বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ইলিশ সম্পদ সমৃদ্ধ করাতে ২২ দিনের মূল প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার এক সপ্তাহের মাথায়ই সারাদেশে জাটকা আহরণে টানা ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা বলবত হল সোমবার মধ্যরাত থেকে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে পরিপক্কতা অর্জন সহ পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিণত হতে প্রতিবছরের মত এবারো ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত সরা দেশে জাটকা আহরণে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। নিষেধাজ্ঞার এসময়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলীয় এলাকায় প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত ছাড়াও মৎস্য বিভাগ নানা ধরনের অভিযান পরিচালনা করবে। পাশাপাশি নৌবহিনী, কোষ্টগার্ড, পুলিশ ও র্যাব সহ আইন-শৃংখলা বাহিনীও অভ্যন্তরীন ও উপক’লীয় এলাকায় কঠোর নজরদারী করবে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জাটকা আহরনে নির্ভরশীল জেলেদেরকে আহরন নিষিদ্ধকালীন এ সময়ে খাদ্য সহায়তা হিসেবে এবারো ফেব্রুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত দু দফায় বিনামূল্যে ৪০ কেজি করে চাল বিতরন করেবে সরকার ।
তবে দেশে এখনো নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল সহ অন্যান্য ক্ষতিকর মৎস্য আহরন উপকরনের সাহায্যে যে পরিমান জাটকা আহরন হয়, তার এক-দশমাংশ রক্ষা করা গেলেও বছরে আরো অন্তত ১ লাখ টন ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব হত বলে মনে করেন মৎস্য বিজ্ঞানীগন। ইলিশ প্রজনন আহরন নিষিদ্ধকালীন গত ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের দক্ষিনাঞ্চল সহ উপক’লভাগে আইনÑশৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনের অভিযানে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৯ লাখ মিটার নিষিদ্ধ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
তবে নজরদারী বৃদ্ধির ফলে দেশে জাটকা’র উৎপাদন ২০১৫ সালে ৩৯ হাজার ২৬৮ কোটি থেকে ২০১৭ সালে ৪২ হাজার ২৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়। যা পরবর্তি বছরগুলোতেও আনুপাতিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ইলিশের উৎপাদনও ১৯৯৮Ñ’৯৯ সালের ১.৯৮ লাখ টন থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে বলে জানা গেছে। যা চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ৬০ হাজার টনে উন্নীত হবার সম্ভবনার কথা জানিয়েছেন মৎস্য বিজ্ঞানীগন। মৎস্য অধিদপ্তরে মতে, জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী। দেশে বর্তমনে মাছের উৎপাদন ৪৫ লাখ টনেরও বেশী। আর মৎস্য খাতে ইলিশের অবদান প্রায় ১২%। সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৬০% এখন বাংলাদেশেই উৎপাদন ও আহরিত হচ্ছে।
প্রতিদিন শ্রোতের বিপরিতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলা অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে পরিভ্রমন করে থাকে। উপক’লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে অশ্বিনের বড় পূর্ণিমায় মূক্ত ভাসমান অবস্থায় ছাড়া ডিম থেকে ফুটে বের হবার পরে ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে বিচরন করে খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে ৭Ñ১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেবে সমুদ্রে চলে যায় পরিপক্কতা অর্জনে। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২-১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্ক হয়েই প্রজননক্ষম ইলিশ আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।
সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় ইলিশ পোনাÑজাটকা খাদ্য গ্রহন করে বেড়ে ওঠে, সেগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র’ হিসেবে অভয়াশ্রম ঘোষনা করেছে সরকার। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে ল²ীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ কিলোমিটার, মদনপুর থেকে ভোলার চর ইলিশা হয়ে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুুলিয়া নদীর ১শ কিলোমিটার এবং শরিয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ নিম্ন পদ্মার ১২০ কিলোমিটার এলাকা এবং বরিশালের হিজলা, মেহদিগঞ্জ ও সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকা ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম হিসেব চিঞ্হিত করা হয়েছে। এসব অভয়াশ্রমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দু মাস করে পর্যায়ক্রমে সব ধরনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ থাকায় প্রতি বছরই আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।
পাশাপাশি ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘ্ন রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুদ ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে ২০১৯-এর ২৬জুন থেকে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।