Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আর কত লজ্জা দেবে ক্রিকেট?

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৭ এএম

আগেরদিন এই উইকেটই দেখেছে রান-উৎসব। নিউজিল্যান্ড বনাম স্কটল্যান্ডের ম্যাচে উঠেছিল ৩২৮ রান, ২২টি চারের সঙ্গে এসেছিল ১৪টি ছয়। অথচ ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সেই উইকেটই যেন পরিণত বদ্ধভূমিতে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওভারে ওভারে উইকেট খুইয়ে মাত্র ১৫ ওভার খেলে ৭৩ রানে থামে বাংলাদেশ। যে অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র দুই মাস আগে মিরপুরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল এই বাংলাদেশই! তফাৎটা তবে উইকেটেই!
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর থেকে আর কোনো আইসিসির পূর্ণ সদস্য দলকেই এ টুর্নামেন্টে হারাতে পারেনি তারা। এবার প্রথম পর্ব পেরিয়ে সুপার টুয়েলভে এলেও প্রথম পাঁচ ম্যাচ খেলেও জয়শূন্যই থাকতে হয়েছে মাহমুদউল্লাহর দলকে।
‘কী ভুল ছিল বাংলাদেশের?’- আইসিসির অফিশিয়াল সম্প্রচারে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল তিন ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেইন, মাইকেল আথারটন ও সাইমন ডুলের কাছে। তারা যেসব পয়েন্ট তুলে ধরলেন তার বিশ্লেষণ করলেও উঠে আসে নিম্নমানের উইকেটে খেলার প্রবণতায় এমন ধ্বস।
তিনজনই যেটা বলেছেন আলাদা করে, মূলত পাল্টা একটা প্রশ্নই ছুড়ে দিয়েছেন বিসিবি নীতি নির্ধারকদের দিকে- বাংলাদেশ কি শুধু ঘরের মাঠেই ভালো করতে চায়, নাকি এমন টুর্নামেন্টেও ভালো করতে চায়? কারণ দেশে যেসব উইকেটে খেলে বাংলাদেশ, সেগুলো হয় স্পিন-সহায়ক, তাতে ম্যাচ আর সিরিজ জিতলেও ভিন্ন কন্ডিশনে গিয়ে ভুগতে হয় নিয়মিতই। সেটিই হয়েছে এবার। পাশাপাশি টপ অর্ডারের তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিও ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। দেখে মনে হয়েছে কোনো ‘প্ল্যান বি’ নেই। বাউন্ডারি গুরুত্বপূর্ণ টি-টোয়েন্টিতে, তবে বাংলাদেশের তেমন পাওয়ার হিটার নেই। বাউন্ডারিও আসেনি নিয়মিত।
টি-টোয়েন্টিতে অন্য দলগুলোর ভাবনা পুরোপুরি উল্টো। বড় দলগুলোর কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল। আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, এমনকি নামিবিয়ার মতো দলও অনেক ইতিবাচক। এই দলগুলোর কেউই হারার আগে হেরে বসে না। অথচ বাংলাদেশ দলকে দেখলে মনে হয় কেমন যেন দ্বিধান্বিত একটা দল। টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং কেমন করতে হবে, এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে গোটা দল।
গতকাল টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ছিল না কোনো চাপ, ছিলনা তাড়া। অথচ তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে যেন দেশে ফিরতে অস্থির হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। উইকেট হারিয়েছে ওভারের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে! দশম ওভারে একটি হিসেব বারবার মনের কোনে জড়ো হচ্ছিল, ২৩ বল ধরে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ! ইনিংসে যেটি ছিল সর্বোচ্চ! সব মিলিয়ে ৫ ম্যাচে ২৩টি উইকেট বাংলাদেশ হারিয়েছে প্রথম ৬ ওভারের মধ্যেই, যে কোনো দলের মধ্যে এটিও সর্বোচ্চ।
একটা দল আর কতটা খারাপ করতে পারে! অনেক সময় কোনো কোনো দল মানুষের সব শঙ্কাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অবস্থা সেটিই। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৪ রানে গুটিয়ে যাওয়া, যারা মনে করেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তাদের তাদের সবচেয়ে বাজে ব্যাটিংটা করে ফেলেছে, তারা ভুল করেছিলেন। গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাটিংটা হলো ভয়াবহই। একটা আত্মবিশ্বাসহীন দল যতটা খারাপ করতে পারে, ঠিক ততটাই। জীর্ণ, দৈন্য ধরন, মাঠে নেমে ধুঁকতে থাকা- এদিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেটিই দেখা গেল। প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা, জশ হ্যাজলউডদের সামনে বড় অসহায় মনে হল দলটাকে। মাহমুদউল্লাহ, শামীম হোসেন কিছু রান না করলে যে কী হতো! শেষ পর্যন্ত দুবাইয়ে ১৫ ওভারে ৭৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দুবাইয়ে শুরু থেকেই প্রকাশিত বাংলাদেশের ব্যাটিং অক্ষমতা। মারতে না পারা, গ্যাপ বের করতে না পারা, সর্বোপরি বিশ্বসেরা ফাস্ট বোলিংয়ের সামনে অসহায়ত্ব। স্টার্ক, হ্যাজউড, জাম্পা শুরু থেকেই আগুন ঝরালেন। সে আগুনে পুড়ে শুরুতেই অঙ্গার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তৃতীয় বলেই নেই লিটন দাস। স্টার্কের বলে বোল্ড তিনি। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে হ্যাজলউডের বল স্টিয়ার করতে গিয়ে নিজের স্টাম্প ভেঙে যেতে দেখেন সৌম্য। তৃতীয় ওভারে পঞ্চম বলে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। তিনি গেলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে বিভ্রান্ত হয়ে। স্কোরবোর্ড তখন উঠেছে ১০ রান।
এরপর মোহাম্মদ নাঈম আর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সামান্য প্রতিরোধ। ১৬ বলে ২২ রানের জুটি। কিন্তু নাঈম দলীয় ৩২ রানে ফিরলেন হ্যাজলউডের বলে প্যাট কামিন্সের ক্যাচ হয়ে। পুল করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটও পার করতে পারেননি তিনি। আফিফ হোসেন তার ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করলেন আজ। স্কোরবোর্ড ঘুরতে না ঘুরতেই ৩৩ রানের মাথায় তিনি বোল্ড।
৩৩ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার শামীমকে নিয়ে আরও একটা জুটি মাহমুদউল্লাহর। ২৮ বলে ২৯। কিন্তু শামীমও বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। যদিও এদিন বাংলাদেশের দলের সর্বোচ্চ রান এই বাঁ হাতিরই। ১৮ বলে, এক ছক্কা আর এক চারে করেছেন তিনি ১৯। কিন্তু অস্ট্রেলীয় বোলিংয়ের সামনে সীমিত সামর্থ্য নিয়ে কতক্ষণ লড়বেন তিনি। মেহেদীকে এক বলের বেশি থাকতে দিলেন না জাম্পা। মাহমুদউল্লাহ ফিরলেন ১৬ রান করে স্টার্কের বলে উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ হয়ে। ৬৫ রানে ৮ উইকেট নেই। এরপর আর লড়ার কিছুই যে থাকে না। এরপর মুস্তাফিজ আর শরীফুলও দ্রুতই আউট করে ১৫ ওভারেই বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেন জাম্পা।
এই রান তাড়ায় বেগ তো পেতেই হয়নি, মাত্র ৬.২ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টিতে ৭৪ বা এর বেশি রানের লক্ষ্যে সবচেয়ে কম ওভার খেলে জয়ের রেকর্ডে এটি চার নম্বরে। তবে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার জয় দুই নম্বরে। ২০০৯ বিশ্বকাপে স্কটল্যানের ৯০ রানের লক্ষ্য ৬ ওভারেই পেরিয়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: "টি২০ বাংলােদশ"
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ