গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ছিনতাইকালে বাধা দেয়ায় গাজীপুরের রুনু সুপার মার্কেটের অপো মোবাইল কোম্পানির শোরুমের বিক্রয়কর্মী মেহেদী হাসান তুহিনকে (২৩) গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনসহ এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতারকৃতদের কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউবা অটোরিরিকশা চালক, কেউ আবার দিনমজুর। দিনের কর্মযজ্ঞ শেষে রাতে মিলিত হয় তারা। এরপর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর চৌরাস্তা-টাঙ্গাইল অংশে ফাঁকা ও নির্জন স্থানে অটোরিকশা নিয়ে নেমে পড়ে ওরা। সুযোগ বুঝে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও সিএনজির মতো বিভিন্ন যানবাহন আটকে যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করে পালিয়ে যায়। বাধা দিলেই বিপত্তি। কোনো যাত্রী বাধা দিলে, মোবাইল কিংবা মানিব্যাগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ছুরিকাঘাতে সব নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্র্ধষ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা।
গতকাল রোববার মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর। সিআইডির কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতরা হলো- সুমন হোসেন (২৪), মো. হজরত (২২), মাসুদ রানা (২২), অলিয়ার রহমান রাজু ও ফখরুল ইসলাম (৩৮)। গ্রেফতারদের কাছ থেকে নগদ এক হাজার ১০ টাকা, চারটি মোবাইল হ্যান্ডসেট, একটি অটোরিকশা ও নিহতের একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
সিআইডির ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন মেহেদী হাসান তুহিন। মেহেদী লেখাপড়ার পাশাপাশি গত ছয়মাস ধরে জিএমপির কোনাবাড়ীর রুনু সুপার মার্কেটের অপো মোবাইল কোম্পানির দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন। গত ১২ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে জিএমপির বাসন থানাধীন গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকায় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তুহিনকে গলাকেটে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যের এ মামলায় সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে সমস্ত বিষয়াদি যাচাই করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে হত্যায় জড়িত আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, তারা মূলত ছিনতাইকারী দলের সক্রিয় সদস্য। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট অটোবাইক নিয়ে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাস্তায় চলাচলকারী পথচারীদের টার্গেট করে তাদের অপরাধ কর্ম চালায়। কেউ ছিনতাইকালে বাধা প্রদান করলে তারা তাদের সঙ্গে থাকা ধারালো চাপাতি, লোহার রড দিয়ে আঘাত করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
পুলিশ সুপার মুক্তা ধর আরও বলেন, ঘটনার তারিখ ও সময়ে ভিক্টিম মেহেদী হাসান তুহিন কোনাবাড়ীর রুনু মার্কেটস্থ লোটাস টেলিকম থেকে কাজ শেষে মজলিশপুরস্থ ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। সেসময় নাওজোড়স্থ আব্দুল মালেক সরকার নিউ সুপার মার্কেটের সামনে পৌঁছালে তার কাছে থাকা মূল্যবান সামগ্রী আসামিরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। ভিক্টিম তুহিন এতে বাধা দিলে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আসামিরা তাদের কাছে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে গলা কেটে দ্রুত পালিয়ে যায়। গ্রেফতাররা টিকটকে বিভিন্ন ভীতিকর ভিডিও তৈরি করতো বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দিনের কর্মযজ্ঞ দেখে কারো বোঝার উপায় নেই ওরাই রাতের ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। এই চক্রের সদস্য ১০/১২ জন। তারা গত দুই বছর ধরে ছিনতাই কর্মে জড়িত। গ্রেফতারদের মধ্যে মাসুদ রানা একাধিক মামলার আসামি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।