Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

যশোর শিক্ষাবোর্ড চেক জালিয়াতির ৭ কোটি টাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

যশোর ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২১, ৪:২৪ পিএম

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে চেক জালিয়াতির ঘটণায় অবশেষে একমাস ৭ দিন পর রিপোর্ট জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। সোমবার (১৫ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ে রিপোর্টটি পাঠান হয়েছে। গত রবিবার বিকালে এই ঘটনায় অভিযুক্ত বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিবের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়া হয়।

রিপোর্টে বলা হয়েছে শিক্ষাবোর্ডের ৭ কোটি টাকা জালিয়াতি করে হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এর সাথে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, সচিব ও জালিয়াতি চক্রের প্রধান ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম বাবু ও শেখহাটী জামরুলতলা এলাকার শাহীলাল স্টোরের মালিক মৃত সিদ্দিক আলী বিশ্বাসের ছেলে আশরাফুল আলম। তবে মিডিয়ায় মুখ খুলছেন না তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
গত ৭ অক্টোবর যশোর শিক্ষাবোর্ডে প্রথম জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এরপর একে একে বেরিয়ে আসে বোর্ড থেকে ৩৬টি চেকের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ৭ কোটি টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি নিয়ে মামলা করলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। স্বপদে থেকে তারা মামলা ও তদন্ত প্রভাবিত করেছেন বলে বোর্ডের অনেকে দাবি করেছেন। শুধু তাই নয়, অডিট ও হিসাব শাখাও পুরো বন্ধ করে দিয়েছেন।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ও তদন্ত কমিটির প্রধান কেএম রব্বানি জানান, আমরা জালিয়াতির প্রমান পেয়েছি। গত রবিবারে ৫৮ পৃষ্ঠার রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে শিক্ষাবোর্ডের সচিবের কাছে। ৩৬টি চেকের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ৭ কোটি টাকা। এই জালিয়াতির সাথে বোর্ডের কর্মকর্ত-কর্মচারিরা জড়িত ছিলেন। তাদের সহযোগিতায় টাকা বের করে নেয়া হয়েছে। তবে এর বাইরে তিনি কথা বলতে চাননি। তবে কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বোর্ডের চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় কর্মচারি আবদুস সালাম ও ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু ও শেখহাটী জামরুলতলা এলাকার শাহীলাল স্টোরের মালিক আশরাফুল আলম এই টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নিয়েছেন।
১৮ অক্টোবর দুদক’র সমন্বিত যশোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এএম এইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আবদুস সালাম, প্রতারক প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম বাবু ও শেখহাটী জামরুলতলা এলাকার শাহীলাল স্টোরের মালিক মৃত সিদ্দিক আলী বিশ্বাসের ছেলে আশরাফুল আলমের নামে মামলা করেন।
কিন্তু এতো বড় দুর্নীতির অভিযোগের পরও বহাল তবিয়বে রয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান, সচিবসহ জালিয়াত চক্রের হোতারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
অন্যদিকে, বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপকর্ম উল্লেখ করে তাকে অপসারণে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট যশোর-২ আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অ.) নাসির উদ্দিন ও যশোর-৬ আসনের এমপি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু অভিযোগ করেন, দুই সংসদ সদস্য ডিও লেটার দিলেও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন তিনি দুর্নীতির মামলার আসামি হয়েও স্বপদে রয়েছেন। তদন্ত কমিটির সদস্য অভিযুক্তদের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। এই রিপোর্ট আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এদিকে দুদক মামলা করলেও এখনো তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হয়নি। ফলে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা কথা। তারা আশংকা করছেন বোর্ড চেয়ারম্যান তদবির করে আটকে দিয়েছেন তদন্ত কার্যক্রম।
দুর্নীতি দমন কমিশন যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, বোর্ডের দুর্নীতির মামলার ফাইল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পৌছে গেছে। সেখান থেকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। আশা করছি চলতি মাসের যে কোন দিন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তদন্ত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ