নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী, চট্টগ্রাম থেকে : আজ দু’অধিনায়ক দু’টি মাইলস্টোনের সামনে দাঁড়িয়ে। টসে’র সঙ্গে সঙ্গে অ্যালেক্স স্টুয়ার্টের ম্যাচ সংখ্যাকে ছাড়িয়ে ইংল্যান্ডের সর্বাধিকসংখ্যক টেস্ট খেলার রেকর্ডটা (১৩৪ ম্যাচ) হয়ে যাবে অ্যালিস্টার কুকের। টসে নেমেই প্রথম বাংলাদেশী টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে কোয়ার্টার সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ফেলবেন মুশফিকুর রহিম। এমন একটি ম্যাচে লম্বা প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে বাংলাদেশ দলের। লম্বা বিরতি দিয়ে দিয়ে টেস্টে প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের জন্য নুতন কিছুই নয়। ২০০৬’র এপ্রিলের পর ১৩ মাস, ২০১০’র জুনের পর আবারো সেই ১৩ মাস, ২০১১’র ডিসেম্বরের পর ১১ মাস, এবার ২০১৫’র জুলাইয়ের পর ১৫ মাস প্রতীক্ষা শেষে টেস্টে প্রত্যাবর্তন করছে বাংলাদেশ! ওয়ানডে ভার্সনে ১০ মাস নির্বাসনের পর টেস্ট প্রত্যাবর্তনে প্রতীক্ষা ১৫ মাস!
ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচে পর্যন্ত খেলার বাইরে থাকতে হয় সাকিব, মুশফিকুর, তামীম, মাহামুদুল্লাহদের। সেখানে এতো লম্বা বিরতিতে টেস্টে প্রত্যাবর্তন মুশফিকুরদের জন্য একটু বড় চ্যালেঞ্জই বটে। টেস্ট অধিনায়ক বলে এতো লম্বা বিরতিতে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে তাই নিজেকে পুরনো পরিচয়ের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে অপরিচিতই মনে হলো মুশফিকুরকে। দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট প্রত্যাবর্তনকে কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। তারপরও সেই চ্যালেঞ্জটাই নিচ্ছেন মুশফিকÑ ‘১৫ মাস আমরা খেলি না, এখানে আমাদের দোষও কিন্তু নেই। এই ফরমেটের খেলা ছিল না বলে খেলিনি। অবশ্যই এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে গত দেড় বছর আমরা যেভাবে টানা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলেছি, সেটাও কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ এর আগে আমরা এতো ম্যাচ টানা খেলিনি। তাই অসম্ভব কিছু মনে হচ্ছে না। কারণ মানসিক ও শারীরিকভাবে গত ১০-১১ বছরে যা করেছি, তার চেয়ে বেশি করতে হবে। চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য আমাদের সিনিয়র ক্রিকেটাররা প্রস্তুত, জুনিয়র যারা স্কোয়াডে আছে, সুযোগ পেলে তারাও নিজেদের উজাড় করে দেয়ার জন্য প্রস্তুত। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছি। চেষ্টা করব পাঁচটা দিন সেশন বাই সেশন ধারাবাহিক ক্রিকেট যেন খেলতে পারি, সে চেষ্টাই করব। মানসিকভাবে শক্ত থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ। আশা করি সেটির প্রতিফলন মাঠে দেখতে পাবেন আপনারা।’ চট্টগ্রামে টেস্ট প্রত্যার্তন বলেই দারুণ কিছুর স্বপ্ন দেখছেন মুশফিকুর। ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সর্বশেষ ৪ টেস্টে হারের অতীত নেই। ২০১৫ সালে দু’দুটি সিরিজ ড্র’, দ.আফ্রিকাকে এই প্রথম অল আউট করার অতীত থেকেও পাচ্ছেন মুশফিকুর রহিম প্রেরণাÑ ‘টেস্টেও কিন্তু আমরা গত বছর খুব ভালো খেলেছি। গত ১৪-১৫ বছরের চেয়ে অনেক ভালো পারফর্ম করেছি। দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলকে আমরা অলরাউট করেছি, লিড নিয়েছি।’
একে তো ফরমেটের নাম টেস্টÑযে ভার্সনের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অতীত ৮টি লড়াইয়ে সব ক’টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। হারগুলোর ব্যবধানও যথেস্ট বড়, তিনটি ইনিংস ব্যবধানে। রানের ব্যবধানে হার ২টিও বড় ব্যবধানে (৩২৯ ও ১৮১), অন্য তিনটিতে উইকেটের ব্যবধানে, যথাক্রমে ৯,৮ও৭। সর্বশেষ ৩টি টেস্ট সিরিজের ২টি জয়, ১টি ড্র। গত ১৫ মাসে যেখানে বাংলাদেশ একটি টেস্টও খেলেনি, সেখানে এই সময়ে ১৬টি টেস্ট খেলেছে ইংল্যান্ড দল। টেস্ট র্যাঙ্কিয়ে ৪ এ থাকা এমন একটি দলের বর্তমান স্কোয়াডের ম্যাচ সংখ্যার সমষ্টি যেখানে ৪৬৩টি, সেখানে মুশফিকুরের দলের সবার ম্যাচের যোগফল ২৪৫। ১৫ মাস পর টেস্ট প্রত্যাবর্তনে ইংল্যান্ডকে তাই ফেভারিট বলতে দ্বিধা নেই বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমেরÑ ‘ইংল্যান্ড দল গত কয়েক বছর দেশের মাটিতে এবং বাইরে যেভাবে খেলছে, ওরা টেস্ট সিরিজে পরিষ্কারভাবেই ফেভারিট।’ অভিজ্ঞতার বিচারে এই দলটি যে তুলনামুলক এগিয়ে, তা মনে করছেন স্বয়ং ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকওÑ ‘যেহেতু বাংলাদেশ যথেষ্ট ম্যাচ খেলেনি গত এক বছরে, তাই আমরা এডভানটেজ পাব। আমাদের দলে বেশ ক’জন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন, নতুন ক’জন আছে। টেস্ট জাতি বলে ইংল্যান্ড বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলছে। যা আমাদেরকে সাহায্য করছে।’
ওয়ানডে সিরিজে সেরা ৪ ক্রিকেটারকে রেখে আসা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ পূর্ব আলোচনায় ফেভারিটের স্টিকারটা ছিল বাংলাদেশ দলের। সর্বশেষ ২ বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য জয়ে ফেভারিট স্টিকার লাগিয়েও হয়নি কাজ। বরং তারুণ্য নির্ভর ইংল্যান্ড দলের কাছে ২-১ এ হেরে গেছে বাংলাদেশ দল। সে কারনেই ফেভারিট তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অবতীর্ণ হয়েও ইংল্যান্ডকে ধাক্কা দিতে চান মুশফিকুরÑ‘ওয়ানডে সিরিজেও আমরা ফেভারিট ছিলাম, কিন্তু হেরেছি। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে সেশন বাই সেশন কে কতটা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে পারে। আমাদের মূল লক্ষ্য এটাই।’
তবে টেস্টে তুলনামুলক কম খেলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতিটা চোখে পড়ার মতো বলেই ইংল্যান্ড অধিনায়ক সাবধানীÑ‘মনে হচ্ছে তারা কিছুটা আক্রমণাত্মক হবে। ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশকে দারুণ ইমপ্রুভ দল দেখেছি। গত তিন চার বছর ধরে তারা দারুণ উন্নতি করছে। তাদের মেধা আছে, যা আগে কখনো দেখার প্রয়োজন পড়েনি আমাদের। তাই এটা আমাদের জন্য দারুণ এক টেস্ট হবে।’
প্রত্যাবর্তন টেস্টে বাংলাদেশ দল উপহার পাচ্ছে টার্নিং উইকেট। দলে স্পিনারের সমাবেশ বলেই টিম ম্যানেজমেন্টের এই দাবি মিটিয়েছেন কিউরেট জাহিদ রেজা বাবু। সাকিব, তাইজুল, শুভাগত, মিরাজ, রুম্মান, রিয়াদ, মুমিনুলÑ ১৪ জনের দলে সাতজন স্পিনার! এমন স্পিন বৈচিত্র আছে যাদের, সেই স্পিন আক্রমন দিয়েই প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট তুলে নেয়ার ছক আকবেন, এটাই যে স্বাভাবিক। মুশফিকুর সে স্বপ্নই তাই দেখছেনÑ ‘আমাদের মূল শক্তি স্পিন, উইকেট যদি আমাদের স্পিনারদের সাহায্য করে, আমাদের যে শক্তি আছে, তাতে ২০টি উইকেট নিতে পারে। পাশাপাশি যে সুযোগগুলো আমাদের আসবে, সেসব নিতে হবে। পারলে ভালো কিছুই হবে।’ ইনফর্ম ৫ সিনিয়রের দিকেই তাকিয়ে মুশফিকুর রহিমÑ‘বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে ৫-৬ জন ক্রিকেটার তিন ফরমেটে নিয়মিত খেলেন। ইমরুল, সাকিব, তামিম, রিয়দ ভাই, মুমিনুল, সবাই ফর্মে আছেন। অবশ্যই তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করি ওরা ভালো খেলবে। টপ ফোরে কেউ যদি বড় ইনিংস খেলতে পারে, প্রথম ইনিংসে যদি আমরা তিনশর বেশি রান করতে পারি, এটা এটা আমাদের জন্য হবে বিগ প্লাস।’
১-০তে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে বাংলাদেশ দলের র্যাঙ্কিং ৫৭ থেকে বেড়ে যাবে ৭২এ,২-০ তে জিতলে ৭৫ পয়েন্ট। ওয়েস্ট ইন্নিডজকে টপকে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে ৮ এ ওঠার লক্ষ্যটাও যে রাখতে হচ্ছে। তবে ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারানোর চেয়েও টেস্টে ধারাবাহিক দলে পরিণত হতে চান মুশফিকুরÑ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে গেলেই আমরা বিশ্বের সেরা টেস্ট দল হয়ে গেলাম,তা ঠিক নয়। আমাদের মূল ফোকাস থাকবে ধারাবাহিক খেলা। গত ২ বছরে আমরা ওয়ানডেতে অনেক ধারাবাহিক ছিলাম। তার মানে এই নয় যে সব ম্যাচই জিতেছি। কিছু হেরেছিও। তবে গ্রাফটা উন্নতির দিকে ছিল। টেস্টেও যেন এরকম একটা দল হতে পারি।’
প্রত্যাবর্তন টেস্টে সাব্বির রহমান রুম্মান এবং মেহেদী হাসান মিরাজের অভিষেক হচ্ছে। অভিষেক হতে পারে কামরুল ইসলাম রাব্বীরও। ইংল্যান্ড টেস্ট দলেও অভিষেকের অপেক্ষায় এক তরুণ। ১৯ বছর বয়সী হাসিব হামিদ, না ২২ বছর বয়সী বেন ডাকেটÑদু’জনের মধ্যে একজন অভিষেকে অ্যালিস্টার কুকের ওপেনিং পার্টনার হবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।