পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর ১২৮টি রুটে বাস-মিনিবাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ফলে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে। প্রথা চালু থাকলেও বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে কোনো কোনো বাস কোম্পানি হাফ ভাড়া নেওয়ার জন্য রাজি হয়েছে। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও ৯টি দাবির মধ্যে হাফ ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি ছিল।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে কবে করা হবে তা স্পষ্ট নয়। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁও মহিলা কলেজে একটি অনুষ্ঠানের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে রাজধানীতে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীদের হাফপাসের দাবিকে কেন্দ্র করে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সড়কের উভয় পাশে ১০টির বেশি বাস ভাঙচুর করা হয়। এছাড়াও আব্দুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে।
এদিকে, একমাত্র সরকারি সড়ক পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাসেও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের সরকারি বাসে হাফ ভাড়া নেওয়া হয় না। এ বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশ আমাদের কাছে আসেনি। সরকার নির্দেশ দিলে আমরা বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেব। এখন বিআরটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্যে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য প্রায় দেড়শ বাস রয়েছে বিআরটিসির। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিআরটিসির বাস চুক্তিতে নিতে চাইলে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিয়ে থাকি। ছোটবেলায় শিক্ষার্থী হিসেবে আমরাও বাসে হাফ ভাড়া দিয়েছি। এখন তো সেই পরিস্থিতি নেই। শিক্ষার্থী অনেক বেড়েছে।
বেসরকারি বাস মালিকরা বলছেন, হাফ ভাড়া বাস্তবায়ন হলে তাদের লোকসান গুনতে হবে। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্ল্যাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বাসে হাফ ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা নেই। আইনগত ভিত্তির ওপর এই দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়নি।
জানা যায়, ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বেড়েছে। তার প্রেক্ষিতে গত ৭ নভেম্বর থেকে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়রোধে গত ১০ নভেম্বর থেকে অভিযানে নেমেছে বিআরটিএ ও পুলিশ। তারপরও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা কমেনি। মিরপুরসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে যাত্রী তোলেও অতিরিক্ত ভাড়া না দেওয়ায় নামিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হাফ ভাড়া নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডা চলছে। শেষ পর্যন্ত তা আন্দোলন কর্মসূচিতে গড়াচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে হেনস্থা করা হয়। এছাড়া সরকারি তিতুমীর কলেজের চার শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করা হয়। শিক্ষার্থীদের এসব কর্মসূচি ও পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের প্রতিনিয়ত বাকবিতণ্ডার পরও হাফ ভাড়া প্রবর্তন করতে অংশীজনেরা বৈঠক করছেন না। ফলে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
গত ১৫ নভেম্বর রাজধানীর দিয়াবাড়ি-জুরাইন রুটের রাইদা পরিবহনের বাসে হাফ ভাড়া দিতে চাইলে বাসশ্রমিকদের রোষানলে পড়েন ওই এক শিক্ষার্থী।ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীকে রামপুরা যাবার আগেই বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। ওই শিক্ষার্থী পরে রামপুরায় সহপাঠীদের বিষয়টি জানালে শিক্ষার্থীরা ওই বাস কোম্পানির ৫০টি বাস আটকে রাখে। আর বিহঙ্গ পরিবহনের বাসে নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাসের চালকের সহকারীর অশোভন আচরণের জেরে ১৭ নভেম্বর রাতে ভিক্টোরিয়া পার্ক সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নিউমার্কেটের সামনে সড়কে কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও গতকাল হাফ পাসের (ভাড়া) দাবিতে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় ১০টি বাস ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ১০টি বাস ভাঙচুর করেছে বলে জানিয়েছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। পরে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান করেন।
ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া জানান, গণপরিবহনে বিশেষ করে বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে কয়েকদিন ধরেই ধানমন্ডি সাইন্সল্যাব এলাকার শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে রাস্তা অবরোধ করছেন। গতকালও দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা কয়েকটি বাসের গ্লাস ভাঙচুর করেন। তিনি জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। দুই কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ফেরানো হয়।
একই দাবিতে আব্দুল্লাপুরের সড়ক বন্ধ করে অবরোধ করে উত্তরার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর ১২ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত আব্দুল্লাপুর সড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এ সময় আব্দুল্লাহপুরের বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি শাহ্ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, হাফ পাস বাস ভাড়ার দাবিতে উত্তরার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্ররা রাস্তা অবরোধ করে রাখে। হাফ ভাড়া বলতে ছাত্ররা ১০ টাকার বেশি ভাড়া দিতে চায় না। তারা দুপুর ২ টা পর্যন্ত রাস্তায় ছিল। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তবে আন্দোলনরত অবস্থায় তারা কোন বাস বা গাড়ি ভাঙচুর করেনি।
এদিকে, বাসভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও যাত্রী হয়রানি বন্ধ করতে পর্যাপ্ত বাস নিশ্চিত এবং চক্রান্তকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) ১৯টি সংগঠন। গতকাল দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বাসভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও যাত্রী হয়রানি বন্ধ করতে পর্যাপ্ত বাস নিশ্চিত করা ও চক্রান্তকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’ শীর্ষক মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এ দাবি করা হয়।
পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক এম এ ওয়াহেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তারা সব রুটে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত সংখ্যক বাস নিশ্চিত, বিআরটিসির অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ প্রথা বাতিল, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারা নিশ্চিত করা এবং যে কোনো অজুহাতে অতিরিক্ত বাস ভাড়া বাড়ানো প্রতিহত করা, হাইকোর্টের রায়, বিদ্যামান আইন ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে যারা নানা অজুহাতে বাস চালনা বন্ধ, যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ পরিবহন খাতে নৈরাজ্য ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে এমন চক্রান্তকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ, শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ায় চলাচল নিশ্চিত, সব বাসে দৃশ্যমান বিভিন্ন স্থানে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা লাগানো এবং টিকিট সিস্টেম চালুর সুপারিশ করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।