Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবারও প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ

কপ-২৬ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য সর্বমহলে প্রশংসিত

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলন এবারও নানান প্রতিশ্রুতির মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকছে। গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে নিরাপদ বিশ্ব গড়ার যে অঙ্গীকার নিয়ে কপ-২৬ শুরু হয়েছিল সে প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করছেন। কারণ কয়েকদিন আগে ইতালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলন কার্বন নিঃসরণ কমানোর সুর্নিষ্ট পদক্ষেপ বা ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ ছাড়াই শেষ হয়েছে।

উন্নত বিশ্বের ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জি-২০। বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের ৮০ শতাংশই আসে এসব দেশ ও জোটভুক্ত অঞ্চল থেকে। জি-২০ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জনের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। আর তাতে কপ-২৬ আয়োজক দেশ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, সঠিক পদক্ষেপ ছাড়া প্রতিশ্রুতি ফাঁপা শোনাতে শুরু করেছে। এসব প্রতিশ্রুতি দ্রুত উষ্ণ হতে থাকা সমুদ্রে পড়ছে। তবে জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আয়োজনে ভার্চুয়াল লিডার্স সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেছেন। সেই সাথে নিরাপদ বিশ্ব গড়ার লক্ষে তিনি কয়েকটি পরামর্শ পেশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে অবিলম্বে একটি উচ্চাভিলাষী কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে হবে, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ৫০ অনুপাত ৫০ ভারসাম্য বজায় রাখবে। এই তহবিলের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর ক্ষয়ক্ষতি পূরণে বিশেষ দৃষ্টি দেবে। এ ছাড়া প্রধান অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উদ্ভাবনের পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নের জন্য বিশেষভাবে ছাড় দিতে হবে। সবুজ অর্থনীতি ও কার্বন প্রশমন প্রযুক্তিগুলোর ওপর দৃষ্টি দিতে হবে। এ লক্ষ্যে দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তির বিনিময় করতে হবে।

কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি বছর আমরা আমাদের জিডিপি’র প্রায় ২.৫ শতাংশ বা প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যয় করি। আমরা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। এটা আমাদের প্রতিবেশকে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। তিনি বলেন, আমাদের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন-এনডিসি বৃদ্ধিতে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন সহনীয় টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা বিদ্যমান জ্বালানি, শিল্প ও পরিবহন খাতের পাশাপাশি নতুন খাত অন্তর্ভুক্ত করেছি। এভাবে আমরা কার্বন হ্রাসের পদক্ষেপ নিয়েছি। এছাড়াও ২০২১ সাল নাগাদ উচ্চাভিলাষী এনডিসি পেশের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বণ নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে উন্নত দেশগুলো একটি সুর্নিষ্ট রূপ রেখা প্রনয়ন করবে এমনটা প্রত্যাশা করেছিল। এ ছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্য নির্গমনের জন্য সমস্ত দেশ নতুন করে অঙ্গীকার করবে তাহলে কপ-২৬ এর সফল হবে। কিন্তু জি-২০ সম্মেলনে এর কিছুই হয়নি। কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ, পেট্রল কার এবং পরিবেশ রক্ষায় দেশগুলোর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপদ্ধতি এবং অঙ্গীকার আসেনি। শুধু মাত্র কার্বন নিঃসরণ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার প্রতিশ্রুতির কথাই তারা আবারও ব্যক্ত করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণকারী দেশ চীন এবং রাশিয়া এই লক্ষ্য ২০৬০ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার এখনই পুরোপুরি বদ্ধ করতে তারা একমত হয়নি। তারা ধীরে ধীরে এ জ্বালানি ব্যবহার বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ জি-২০ সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সরাসরি যোগ দেননি। ভিডিও লিংকে তারা বক্তব্য রাখেন।

এর আগে ২০১৫ প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে কার্বণ নিঃসরণ ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে একটি চুক্তি হয়েছিল। তাতে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্রতিবছর ১০০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি উন্নত দেশগুলো রক্ষা করেনি। এবারও উন্নত দেশগুলো সুনির্ষ্টি কোনো কর্মপদ্ধতি উপস্থাপন না করায়, শুধু মাত্র প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ থাকায় কপ-২৬ সম্মেলনের সফলতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

প্রখ্যাত পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের দায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে বিশ্বে গ্রীন হাউজ গ্যাস অর্থাৎ কার্বন নিঃসরণের ৮০ শতাংশই হচ্ছে উন্নত দেশগুলোর জন্য। এখন এসব দেশগুলো যদি কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করে তাহলে অন্যরা যত কথাই বলুক আর যত উদ্যোগ নিক না কেন তাতে কোনো লাভ হবে না। এখন পর্যন্ত উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সঠিক ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি না পাওয়াটা কিছুটা হতাশা জনক। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সারাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে সে বিষয়টি সবাই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে এবং সে আলোকে কপ-২৬ সম্মেলনে একটি সম্মিলিত ভবিষ্যৎ রূপরেখা প্রনয়ন করা হবে বলে আমি মনে করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ