Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিবেশ সচেতনতা, না কি সবই কথার কথা?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:০৪ পিএম

গ্লাসগোয় চলছে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন (কপ ২৬)। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৭০ সালের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ভারতের পরিবেশবিদরা বলছেন, এ সবই কথার কথা।

দিনকয়েক আগে অধিকাংশ মূলস্রোতের ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের হেডলাইন ছিল— ‘আবার ইতিহাস রচনা করলেন মোদি’। কারণ, গ্লাসগোয় জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি জানিয়ে দিয়েছেন, ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বনমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত হবে ভারত। সেই লক্ষ্যেই নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে শুরু করেছে সরকার। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাশিয়ার মতো দেশ ২০৬০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। অ্যামেরিকা ২০৫০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। সেখানে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ ২০৭০ সালের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করায় জলবায়ু সম্মেলনেও বেশ সাড়া পড়ে গেছে।

ভারতের মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যম উচ্ছ্বসিত। খুশি রাজনৈতিক পরিসরের একাংশ। অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার মধ্যে মোদির সাহস দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু পরিবেশবিদদের একাংশের বক্তব্য, বাস্তবের সঙ্গে এই ঘোষণার কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রবীণ সাংবাদিক এবং পরিবেশ আন্দোলনকর্মী মিলন দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘মোদির এই ঘোষণা অর্থহীন। ওই একই সম্মেলনে অরণ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভারত তাতে সই করেনি। এতেই স্পষ্ট, পরিবেশ নিয়ে মোদি এবং সার্বিকভাবে ভারত সরকারের অবস্থান কী!’’ বস্তুত, গ্লাসগো সম্মেলনে অরণ্য রক্ষার একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছিলেন, বিশ্বের ৮৫ শতাংশ দেশ, যেখানে জঙ্গল আছে, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত হয়েছে এবং চুক্তিপত্রে সই করেছে। ভারত সেই চুক্তিপত্রে সই করেনি। অথচ ভারতে বিপুল পরিমাণ জঙ্গল আছে।

ওই চুক্তি অনুযায়ী, দেশের অরণ্যসম্পদ ধ্বংস করা যাবে না। বরং অরণ্য যাতে বাড়ানো যায়, তার চেষ্টা করতে হবে। অরণ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভারতের যে আইন, তার সঙ্গে এই চুক্তি মেলে না। তথাকথিত নগরোন্নয়নের প্রয়োজনে ভারতে যথেচ্ছ অরণ্য ধ্বংস করা হয়েছে এবং হচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতেও জঙ্গল ধ্বংসের উদাহরণ আছে। যা নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে বিস্তর। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকার বলে, উন্নয়নের স্বার্থে একাজ করতেই হয়। ফলে জঙ্গলরক্ষার যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জলবায়ু সম্মেলনে হয়েছে, ভারত তার অংশ নয়।

গত পাঁচবছরে প্রায় প্রতিটি জলবায়ু সম্মেলনে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ডক্টর দীপায়ন দে। এবছর করোনার কারণে তিনি ভিসা পাননি। ডয়চে ভেলেকে দীপায়ন জানিয়েছেন, নেতাদের কথায় পরিবেশের কোনো উন্নতি হয় না। বস্তুত, এবছর গ্রেটা থুনবার্গের এই মন্তব্যটি কার্যত ভাইরাল হয়ে গেছে। দীপায়নের বক্তব্য, ‘২০৭০ এর যে লক্ষ্যমাত্রার কথা মোদি বলেছেন, তা ভাবের ঘরে চুরি। মোদিও তখন থাকবেন না, এই নেতারাও তখন থাকবেন না। ফলে মনগড়া কিছু বলে দিলে কারও কিছু যায় আসে না। মোদি যদি সত্যিই পরিবেশের বিষয়ে সচেতন হতেন এবং বাস্তবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভাবতেন, তাহলে তিনি ২০৩০ সালের যে লক্ষ্যমাত্রা আগেই স্থির হয়েছিল, সে বিষয়ে মন্তব্য করতেন। দূরের নয়, কাছের সময় ধরে ছোট ছোট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতেন।’ পরিবেশবিদদের অনেকেরই অভিযোগ, ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তই কার্যকর করা যায়নি। ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল তখন। বাস্তবে তার প্রায় কিছুই করা যায়নি।

পরিবেশবিদেরা যতই অভিযোগ করুন, প্রশানের বক্তব্য, উন্নয়নের কাজ বন্ধ করা সম্ভব নয়। শিল্পবিপ্লবের আমল থেকে উন্নত দেশগুলি যথেচ্ছ কার্বন ফুটপ্রিন্ট তৈরি করে শিল্প, কারখানা তৈরি করেছে। ভারত যখন সে রাস্তায় পা দিয়েছে, তখন পরিবেশ দেখালে মুশকিল। দুইয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করা দরকার। ভারত সে চেষ্টাই করছে। ইন্ডাস্ট্রি যেমন দরকার, তেমন তা পরিবেশের কথা মাথায় রেখে হচ্ছে কি না, তাও বোঝা দরকার। মোদি প্রশাসনের এক গুরুত্বপূ্র্ণ কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘সমালোচকরা সব বিষয় নিয়েই সমালোচনা করেন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বোঝা দরকার। নতুন নতুন শিল্প গড়তেই হবে। তাতে কার্বন ফুটপ্রিন্টও তৈরি হবে। প্রয়োজন একটি ভারসাম্য তৈরি করা।’’

এই ভারসাম্যের মাপকাঠি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘জলবায়ু সম্মেলন আসলে একটা প্রহসন। যারা সেখানে আলোচনা করেন, পরিবেশ নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। ভোটের স্বার্থে তারা নানা সিদ্ধান্তের কথা জানান। বাস্তবে তার কোনো প্রভাব পড়ে না।” সুভাষের বক্তব্য, উন্নয়নের কথা যখন বলা হয়, তখন আসলে আদানি, আম্বানিদের ভারতের কথা বলা হয়। পুঁজির কথা বলা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন টের পাওয়া যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মানুষ বেঁচেই থাকতে পারবে না। ফলে উন্নয়নের বুলি আউড়ে লাভ নেই।

দীপায়নও এ বিষয়ে একমত। তার বক্তব্য, এখন উন্নয়নের কথাও ভাবতে হবে পরিবেশকে মাথায় রেখে। সাস্টেনেবল উন্নয়নের পরিকল্পনা না করলে বিপদ অনিবার্য। সমস্যা হলো, ভারতে বিকল্প শক্তির যে সমস্ত প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, সেগুলিও আসলে পরিবেশবান্ধব নয়। সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ