্রিকেটার নেই। এটা চ্যালেঞ্জিং হবে। আমার আর মুশফিক ভাইয়ের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। তবে বাংলাদেশ দলের টেস্ট ক্রিকেট কোন দিকে যাচ্ছে, এই সিরিজ ও পরের সিরিজে সেটা দেখতে পাবেন।’
গত কয়েকমাস ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট খুব একটা ভালো নেই। বিশ্বকাপের আগে প্রচণ্ড মন্থর উইকেট বানিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়ে ফাঁপা একটা খুশি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গিয়ে বাস্তবতার ধাক্কায় তা চুরমার হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট নেমে এসেছে কঠিন বাস্তবতায়। টি-টোয়েন্টির মতই যে টেস্টের দশাও বহাল। গত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চক্রে বাংলাদেশ ছিল একদম তলানিতে। শ্রীলঙ্কায় ব্যাটিং স্বর্গে একটি ড্র ছাড়া পয়েন্টই নেই। দেশের উইকেটে হোয়াইটওয়াশড হতে হয়েছে সেরা কয়েকজন ক্রিকেটারকে ছাড়া আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। এবার কন্ডিশন মিলিয়ে ঘরে- বাইরে ৬ সিরিজে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ হলেও মুমিনুল স্বপ্ন দেখছেন দুই ধাপ উত্তরণের, ‘আমার কাছে মনে হয়, এখন যে জায়গায় আছি আমরা, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ যখন শেষ হবে, তখন এখান থেকে দুই-তিন ধাপ ওপরে উঠতে পারলে আমি খুশি।’
বাংলাদেশের ঠিক উলটো অবস্থানে সফরকারী পাকিস্তান। কোন কিছু নিয়েই তাদের দ্বিধা না দুনোমনো নেই। থাকার কথাও না। দুই দলের মধ্যে দক্ষতা, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিস্তর ফারাকের কথা বাবরেরও না বোঝার কারণ নেই। তবু ক্রিকেটীয় ভব্যতায় বাংলাদেশকে সমীহ করলেন তিনি, ‘বাংলাদেশ দলে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় আছে। হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। ওরা জানে যে ওদের কন্ডিশনে খেলা। আমাদের চেষ্টা থাকবে শতভাগ দেওয়ার ও ভালো ক্রিকেট খেলার। ওদের কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার নেই, দলটা খুব অভিজ্ঞ নয়। দলে আসা-যাওয়া করছে, এরকম ক্রিকেটার আছে বেশ কজন। তবে ওদেরকে সহজভাবে নেওয়া যাবে না। আমাদের পরিকল্পনা হলো হার্ড ক্রিকেট খেলার।’ ঘরের মাঠে পাকিস্তান সিরিজ শেষে বাংলাদেশ দল যাবে নিউজিল্যান্ড সফরে। সেখানে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আরও দুটি ম্যাচ খেলবেন মুমিনুলরা। সেই সিরিজ থেকেও আগেই ছুটি নিয়ে রেখেছেন সাকিব। চোটের কারণে তামিমকে পাওয়া নিয়েও আছে শঙ্কা। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে অভিজ্ঞ এ দুজনকে ছাড়া খেলা যে কত কঠিন হতে পারে, সেটি হয়তো এখনই আঁচ করতে পারছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক অধিনায়ক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।