Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কপ২৬ : সহযোগিতা বৃদ্ধিতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:১২ এএম

চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র আগামী দশকজুড়ে জলবায়ু সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে এমন আচমকা ঘোষণা আসে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করা এই দুই দেশ এবারে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে।

তারা বলেছে যে উভয় পক্ষই ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সীমাবদ্ধ থাকার লক্ষ্য অর্জনে ‘একসাথে কাজ করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিশ্রæতিবদ্ধ’। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো ব্যবধানগুলো ধাপে ধাপে কমিয়ে আনতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছে তারা। এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবাদী আন্দোলনকর্মী ও রাজনীতিবিদরা। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন একে বেশ জরুরি ও উৎসহজনক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তবে গ্রিনপিস বলছে, দুই দেশের আরও বেশি বেশি প্রতিশ্রুতি দেয়া উচিত ছিল। এদিকে, বিজ্ঞানীরা বলছেন যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত করা মানবজাতিকে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এড়াতে সাহায্য করবে। শিল্প যুগের আগের তাপমাত্রার সাথে তুলনা করে এই মানদন্ড ঠিক করা হয়েছে। ২০১৫ সালে প্যারিসে বিশ্ব নেতারা কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাসের মাধ্যমে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রী থেকে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। চীনের শীর্ষ জলবায়ু আলোচক শি জেনহুয়া সাংবাদিকদের বলেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে ‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যতোটা না মতপার্থক্য আছে, তার চাইতে বেশি চুক্তি রয়েছে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সামনের সপ্তাহে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই দুই দেশকে বিভিন্ন বিষয়ে বৈশ্বিক প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে দেখা হয়। বুধবারের এই বিরল যৌথ ঘোষণায়, মিথেন নির্গমন, ক্লিন এনার্জিতে রূপান্তর এবং ডি-কার্বনাইজেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়েছেন তারা। কিন্তু চীন এই সপ্তাহের শুরুতে ক্ষতিকারক গ্রিনহাউজ গ্যাস মিথেনের নির্গমন কমিয়ে আনার বিষয়ে চুক্তি করতে অস্বীকার করে। ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে আরও প্রায় ১০০টি দেশ। চীন এর পরিবর্তে মিথেনের নির্গমন নিয়ন্ত্রণে একটি ‘জাতীয় পরিকল্পনা’ তৈরি করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। শি জেনহুয়ার পরে বক্তব্য রাখেন মার্কিন জলবায়ু দূত জন কেরি। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে নানা বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, তবে জলবায়ু ইস্যুতে, সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করাই একমাত্র উপায়। প্রতিটি পদক্ষেপই এখন গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের সামনে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

মার্কিন-চীন ঘোষণার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, প্রেশার গ্রæপ ডবিøউ ডবিøউ এফ-এর মার্কিন জলবায়ু নীতি অ্যাকশনের পরিচালক জেনেভিভ মেরিকেল। তিনি বলেছেন, ‘কপ২৬-সম্মেলনের খুব গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে এই ঘোষণাটি এসেছে এবং এই ঘোষণা নতুন আশা দেয় যে, বিশ্বের দুই শক্তির থেকে যথাযথ সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়া যাবে। যার ফলে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সীমাবদ্ধ রাখতে পারবো। তবে আগামী নয় বছরের মধ্যে যদি দুটি দেশ প্রয়োজনীয় হারে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করতে পারে তবে এখন থেকেই কী করা প্রয়োজন সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। কেননা তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে গেলে পুরো অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়বে।’ গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জেনিফার মরগানও এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন, তবে সতর্ক করেছেন যে উভয় দেশকে জলবায়ু লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আরও বেশি বেশি প্রতিশ্রæতি দিতে হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এই ঘোষণাটি ‘সঠিক দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু নীতির প্রধান ফ্রান্স টিমারম্যানস বলেছেন যে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করা দেখা ‘সত্যিই উৎসাহজনক’। ‘এতে এটিও প্রমাণ হয় যে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন দুই দেশই জানে এই বিষয়টির গুরুত্ব অন্যান্য বিষয়গুলিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং এটি কপ২৬এ অবশ্যই একটি চুক্তিতে আসতে সাহায্য করবে’, তিনি যোগ করেন।

এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানে এশিয়া সোসাইটির সভাপতি কেভিন রুড, বিবিসিকে বলেছেন যে চুক্তিটি ‘কোন গেম চেঞ্জার নয়, তবে এটি একটি বড় পদক্ষেপ।’ এশিয়া সোসাইটি, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তি নিয়ে কাজ করে। চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভ‚-রাজনীতির অবস্থা... ভয়াবহ, তাই এই মুহ‚র্তে ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে এই জলবায়ু সহযোগিতা চুক্তিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলা যায়। চীন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণকারী দেশ, তারপরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেপ্টেম্বরে চীনের প্রেসিডেন্ট জিনপিং ঘোষণা করেছিলেন যে, চীন ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতার দিকে লক্ষ্য রাখবে, ২০৩০ সালের আগে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরন শ‚ন্যতে নামিয়ে আনা।

বুধবার কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে অন্যান্য অগ্রগতি: কপ২৬ চুক্তির একটি চ‚ড়ান্ত খসড়া ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে দেশগুলোকে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ কার্বন-নিঃসরন কমিয়ে আনার লক্ষ্যকে শক্তিশালী করার আহŸান জানানো হয়েছে। তবে দুর্যোগ প্রবণ দেশগুলোকে সহায়তার ক্ষেত্রে প্রতিবেদনটি যথেষ্ট উচ্চাভিলাষী না হওয়ার জন্য অনেকে এর সমালোচনা করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অন্যান্য জাতীয় নেতাদের একটি চ‚ড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য তাদের আলোচকদের আরও বেশি চাপ দেওয়ার আহŸান জানিয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জোর দিয়ে বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার উচ্চাকাক্সক্ষা এখনো শেষ হয়নি। বুধবার কপ২৬ এর ফোকাস ছিল ভ্রমণ। বেশ কয়েকটি দেশ পেট্রোল এবং ডিজেলে চালিত গাড়িগুলি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে তবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং জার্মানি তাতে সই করেনি। তবে ফোর্ড এবং মার্সিডিজ সহ বেশ কয়েকটি প্রধান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ হয়েছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ