নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিশেষ সংবাদদাতা : ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল বিসিবি। দলের সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে, সেই মিরাজকে স্বপদে বহাল রেখে, কোচ মিজানুর রহমান বাবুলের সঙ্গে জুটি গড়ে দিয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বিসিবি। ২ বছরে ৬টি হোম এন্ড অ্যাওয়ে সিরিজ খেলার সুযোগ, সারা বছর নিবিড় অনুশীলন, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে অজি কোচ স্টুয়ার্ট ল’কে মোটা অঙ্কে পরামর্শক নিয়োগ, ট্রফিতে চোখ রেখে কি করেনি বিসিবি? অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট ইতিহাসে অতীতের সব সাফল্য ছাড়িয়ে সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দে গর্বিত বিসিবি সভাপতি পর্যন্ত এই দলটিকে ঘিরে ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিলে তিলে ২ বছর ধরে গড়া সেই দলটিই কি না থেমে গেল সেমিতে এসে।
সাইফুদ্দিনকে স্প্রিংগারের সিঙ্গলের সঙ্গে সঙ্গে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে উইন্ডিজ গ্যাংনাম নৃত্য কষ্টটা দিয়েছে মিরাজদের বাড়িয়ে। তবে সেমিতে হেরে মাঠে যতোটা মুষড়ে পড়বে মিরাজরা বলে ধরে নিয়েছিল যারা, ততো মুষড়ে পড়েনি মিরাজরা। যে দলটি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সেমিতে পেয়ে ভারতের বিপক্ষে স্বপ্নের ফাইনালে অবতীর্ণ হওয়ার অংক করেছে, সেই দলটিকেই এখন খুঁজতে হচ্ছে সান্ত¦না। পর পর ২টি আন্তর্জাতিক সিরিজে ৪-০ ও ৩-০তে জেতার পর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে টানা ৪ জয়, সেখানেই থামতে হলো। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি শ্রীলংকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ফতুল্লায় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের দিকে এখন দিতে হচ্ছে মনোযোগ। ওই ম্যাচ জিতে তৃতীয় হয়ে আসরটি সম্পন্ন করতে চান মিরাজÑ ‘সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ায় মন সবারই খারাপ। তবে স্যাররা (কোচিং স্টাফ এবং বিসিবি কর্তারা) বলেছেন, এটাই শেষ নয়। আরও সামনে যেতে হবে। সামনে আমাদের আরেকটা ম্যাচ আছে। ওই ম্যাচটি আমাদের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওই ম্যাচ জিততে পারলে অনেক বড় অর্জন হবে। যদি আমরা তিনে থাকতে পারি তাহলে আমাদেরকে শীর্ষ পাঁচটি দলের একটি ধরা হবে। চ্যাম্পিয়ন অথবা রানারআপ হওয়াটা বড় বিষয় না। আমরা যে টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে টপ তিন কিংবা পাঁচ-এ আছি, এটা কিন্তু কম নয়। মুশফিক ভাইয়েরা পাঁচ নম্বর হয়েছেন ২০০৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। আমরা যদি তিন অথবা চার নম্বর হই তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম চিন্তা করবে আমাদেরকে চ্যাম্পিয়ন অথবা রানারআপ হতে হবে।’
অর্জনের এই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে একটি হারই মিরাজদের চোখ দিয়েছে খুলে। মানসিকভাবে শক্ত পোক্ত হওয়া ছাড়া আন্তর্জাতিক লেভেলে পরিণত ক্রিকেটার হিসেবে মেলে ধরা সম্ভব নয়, ভবিষ্যতের ক্রিকেটারদের সে বার্তাই দিয়ে গেলেন মিরাজÑ ‘এ টুনামেন্ট থেকে শেখার জায়গায়, এরকম চাপের মুখে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে, মানসিকভাবে কতোটা শক্ত হতে হবে, এখন থেকে তা শিখতে পারলে ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। কারণ এই দলটি থেকেই বেশিরভাগ ক্রিকেটারর জাতীয় দল ও টপ লেভেলে ক্রিকেট খেলবে। এসব দুই-তিন বছর পর অনেক সাহায্য করবে। আমাদের এ দলটির মধ্যে খুব ভালো ক্রিকেটার আছে, যারা এক-দুই বছরের মধ্যে নিজেদেরকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাবে। তারা দেশের জন্যে ক্রিকেট খেলবে। জাতীয় দলে খেলার জন্যে অনেক পোক্ত হতে হবে। এখন জাতীয় দলে ঢোকার থেকে আরও এক বছর পর ঢুকলে আমরা পাকা হতে পারব।’
লিটন দাস, মোসাদ্দেক, মুস্তাফিজুরদের অধিনায়ক ছিলেন, পরবর্তীতে শান্ত, জাকির, শাওনদের অধিনায়ক হয়েছেন। টানা ৩ বছর খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে, লম্বা সময়ের অধিনায়ক তিনি। চলমান অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শেষে এই পরিচয় খুলে ফেলতে হচ্ছে মেহেদী হাসান মিরাজকে। তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে মিরাজকেÑ ‘একটু সময় লাগবে। তিন বছর একসঙ্গে ছিলাম ১৯ দলে। তিন বছর ধরে অনেক কষ্ট করেছি, তাই খারাপ লাগবে। যখন বাড়ি যাব, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিব, পরিবারের সঙ্গে থাকব তখন খারাপ লাগবে।’
স্কোর কার্ড
অ-১৯ বিশ্বকাপ, ২য় সেমিফাইনাল
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, মিরপুর
টস : বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল
বাংলাদেশ অ-১৯ ইনিংস রান বল ৪ ৬
পিনাক ক পল ব হোল্ডার ০ ১০ ০ ০
সাইফ ক গুলি ব জোসেফ ১০ ১৬ ১ ০
জয়রাজ বোল্ড স্প্রিংগার ৩৫ ৫৪ ৫ ০
শান্ত ক হেৎমাইর ব জন ১১ ২৪ ১ ০
জাকির বোল্ড হোল্ডার ২৪ ৪৪ ২ ০
মিরাজ ক ফ্রিউ ব পল ৬০ ৭৪ ৭ ০
সাইফউদ্দিন বোল্ড পল ৩৬ ৫৫ ৩ ০
সাঈদ বোল্ড পল ৩ ৬ ০ ০
মোসাব্বেক বোল্ড স্প্রিংগার ১৪ ১২ ১ ০
রানা অপরাজিত ১০ ৭ ০ ১
শাওন রানআউট ১ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ৬, ও ১৩, নো ৩) ২২
মোট (অলআউট, ৫০ ওভার) ২২৬
উইকেট পতন : ১-১০ (নিপাক), ২-২৭ (সাইফ), ৩-৫৮ (শান্ত), ৪-৮৮ (জয়রাজ), ৫-১১৩ (জাকির), ৬-১৯৮ (মিরাজ), ৭-১৯৮ (সাইফউদ্দিন), ৮-২০৫ (সাঈদ), ৯-২১৭ (মোসাব্বেক), ১০-২২৬ (শাওন)
বোলিং : জোসেফ ৭-১-১৩-১, হোল্ডার ১০-১-৩৬-২, জন ৮-০-২৯-১, স্প্রিংগার ১০-০-৩৬-২, গুলি ২-০-১৩-০, পোপ ৬-০-৩৫-০, ফ্রিউ ৪-০-১৮-০, পল ৩-০-২৩-৩।
উইন্ডিজ অ-১৯ ইনিংস রান বল ৪ ৬
পোপ বোল্ড মিরাজ ৩৮ ২৫ ৫ ২
ইমলাখ এলবি ব মিরাজ ১৪ ১২ ১ ০
মেৎমাইর ক সাইফ ব সাইফউদ্দিন ৬০ ৫৯ ১ ০
কার্টি বোল্ড শাওন ২২ ৪৩ ২ ০
স্প্রিংগার অপরাজিত ৬২ ৮৮ ৫ ১
গুলি এলবি ব শাওন ৯ ৩৩ ০ ০
পল বোল্ড শাওন ৪ ৩ ১ ০
ফ্রিউ ক জাকির ব সাইফউদ্দিন ১২ ২১ ০ ০
জন অপরাজিত ২ ৯ ০ ০
অতিরিক্ত (ও ৬, নো ১) ৭
মোট (৭ উইকেট, ৪৮.৪ ওভার) ২৩০
উইকেট পতন : ১-৪৪ (ইমলাখ), ২-৫৬ (পোপ), ৩-১১৮ (কার্টি), ৪-১৪৭ (হেৎমাইর), ৫-১৭৭ (গুলি), ৬-১৮১ (পল), ৭-২১৭ (ফ্রিউ)
বোলিং : মিরাজ ১০-০-৫৭-২, রানা ৬-১-২৮-০, সাইফউদ্দিন ৯.৪-০-৪৬-২, শাওন ১০-০-৩৭-৩, মোসাব্বেক ১০-২-৩১-০, সাঈদ ২-০-২১-০, শান্ত ১-০-১০-০
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ অ-১৯ ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : শামার স্প্রিংগার (উইন্ডিজ)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।