Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামে আনুগত্যের সীমারেখা

শরিফুল ইসলাম নাঈম | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

মানব জাতিকে আল্লাহ তাআলা স্বীয় আনুগত্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি দেখতে চান, কে তার সবচেয়ে উত্তম আনুগত্য করতে পারে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তিনিই এমন সত্ত্বা যিনি জীবন, মরণ সৃষ্টি করেছেন যেন পরিক্ষা করতে পারেন তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ কে! তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাময়। (মূলক:২) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, আমি মানব, দানবকে সৃষ্টি করেছি কেবলই আমার উপাসনা করতে। (যারিয়াত: ৫৬)

একাধিক জায়গায় আল্লাহ নিজের ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন,সূরা মুহাম্মদের ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ কর আর নিজেদের নেক আমলকে নষ্ট করো না।

অন্য জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো যেন তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও। (আলে ইমরান:১৩২) আরেক জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, তোমরা মুমিন হয়ে থাকলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। (আনফাল:১)

একই সঙ্গে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন মাখলুকের আনুগত্যের নির্দেশনাও দিয়েছেন। যেমন শাসকের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে কুরআনে। ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ করো আর অনুসরণ করো তোমাদের নীতিনির্ধারকদের। (নিসা:৫৯) অনেক মুফাসসিরীনের মতে নীতিনির্ধারক দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেন শাসক। হোন তিনি রাষ্ট্রীয় কিংবা সামাজিক। এমনিভাবে মা বাবার আনুগত্যের নির্দেশ এসেছে কুরআনের একাধিক স্থানে। ইরশাদ হয়েছে, আর আপনার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা কেবল তারই ইবাদত করবে এবং মা বাবার সাথে সদাচরণ করবে।( বনী ইসরাঈল:২৩)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার সাব্যস্ত করো না। মা বাবার সাথে সদাচরণ করো। (নিসা:৩৬)

আর বলাবাহুল্য যে, আনুগত্য সদাচরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। যদি তাদের আনুগত্যই না করা হয় তাহলে সদাচরণ পূর্ণতা পাবে না।

একই ভাবে উলামায়ে কেরাম, শিক্ষক ও বড়দের কথা মানার কথাও এসেছে শরীয়তে। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা না জানলে আলেমদের কাছে জিজ্ঞেস করো। (আম্বিয়া:৭, নাহল:৪৩) এ আয়াতে আলেমদের কথা মানাকে আবশ্যক করা হয়েছে। অন্যথায় তাদের কাছে জিজ্ঞেস করার নির্দেশ দেওয়ায় কোনো যৌক্তিকতা নেই।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বড়দের হক্ব সম্পর্কে জানে না এবং ছোটদের প্রতি স্নেহশীল হয় না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। (মুসনাদে আহমদ ১২/২৯) আর বড়দের হক্বের মধ্যে অন্যতম হল, তাদের আনুগত্য করা।
শিক্ষক ও উস্তাযের কথা মানা, আনুগত্য করা তো ইলম পাওয়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। ইলম অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ আদবও এটা।

তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে গিয়ে এদের কারো আনুগত্য করা যাবে না। সেটা হারাম হবে। ইমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোনো আনুগত্য হতে পারে না। (জামিউস সাগীর, হাদীস নং ৯৮৮৪)

আনাস বিন মালিক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আল্লাহর অনুগত নয় তার জন্য কোনো আনুগত্য নেই। (জামিউস সাগীর, হাদীস নং ৯৮৮২) আরো অসংখ্য সাহাবী থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

হযরত আবুবকর সিদ্দিক রাদিআল্লাহু আনহু খেলাফত লাভের পর প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, ‹আমি যদি ভালো কাজ করি তাহলে আপনারা আমার সহযোগিতা করবেন। আর যদি মন্দ পথে ধাবিত হই তাহলে আমাকে সোজা পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন›। আরো বলেছিলেন, যদি আমি আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্য হয়ে যাই তাহলে আমার আনুগত্য করা আপনাদের জন্য জায়েজ হবে না›। ( আখতার ফারুক অনূদিত ‹খোলাফায়ে রাশেদীন› পৃষ্ঠা নং ৫০)

বর্তমানে দেখা যায়, মানুষের কথায় অনেকে শরীয়ত বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। মা বাবা পছন্দ করে না বলে অনেকে নির্দ্বিধায় দাড়ি কেটে ফেলে। আরো জঘন্য হচ্ছে, অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দাড়ি রাখে না বর্তমান যুবকেরা। নামাজে নিয়মিত হয় না। তাকওয়ার পোশাকে সজ্জিত হয় না। দ্বীন পালনে সচেষ্ট হয় না। কারণ, তার সঙ্গীনী এসব পছন্দ করে না।

নষ্ট ভ্রষ্ট দলীয় নেতাদের কথায় এ প্রজন্মের ছেলেরা যে কোনো অপকর্মে রাজী হয়ে যায়। বড় নেতার একটু আশীর্বাদ পেতে খুন জখম থেকে শুরু করে হেন কোনো কাজ নেই যা করে না। নেতার এক ইশারায় নিজের জীবন পর্যন্ত দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না এরা। এতে আল্লাহর আনুগত্য হচ্ছে নাকি অবাধ্যতা সেটা একটু ভেবে দেখার সময় তাদের হয় না। কেমন যেন নেতার কথাই সব ঐশীবাণী। তার আনুগত্যই সবকিছু। তার অন্যথা করা যাবে না। এসব অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। কোনো মুসলমানের জন্য এগুলো শোভা পায় না।

কারণ, প্রকৃত মুসলমান কাউকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে রাখতে পারে না। কারো আনুগত্যকে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের উপর প্রাধান্য দিতে পারে না। কারো কথায় তাঁদের অবাধ্য হতে পারে না।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রকৃত অর্থে তাঁর অনুগত হওয়ার তাওফীক দান করুন।

লেখক : উস্তায, এরাবিক মডেল মাদ্রাসা উত্তরা, ঢাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ