দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন পৃথিবী সৃষ্টির পর সৃষ্টিরসেরা ‘মানুষ’ সৃষ্টির প্রাক্কালে ফেরেশতাদের নিয়ে পরামর্শ সভা করে ইরশাদ করেন, ‘আর স্মরণ করুন যখন আপনার রব ফেরেশতাদের বললেন, নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি, তারা বলল আপনি কি যমীনে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত করবে? আর আমরা আপনার প্রশংসায় তাসবীহ্ পাঠ ও পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি, যা তোমরা জান না’। সূরাহ্ আল্ বাক্বারাহ্, আয়াত ৩০
আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে ইরশাদ করেন, ‘এবং তিনি আদমকে সকল বস্তুর নামসমূহ শিক্ষা দিলেন, অতঃপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। এরপর বললেন, তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা বলেছিল, আপনি পরম পবিত্র, আপনি আমাদের যা শিখিয়েছেন তা ছাড়া কোন কিছুর জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদের বলে দাও এসবের নাম। অতঃপর যখন তিনি সেগুলোর নাম তাদেরকে বলে দিলেন, তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের বলিনি, নিশ্চয়ই আমি আসমানসমূহ ও যমীনের যাবতীয় গায়েব জানি এবং যা তোমরা প্রকাশ কর ও যা গোপন কর তাও জানি। আর যখন আমি ফেরেশতাদের বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদাহ্ কর। তখন ইবলীস ব্যতীত তারা সকলে সিজদাহ্ করল। সে অগ্রাহ্য করল এবং অহংকার করল। আর সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। আর আমি বললাম, হে আদম তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান কর এবং তা হতে যা ইচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্যে আহার কর। আর এ গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না। তাহলে তোমরা অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। অতঃপর শয়তান তাদের সেখান থেকে বিচ্যুত করল এবং তারা যেখানে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল। আর আমি বললাম তোমরা নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু হবে এবং পৃথিবীতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রয়েছে। অতঃপর আদম তার রব হতে কিছু বাণী শিক্ষা লাভ করলেন। অতঃপর তিনি তার তাওবাহ্ ক্ববূল করলেন। নিশ্চয় তিনি তাওবাহ্ ক্ববূলকারী, অতীব দয়ালু। আমি বললাম, তোমরা সবাই এখান থেকে নীচে নেমে যাও। অতঃপর যখন আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট কোন হেদায়ত আসবে তখন যারা আমার হেদায়ত অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। আর যারা অবিশ^াস করবে এবং আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করবে তারাই জাহান্নামের অধিকারী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’। সূরাহ্ আল্ বাক্বারাহ্, আয়াত ৩০-৩৯
হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.)-এর দুনিয়ায় বসবাসের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে মানুষের জীবন-যাপনের সূচনা হয়। তাই আল্লাহ্ তা‘আলা মানব জাতির জীবন বিধান ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার জন্য হযরত আদম (আ.)-কে নুবুওয়াত দান করেন। তখন থেকে আল্লাহ্ তা‘আলা মানব জাতিকে ইসলামের দিকে হেদায়তের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূল (আ.) প্রেরণ করেন। তারা স্ব স্ব সময়কালে আল্লাহ্র নাযিলকৃত কিতাব ও সাহীফাহ্র আলোকে মানুষকে হেদায়তের মধ্য দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের অসাধারণ ত্যাগ তিতিক্ষা ও ভূমিকায় পর্যায়ক্রমে পৃথিবীতে মুসলিম সমাজ ও সভ্যতা গড়ে উঠে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার স্বজাতির ভাষাতেই পাঠিয়েছি যাতে তাদের নিকট স্পষ্টভাবে (আমার নির্দেশগুলো) বর্ণনা করতে পারে। অতঃপর আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে পথহারা করেছেন। আর যাকে ইচ্ছে সঠিকপথ দেখিয়েছেন, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। সূরাহ্ ইব্রাহীম, আয়াত ৪
তবে আল্লাহ্ কাউকে জোর করে গুমরাহ্ করেন না, বরং যে ব্যক্তি গুমরাহ্ পথ ভাল মনে করে, আল্লাহ্ তাকে সে পথে যেতে দেন।
আল্লাহ্ তা‘আলার শাশ^ত সুন্দর ও উত্তম পন্থা ‘ইসলাম’-এর নীতি আদর্শ উপস্থাপনের পরও অনেকে তা অগ্রাহ্য ও বিরোধিতা করে। আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘কাউকে যদি তার অসৎ কাজ সুশোভিত করে দেখানো হয়, অতঃপর সে ওটাকে উত্তম মনে করে, সে ব্যক্তি কি তার সমান, যে সৎ কাজ করে? আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছে সৎপথে পরিচালিত করেন। সুতরাং আপনি তাদের জন্য অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করবেন না। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ্ তা খুব ভালভাবেই জানেন’। সূরাহ্ ফাত্বির, আয়াত ৮
হযরত আদম (আ.) থেকে হযরত ‘ঈসা (আ.) পর্যন্ত অসংখ্য নবী ও রাসূল (আ.) স্ব স্ব সময়কালে তাঁদের প্রতি অবতীর্ণ কিতাব ও সাহীফাহ্র বিধিবিধান অনুযায়ী মানুষকে আল্লাহ্র দীন ‘ইসলাম’-এর দাওয়াত দেন। হেদায়তপ্রাপ্তরা মুসলমান হয়ে ইসলামের বিধান মতে জীবন-যাপন করেন। আর যারা হেদায়ত লাভে সমর্থ হয়নি, তারা কাফির ও মুশরিক থেকে যায়। অনেকে নবী ও রাসূল (আ.)-এর সাথে শুধু বিরোধিতা নয়, তাঁদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র, আক্রমণ, হত্যাচেষ্টা এবং ইসলাম গ্রহণকারীর অনেককে নির্যাতন-নিপীড়ন ও শহীদ করার মধ্য দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ অব্যাহত রাখে।
হযরত মূসা (আ.) তাঁর উম্মতদের বলেছিলেন, আমার পর তোমরা হযরত ‘ঈসা (আ.)-এর প্রতি ঈমান এনে তাঁর শরী‘আত অনুযায়ী চলবে। যারা তাঁর প্রতি ঈমান এনে পবিত্র ইন্যীল অনুযায়ী চলেছে তারা ছিলেন ইসলাম অনুসারী মুসলমান। যারা অমান্য করেছে তারা হল ইয়াহুদী। হযরত ‘ঈসা (আ.) তাঁর উম্মতদের বলেছেন, আমার পর সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ায় আবির্ভূত হবেন। তোমরা তাঁর শরী‘আত অনুযায়ী চলবে। হযরত ‘ঈসা (আ.)-এর পর হযরত মুহাম্মদ (দ.)-এর শুভাগমনের পূর্বপর্যন্ত নবী-রাসূল (আ.) বিহীন প্রায় ৬শ বছর সময়কালে যারা হযরত ‘ঈসা (আ.)-এর শরী‘আতের অনুসারী ছিলেন, তাদের দীন হল দীনে হানীফ। পরবর্তীতে যারা হযরত মুহাম্মদ (দ.)-এর শরী‘আত গ্রহণ করেছেন, তাদের দীন হল দীনে ইসলাম। যারা ইসলাম গ্রহণ করেনি তারা হল নাসারা বা খ্রিষ্টান। পবিত্র তাওরাত কিতাবকে বিকৃতকারী ইয়াহুদী এবং পবিত্র ইনযীল কিতাবকে বিকৃতকারী নাসারাদের পূর্বপুরুষরা এ দু নবী (আ.)-এর উম্মত ছিলেন। তাই তারা ইসলামের অনুসারী ছিলেন। তবে হযরত মূসা (আ.) ও হযরত ‘ঈসা (আ.)-এর উপদেশ অমান্যকারী ইয়াহুদী ও নাসারা এ দু জাতি ইসলাম অনুসারী বা মুসলমান নয়। (চলবে)
লেখক : ইসলামী সাহিত্যিক ও মানবাধিকার গবেষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।