Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতবস্ত্র বিতরণ করে অসহায়দের পাশে দাঁড়ান : খুৎবা-পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

শীতের আগমনী বার্তা টের পাচ্ছি আমরা। সামনে শীতের ভরা মৌসুমে প্রচন্ড শৈত্য প্রবাহের আশঙ্কা থাকায় শীত কেন্দ্রিক দুর্ভোগ আরো বাড়বে। এমতাবস্থায় সমাজের বিত্তবান ও মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব হচ্ছে শীতবস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো। এটা রাসূল (সা.) আদর্শ। বস্ত্রদানের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে জুমার জামাতে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এহসানুল হক জিলানী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, মানব জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শরিয়তের পরিভাষায় তাকওয়া হলো, একমাত্র আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। যার মধ্যে তাকওয়া থাকে সে পার্থিব জীবনের লোভে কোনো খারাপ কাজ করে না এবং পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও মঙ্গলের কাজে সব সময় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নিজেকে শিরক, কবিরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজকর্ম-কথাবার্তা থেকে বিরত রাখে তাকে মুত্তাকি বলা হয়। একজন মুমিনের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সফলতার মূল ভিত্তি হচ্ছে তাকওয়া।

মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং খাঁটি মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’। (সূরা আলে-ইমরান : ১০২)। আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর মনে রেখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গে আছেন’। (সূরা বাক্বারাহ : ১৯৪)। তাকওয়া আল্লাহর নৈকট্য ও ভালোবাসা লাভ করার উপায়। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘য়ালা মুত্তাকিদের ভালোবাসেন’ (সূরা তাওবাহ : ৪)।

আল্লাহ তা‘আলা অপর আয়াতে ইরশাদ করেন, মুত্তাকিরা থাকবে নিরাপদ স্থানে। (সূরা দুখান : ৫১) মুত্তাকিরা আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘আলার বাণী- ‘তোমাদের মাঝে সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি’। (সূরা হুজুরাত : ১৩)। তাকওয়া শুধু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয় না, বরং তা জান্নাতে প্রবেশ করতেও সাহায্য করে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এসব পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে একজন প্রকৃত মুমিন মুত্তাকি হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।
ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, বর্তমানে শীতের আগমনী বার্তা টের পাচ্ছি আমরা। হু হু করে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। শীত মৌসুমে সমাজের দিনমজুর, ছিন্নমূল এবং বাস্তুহারা জনগোষ্ঠী তীব্র শীতে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করেন। সামনে শীতের ভরা মৌসুমে প্রচন্ড শৈত্য প্রবাহের আশঙ্কা থাকায় শীত কেন্দ্রিক দুর্ভোগ আরো বাড়বে। এমতাবস্থায় সমাজের বিত্তবান ও মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব হচ্ছে শীতবস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো। এটা রাসূল (সা.) আদর্শ।

বস্ত্রদানের ফযীলত সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো তৃষ্ণার্ত মুসলমানকে পানি পান করালে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানীয় পান করাবেন’। (সুনানে আবু দাউদ)।

খতিব আরো বলেন, ইসলাম মানবীয় গুণাবলীর ক্ষেত্রে পরোপকার ও জনকল্যাণমূলক কাজকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ আখ্যা দিয়ে এর প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ‘সূরা কসাস’-এর ৭৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, তোমরা মানুষের প্রতি তেমন অনুগ্রহ কর (সাদক্বাহ বা যে কোন উপায়ে) যেমন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন আমীন।
দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম গতকাল জুমার খুৎবার বয়ান বলেন, এক সময়ে মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় ভালো মনে করে মূর্তি পূজার মত জঘন্যতম শিরক গুনাহ অবলীলায় করতে থাকে। আমাদের সমাজে অনেক ভাই ইবাদত মনে করে বিদ‘আতের মত জঘন্যতম কবিরা গুনাহ অবলীলায় করছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শরিক করাকে ক্ষমা করবেন না। এছাড়া সবকিছু, যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং কেউ আল্লাহর সাথে শরিক করলে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়। (সূরা নিসা : ১১৬) কেউ আল্লাহর সঙ্গে শরিক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন, এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। ( সূরা মায়েদা, আয়াত : ৭২)।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, মানব জীবনে পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিশীম। পরীক্ষার মাঝেই উন্নতি অবনতি নিহিত। পবিত্র কোরআনুল কারীমে বহু স্থানে পরীক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পদনষ্ট, প্রাণহানী ও শষ্যের ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে পরীক্ষা করবো। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫ )। অন্য আয়াতে আরো বলেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং ভেবে দেখো পরজীবনের জন্য কী সঞ্চয় করেছো। ( সূরা : হাশর, আয়াত : ১৮)।

খতিব বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরা ইহকালই মানুষের জন্য পরীক্ষার সময়। আমাদের প্রত্যেককে নেক আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে আল্লাহর বিধান পালনে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুসরণে জীবন গঠন কার প্রতি সতেষ্ট হতে হবে। আল্লাহ সবাইকে দুনিয়া ও আখিরাতের পরীক্ষায় সফল হওয়ার তৌফিক দান করেন। আমিন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুৎবা

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ