মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ডয়চে ব্যাংক আড়াইশ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। তবে দেনাদার-পাওনাদারের সম্পর্কটা খুব সহজ নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বপুরুষরা এসেছিলেন ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে কালস্টাট নামের একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে। গ্রামটি আঙুরের ক্ষেত আর ওয়াইন তৈরির জন্য খ্যাত। ধনকুবের ট্রাম্পের যখন ঋণের দরকার হয়, তখন সেই ঋণও আসে ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে : ট্রাম্প তার প্রয়োজনীয় অর্থের একটা বড় অংশ পান জার্মানির বৃহত্তম ব্যাংক ডয়চে ব্যাংকের কাছ থেকে, ঋণ হিসেবে। ডয়চে ব্যাংকের সঙ্গে ট্রাম্পের লেনদেন শুরু হয় ১৯৯৫ সালে, যখন ট্রাম্প ব্যাংক অফ ম্যানহ্যাটান ট্রাস্ট বিল্ডিং নামে পরিচিত একটি বহুতল ভবন কেনেন। ১৯৩০ সালে নির্মিত এই সুদৃশ্য স্কাইস্ক্র্যাপারটি এককালে বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন ছিল। ডয়চে ব্যাংকের কাছ থেকে ১২৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ট্রাম্প বাড়িটি কিনতে সমর্থ হন। সে-যাবৎ দু’পক্ষের মধ্যে আরো অনেক লেনদেন হয়েছে। ২০০৩ সালে ডয়চে ব্যাংক ট্রাম্প হোটেলস অ্যান্ড ক্যাসিনো রিসর্টস-কে মোট ৪৬৮ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেয় তথাকথিত ফিক্সড ইনকাম বিনিয়োগ হিসেবে অর্থাৎ দেনদারকে বছরের বাঁধা তারিখে বাঁধা পরিমাণ অর্থ বা সুদ জমা করতে হবে। জার্সি শোর-এ তার ক্যাসিনোগুলো চালানোর জন্য ট্রাম্পের এই ঋণের প্রয়োজন ছিল। ব্যবসা পরে লাটে ওঠে যখন কোম্পানির ফ্ল্যাগশিপ তাজমহল ক্যাসিনো পর্যন্ত লাভের বদলে লোকসান করতে শুরু করে। ২০০৫ সালে ডয়চে ব্যাংক শিকাগোর ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড টাওয়ারের জন্য ট্রাম্পকে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়। ডয়চে ব্যাংকের নজর ছিল ১২ মিলিয়ন ডলার ফি-র দিকে। এই শিকাগো লেনদেন থেকেই ট্রাম্প আর ডয়চে ব্যাংকের মধ্যে বিরোধের সূচনা। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, ট্রাম্প এই শিকাগো ঋণের ওপর ২০০৮ সালে যে ৩৩৪ মিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা ছিল তা দিতে ব্যর্থ হন তার কারণ নাকি মার্কিন বাড়ি বন্ধকি বাজারে সংকট। টাকা ফেরৎ দেয়া তো দূরের কথা, ট্রাম্প ডয়চে ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করে বসেন এই বলে যে, আর্থিক সংকটের কারণে ট্রাম্প পেমেন্ট করতে অসমর্থ হন, সেটাকে অ্যাক্ট অফ গড বা ঈশ্বরের মর্জি বলে গণ্য করা উচিৎ ও ব্যাংকের উচিৎ, ট্রাম্পকে সময়ে পেমেন্ট করার দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেয়া। এমনকি ট্রাম্প ডয়চে ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরো তিন বিলিয়ন ডলারের মামলা ঠোকেন এই বলে যে, বাড়ি বন্ধকি বাজারের সংকটের সময় ডয়চে ব্যাংক যেভাবে ঋণ দিয়েছিল, তা থেকেই ট্রাম্পের যাবতীয় সমস্যার সৃষ্টি। পরিবর্তে ডয়চে ব্যাংকও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৪০ মিলিয়ন ডলারের মামলা করে এই বলে যে, ট্রাম্প এই টাকার জন্য ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দিয়েছিলেন।
দুপক্ষই পরে আপোষ করেছে, কিন্তু সম্পর্কটা আর পুরোপুরি ঠিক হয়নি। অবশ্য অনুরাগ-বিরাগ এক কথা, আর প্রাইভেট ক্লায়েন্ট সার্ভিস আরেক কথা। তাই শিগগিরই ডয়চে ব্যাংক ট্রাম্পকে মিয়ামিতে তাঁর ডোরাল গল্ফ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা-র জন্য ১২৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়। ট্রাম্পের সঙ্গে আরো বড় একটি লেনদেন হয় ২০১২ সালে, যখন ডয়চে ব্যাংক ট্রাম্পকে ১২৯০, অ্যাভিনিউ অফ দ্য অ্যামেরিকাস ঠিকানায় একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ৯৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়। আপাতত ওয়াশিংটন ডিসি-র ওল্ড পোস্ট অফিসের ডেভেলপমেন্টের জন্য ট্রাম্পকে অর্থ জোগাচ্ছে ডয়চে ব্যাংক। সব মিলিয়ে ট্রাম্পকে ডয়চে ব্যাংকের দেয়া ঋণের পরিমাণ আড়াই বিলিয়ন ডলার তার মধ্যে আবার এক বিলিয়ন ডলার ঋণের গ্যারান্টি ধরা নেই। ডয়চে ব্যাংক যে শুধু ট্রাম্পের বৃহত্তম ঋণদাতা, তা-ই নয়, বলতে কি, ডয়চে ব্যাংক ট্রাম্পের একমাত্র ঋণদাতা। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিবরণ অনুযায়ী সিটিগ্রুপ, জেপি মরগ্যান চেজ, মরগ্যান স্ট্যানলি প্রমুখ মার্কিন ব্যাংক অনেকদিন আগেই ট্রাম্পের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করেছে, কেননা ট্রাম্পের ব্যর্থতার খতিয়ান তাঁর সাফল্যের খতিয়ানের মতোই সুপরিচিত। ডয়চেভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।