মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের দিকে সীমান্তবাসী মানুষের জীবনের প্রতিটা চলাফেরা - চাষাবাদ, বিয়ে-শাদি, এমন কি ঘর থেকে বাথরুমে যাওয়ার ওপরেও যেভাবে নজরদারি করে বিএসএফ, তা অবিশ্বাস্য মনে হয়। বিএসএফের কাজের এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষের প্রতিক্রিয়া কী, সেটা জানতেই কয়েকদিন আগে বিবিসি বাংলার প্রতিনিধি গিয়েছিলেন উত্তর চব্বিশ পরগণার সীমান্ত ঘেঁষা কিছু গ্রামে।
সেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাঁটাতারের বেড়ার পাশে থাকা নারী পুরুষ জানিয়েছেন, কীভাবে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই বিএসএফ সদস্যদের নজরদারিতে থাকতে হয় তাদের। সকালে উঠে মাঠে গরু নিয়ে যেতে গেলে অনুমতি, বাজার থেকে জামা বা আনাজ কিনে আনতে গেলে তল্লাশি, প্রসূতি নারীর পেট কেন ফুলে আছে - সেই প্রশ্নের জবাব এসবই মেনে নিতে হয়েছে সীমান্তবাসীদের। তারালি গ্রামের বাসিন্দা মেহেরুন্নিসা গাজির সঙ্গে কথা বলার সময়েই এক বিএসএফ সদস্য কাঁধে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে তার বাড়ির উঠোন পেরিয়ে পিছনের দিকে চলে যান প্রতিনিধির চোখের সামনেই। বাড়ির কারও অনুমতি নেওয়াও হয়নি। ‘দেখলেন তো, আপনার সামনে দিয়েই কীভাবে বাড়ির উঠোন দিয়ে চলে গেল। বাড়িতে মেয়ে বউরা আছে, জিজ্ঞাসা করার কোনও ব্যাপারই নেই এদের’, বলছিলেন মিসেস গাজি। পেট্রাপোল সীমান্তের কাছাকাছি কালিয়ানি গ্রামের বাসিন্দা শর্মিলা সরকারও প্রায় একই তথ্য জানান। তিনি বলছিলেন, ‘এদের ডিউটি তো করার কথা বর্ডারে। কিন্তু এরা নজর রাখে আমাদের বাড়ির ওপর। বাসন মাজছি, বা কাপড় কাচছি, গান গাইতে গাইতে চলে গেল। বাড়ির পুরুষরা কিছু বললে গালি দিল। আবার রাতে বাথরুমে যাব, টর্চ মেরে দেখে যে কে যাচ্ছে। রাতে ঘুমিয়েও নিস্তার নেই, বেড়ার গায়ে বাড়ি দেবে। সবসময়ে আমাদের দেখছে তারা, কিন্তু রাস্তায় বেরলেই জিজ্ঞাসা করবে ও বৌদি কোথা থেকে এসেছেন, বাংলাদেশ থেকে নাকি,’ ক্ষোভ শর্মিলা সরকারের।
শুধু দোকান বাজার থেকে ফেরার পথে নয়, বিয়ে করতেও বিএসএফের অনুমতি লাগে সীমান্ত অঞ্চলে। হাকিমপুর গ্রামেরই গৃহবধূ জসমিনা বিবির কথায়, ‘বাড়িতে বিয়ে শাদি থাকলে আগে থেকেই ক্যাম্পে জানাতে হয়। আর এখানে এত চেকিং, এত চেকিং যে বাইরের লোক এসব জায়গায় বিয়ে দিতেই চায় না। তাই গ্রামের মধ্যেই বিয়ে শাদি সারতে হয়।’ ভারতীয় ভূখণ্ডেও তাই এই অঞ্চলের মানুষের কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তাদের ভারতীয়ত্বের পরিচয়পত্র। যে কোনও জায়গায় সেই পরিচয়পত্র দেখতে চাইতে পারেন বিএসএফ সদস্যরা। মেহেরুন্নিসা গাজি বলছিলেন সবসময়ে একটা ভয়ের মধ্যে থাকতে হয় তাদের। ‘আমাকে, আমার স্বামীকে কতবার ভয় দেখিয়েছে যে নারী কেস, গরুর কেস বা ফেন্সি কেস দিয়ে ফাঁসিয়ে দেবে,’ বলছিলেন মিসেস গাজি। তার যে ভয়টা আছে, সেটা সত্যি হয়ে নেমে এসেছিল দহরকান্দার বাসিন্দা তসলিমা বেগম সর্দারের জীবনে। মিসেস সর্দার প্রায় ২৫ মাস মাদক পাচারের অভিযোগে জেলে থাকার পরে সম্প্রতি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ১৯ মে, ২০১৯ তারিখ সকালে কাজের জায়গায় যাচ্ছিলেন সরকারি চাকুরিরত মিসেস সর্দার। সঙ্গে ছিলেন তার মেয়েও।
‘আমাকে আর মেয়েকে বিএসএফ দাঁড় করিয়ে বলল ব্যাগ চেক করব। আমরা কোনও আপত্তি করিনি - দেখুক চেক করে। তখন তারা বলে এখানে না, ক্যাম্পে গিয়ে চেক হবে। নিয়ে গেল ক্যাম্পে। আমাদের যেখানে বসিয়ে রেখেছিল, হঠাৎই দেখি সেখানে ফেন্সিডিল সাজাচ্ছে টেবিলে। বলা হল ছবি তুলব,’ কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন মিসেস সর্দার। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই আপত্তি করেন ছবি তুলতে। তার কথায়, ‘আমি বলেছিলাম ওই জিনিষ আমার সঙ্গে ছিল না, কিছুতেই ছবি তুলব না ওসব জিনিষের সঙ্গে। মেরে লাশ করে ফেললেও ছবি তোলাতে পারবে না তোমরা। খুব মারধর করল আমাদের। তারপরে থানায় নিয়ে গেল। বড়বাবু, মেজবাবু ছিলেন। তখন একটু সাহস এসেছে আমাদের, যে থানায় এনে তো আর মারতে পারবে না বিএসএফ। সব কথা খুলে বলেছিলাম যে মিথ্যা কেসে ফাঁসানো হচ্ছে আমাদের।’ কিন্তু ততক্ষণে মামলা রুজু হয়ে গেছে। জেল হাজতে যেতে হয়েছিল মা মেয়েকে।
এই সব হেনস্থার অভিযোগ সম্প্রতি উঠে এসেছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাতেও। বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আনা এক সরকারি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময়ে একাধিক বিধায়ক সীমান্তবাসীর নিয়মিত হেনস্থার কথা তুলে ধরেন। সেই প্রসঙ্গে বিএসএফের পূর্ব কমান্ডের প্রধান ওয়াই বি খুরানিয়া বলছিলেন, ‘আমরা প্রত্যেকটা অভিযোগ খুবই গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখি। প্রতিটা অভিযোগের ক্ষেত্রে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, তার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। সেই প্রক্রিয়া কঠোরভাবে মেনে চলা হয়।’ আইন তো আছে, কিন্তু যেখানে সব সময়ে মানুষকে ভয়ে থাকতে হয় যে ভুয়া অভিযোগে বিএসএফ ফাঁসিয়ে দেবে, সেখানে কি কারও সাহস হয় জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ করার? আর সেজন্য সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর অনেকেই জমি বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। অনেকেই সীমান্ত অঞ্চলে জমি বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। এদের অনেকের চাষের জমিই রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে। নিয়মিত তাদের চাষের কাজে যাওয়ার জন্য খাতায় নাম লিখিয়ে পরিচয়পত্র দেখিয়ে নির্দিষ্ট গেট পেরিয়ে যেতে হয়। আবার ফিরতেও হয় ঘড়ি ধরে।
কমল গাইন, দীপক মাঝিরা বলছিলেন কাঁটাতারের ওদিকে যা জমি আছে, তা বিএসএফ কিনে নিক, আমাদের পুনর্বাসন দিক। অন্য জায়গায় চলে যাব আমরা। গৃহবধূ লক্ষী সরকার বলছিলেন, ‘যে যন্ত্রণা আমরা পোহাচ্ছি, এবার এলাকা বাড়ছে তো, ভেতরের লোকরাও বুঝবে।’ বিএসএফের এলাকা জিরো লাইন থেকে ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত করায় সীমান্তবাসীর যে প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়েছিলাম, মিসেস সরকারের এই একটা কথাতেই তা ফুটে উঠল। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।