পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইসলামে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই। যদি কেউ ইসলামের লেবাস লাগিয়ে ইসলামকে বদনাম করার জন্য সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তারা কখনো শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী হতে পারে না। কারণ ইসলামে ফিতনা-সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বিশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতা’য়ালা বলেন, ‘ফিতনা বা সন্ত্রাস হত্যার চেয়েও ভয়াবহ’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৯১)। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম আজ জুমার বয়ানে বলেন, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। ইসলামের আর্বিভাব হয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবকল্যাণ ও মানবতার জন্য। ইসলাম মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানানোর শিক্ষা দেয়। স্মরন রাখতে হবে এটি এমন এক সার্বজনীন ও শান্তিময় জীবনব্যবস্থা, যেখানে শুধু মানব সম্প্রদায়ই নয় বরং পশুপাখি ও প্রকৃতির অধিকারও সংরক্ষিত রয়েছে। অতুলনীয় চরিত্র মাধুর্য, অনুপম শিক্ষা ও আদর্শ, আমল ও আখলাকের শিক্ষাই ইসলাম প্রদান করে থাকে৷ইসলামে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই। যদি কেউ ইসলামের লেবাস লাগিয়ে ইসলামকে বদনাম করার জন্য সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তারা কখনো শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী হতে পারে না। বরং সে মুনাফিক এবং ইসলামের দুষমন বলেই বিবেচিত হবে ৷কারণ ইসলামে ফিতনা-সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বিশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতা’য়ালা বলেন, ‘ফিতনা বা সন্ত্রাস হত্যার চেয়েও ভয়াবহ’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৯১)।
মানুষ হত্যা নিষেধ করে আল্লাহতা’য়ালা বলেন, ‘কেউ কাউকে নরহত্যার অপরাধ অথবা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টির কারণ ব্যতীত হত্যা করলে সে যেন গোটা মানবতাকে হত্যা করল। আর কেউ কারও প্রাণ বাঁচালে সে যেন গোটা মানবজাতিকে বাঁচাল’ (সূরা মায়িদা, আয়াত : ৩২)।
অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে।’ (সূরা : নিসা, আয়াত : ৯৩)। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না এবং একে অন্যকে হত্যা কোরো না।’ (সূরা : নিসা, আয়াত : ২৯)। অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘(রহমানের বান্দা তারাই) যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যর ইবাদত করে না, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না।’ (সূরা : ফোরকান, আয়াত : ৬৮)। শুধু মুসলিমই নয় ইসলাম অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকেও হত্যায় উৎসাহিত করে না। অমুসলিমের জান-মাল-ইজ্জত সংরক্ষণের ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। হাদীস হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি কানো জিম্মীকে (চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমকে) হত্যা করল, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের দূরত্বে থেকেও জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ (বুখারি হাদীস নং ৩১৬৬)।
আর মুসলমানদের পারস্পরিক রক্তপাতের বিরুদ্ধে হাদিস শরিফে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানকে গালি দেয়া গোনাহর কাজ আর তাকে হত্যা করা কুফরি।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৬০৪৪)। অন্য হাদীসে এসেছে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের (মুসলমানদের) ওপর অস্ত্র উঠাবে, সে আমাদের (ধর্মের) দলভুক্ত না।’ (বুখারি, হাদিস নং : ৬৮৪৪)। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে গোটা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোনো মুসলমানের হত্যার চেয়েও অধিক সহনীয়।’ (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ৩৯৯২) সুতরাং আমাদের ফিতনা-সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত থাকতে হবে৷ মনে রাখতে হবে বল প্রয়োগে নয় বরং ইসলামের সুমহান আদর্শ দিয়ে মানুষদের ইসলামের দিকে ডাকতে হবে ৷যদি বল প্রয়োগের কোনো বিধান থাকতো তাহলে হযরত রাসুল করিম (সা.) মক্কা বিজয়ের পর অমুসলমানদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য বাধ্য করতেন এবং মক্কায় বসবাসের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি! এতে প্রমাণিত হয়, ধর্মের জন্য বল প্রয়োগ ইসলামের শিক্ষা নয়। ইসলামের আচরণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে ৷ আল্লাহ পাক সকল ফেতনা ফাসাদ থেকে আমাদের হেফাযত করেন। আমিন। মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মানুষের সামজিক জীবন একটি গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়। সমাজের অবস্থা পরিস্থিতি যদি কল্যাণময়ী শান্ত প্রকৃতির হয় তাহলে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার ও সামগ্রিক জীবনেও সেই কল্যাণ এবং শান্তি অনুভূত হয়। আর যদি সমাজের অবস্থা, প্রেক্ষাপট প্রতিকূলে থাকে অর্থ্যাৎ অন্যায়-অপরাধ, দ্বন্ধ-সংঘাত, সন্ত্রাস নৈরাজ্য, হিংসা-বিদ্বেষ, অশ্লীলতা বহায়াপনা, পাপাচার অনাচার ও জুলুম অত্যাচার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয় তখন নিজে ভাল থাকতে ইচ্ছা করলেও তা সম্ভব হয়ে উঠেনা। সামজিক পরিস্থিতির কারণে জীবনটা যেন অস্থির দূর্বিষহ হয়ে উঠে। চারিদিকে তখন কাল অমানিষার আঁধার দেখতে পায়। দুনিয়াতে থাকা আর না থাকা সমান মনে হয়। এমিনকি এ অবস্থা সহ্য করতে না পেরে কেহ কেহ আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। বিশ্ব ব্যাপী সমাজের অবস্থা আজ অনেকটা এমনই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা বাস্তবিকই অনভিপ্রেত। বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে নিয়ে সাধারণ মানুষও এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বহু মত পথ অবলম্বন করছে কিন্তু কেন যেন কোনভাবেই সফলকাম হচ্ছেনা। শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসছেনা।
খতিব বলেন, একমাত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনূসরণের মাধ্যমেই সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা, সৌহার্দ্য সম্প্রীতি বজায় রাখা সম্ভব। অন্য কোন মত পথে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কারণ তদানিন্তন সময়ে আরববাসীরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনূসরণে ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে ঐক্যবদ্ধতার ভিত্তিতে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি সহমর্মিতা, প্রত্যেকের হক (প্রাপ্য) আদায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাহেলিয়াতের সর্ব প্রকার অজ্ঞতাপূর্ন দ্বন্ধ-সংঘাত যুদ্ধ-বিগ্রহ, কলহ-বিবাদ, রক্তপাত অরাজকতা দূর করত: তথায় শান্তিপূর্ণ, সৌহার্দ্য সম্প্রীতি সম্পন্ন একটি সুন্দর কল্যাণমূলক সমৃদ্ধশালী আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। ( সূরা আজহাব, আয়াত: ২১)। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমিন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মানবজীবনে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের যে কোন কাজের ফলাফল নির্ভর করে তার নিয়তের উপর। ওই কাজ আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর আগেই বান্দার মনের গহিনে থাকা ইচ্ছা তথা ‘নিয়ত’ আল্লাহর কাছে দ্রুত পৌঁছায়। এজন্য নিয়তের পরিশুদ্ধতা খুবই জরুরি। হযরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত বোখারির প্রথম হাদিসে বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই সমস্ত কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ বোখারির প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘উমদাতুল কারি’তে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (রহ.) আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন মানুষের নিয়ত এতটাই শক্তিশালী যে, তা ইবাদত নয়, এমন বিষয়কে ইবাদত বানিয়ে দেয়। যেমন ঘুম। মানুষ নিজ প্রয়োজনে ঘুমায়। কিন্তু যদি এ নিয়তে ঘুমায় ‘আমি ঘুমাব শরীর চাঙা হবে এবং চাঙা শরীরে মহান আল্লাহর ইবাদত করব’, তাহলে যতক্ষণ ঘুমাবে ততক্ষণ তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে। অন্য আরেক হাদিসে নবীজী (সা.) বলেন, 'ইখলাসের সাথে আমল করলে অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।' সুতরাং কেউ যদি মানুষকে দেখানোর জন্য, সম্মান-সুখ্যাতি অর্জনের জন্য ইবাদত কিংবা দান সদকাহ করে তবে তা সে হিসেবেই গণ্য করা হবে এবং পরকালে সে এর কোন বিনিময় পাবে না। খতিব আরও বলেন, বিচার দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের বাহ্যিক কর্মকা-ের উপর ভিত্তি করে হিসাব নেবেন না। বরং বান্দার হিসাব হবে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা তার নিয়তের উপর। সহিহ মুসলিম শরীফের একটি হাদিসে নবীজী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের বাহ্যিক আকার আকৃতি এবং ধন-সম্পত্তির দিকে দৃষ্টিপাত করেন না, বরং তিনি দৃষ্টিপাত করেন শুধু তোমাদের অন্তরের আমল তথা নিয়তের দিকে।' তিনি বলেন, আল্লাহর তায়ালার একজন একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে আমাদের উচিত সহিহ নিয়তের ওপর আমল করা। সৎ স্বচ্ছ এবং বিশুদ্ধ নিয়ত বুকে ধারণ করা। যাতে ইহকাল এবং পরকাল দু’জায়গায়ই আল্লাহর দয়া এবং রহমতের ছায়ায় কাটাতে পারি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।