সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
সা জ্জা ক হো সে ন শি হা ব
ওর নামটা কেমন জানি অদ্ভুত। ডাগগিল। ডাগগিলের মানেটা কারোরই জানা নেই। স্কুলের বন্ধুরা মিলে তাকে এ নাম দিয়েছে। অথচ ওর আসল নাম ডালিম। ডালিম থেকে ডাগগিল। এখন পাড়ার বন্ধুরাও ডালিমকে এ নামেই ডাকে। এ নামে ডাকার কারণ তো একটা আছেই। ডালিম নিমিষেই সব কাজ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ও সবার চেয়ে ভিন্ন। তাই সবাই মিলে এরকম একটা অপরিচিত আর ভিন্ন নামই তাকে দিয়েছে। ডাগগিলের কাজকর্ম দেখলে সবাই তো অবাক হয়ে যায়। ও ক্লাস নাইনে পড়ে। এ বয়সে সে এটা-সেটা বানিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে দেয়। এবার ডাগগিল একটা ড্রোন বানানোর মিশনে নেমেছে। মিশন মানে যে কোনো কিছু অর্জন করার জন্য যে কাজগুলো করতে হয়, সেটা। এটাও জানে ডাগগিল। ডাগগিল তার কাজকে মিশন বলে। ড্রোন বানাতে চেয়ে সে পড়ে যায় এক বিপদে। ড্রোন বানানোর পদ্ধতিটা তো তার জানা নেই। কীভাবে এটা বানায়! ডাগগিল তো হারার ছেলে না। সে ইন্টারনেট সার্চ দেয়। এরপর খুঁজে পায় ড্রোন বানানোর একটা কৌশল। যা যা লাগে, তাও সে জেনে যায়। প্রথমে লাগে ব্রাশলেস মোটর, বৈদ্যুতিক গতি নিয়ন্ত্রক, লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি, প্রপেলার, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, রেডিও ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার। এগুলো কী তা তো তাকে জানতে হবে। সে খুবই চালাক। সে একেকজনের কাছে একেকটার মানে জেনে নেয়। ইন্টারনেট থেকে কিছুটা ধারণা নেয়। স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক আবজাল স্যারের কাছে সে জেনে নেয় ব্রাশলেস মোটর কী, সেটা। এটা এক প্রকারের গতিদায়ক ঘূর্ণন যন্ত্র বা মোটর। অন্যান্য মোটরের সাথে এর পার্থক্য হলো, এটা ঘুরে বেশি। বৈদ্যুতিক গতি নিয়ন্ত্রক যে কী, ডাগগিল তা সহজেই ইন্টারনেট থেকেই বুঝে যায়। এটার সাহায্যে গতিদায়ক ঘূর্ণন যন্ত্রের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। একটি ড্রোনে যতগুলো ব্রাশলেস মোটর থাকে, ঠিক ততগুলোই বৈদ্যুতিক গতি নিয়ন্ত্রক থাকে। একেকটা বৈদ্যুতিক গতি নিয়ন্ত্রকের সাহায্যে ড্রোনকে একেক দিকে ঘুরানো যায়। তার চাচু রুয়েটে পড়ে। রুয়েটে মানে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কাছ থেকে সে শুনে নেয়, লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি যে ড্রোনের জন্য বেশি ভালো, সেটা। কারণ এটার ওজন তুলনামূলকভাবে অল্প। আবার এতে বেশি মিলি এম্পিয়ার আউয়ারস থাকে, যা ড্রোন উড়াতে সাহায্য করে। মিলি এম্পিয়ার আউয়ারস বা সংক্ষেপে এমএএইচ হলো, একটা ব্যাটারি এক সময় কত পরিমাণ বিদ্যুৎ রাখতে পারে, সেটা। লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি আটশো থেকে নয় হাজার এমএএইচ পর্যন্ত হয়। এটা শেষে ডাগগিল যখনই তার চাচুকে প্রপেলারের কথা জিজ্ঞেস করে, তখনই সে ধরা খেয়ে যায়। তার চাচু তাকে বলে, তুই এসব দিয়ে কী করবি? চাচুর প্রশ্নে ডাগগিল কোনো কথা বলে না। চুপ থাকে। তারপর তার জোরাজুরিতে সে বলে, চাচু, আমি একটা ড্রোন বানাব। যার নাম হবে, ডাগগিল-ড্রোন। আমাদের স্কুলের বিজ্ঞান মেলায় আমি এটা উঠাব। ডাগগিলের এমন কথা শুনে তার চাচা খুবই খুশি হলো। তারপর বলল, আরে পাগলা; প্রপেলার হলো ড্রোনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা বিভিন্ন মাপের হয়। প্লাস্টিক বা নাইলনের প্রপেলার ঘড়ির কাঁটার দিকেও ঘুরে। আবার বিপরীতেও ঘুরে। এটা না ঘুরলে যে ড্রোনই উড়বে না। পাখি যেমন পাখা ঝাপটায়ে উড়ে, ড্রোন তেমনি এটা ঘুরলে, তবেই উড়বে। আর ফ্লাইট কন্ট্রোলার তো কী জানিস, তাই না? এটা হলো, ড্রোনের উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রক। এটা দিয়েই তুই তোর ড্রোনের গতি কমিয়ে, বাড়িয়ে এদিক-সেদিক নিতে পারবি। আর রেডিও ট্রান্সমিটার আর রিসিভার তো ড্রোনকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এটার সাহায্যে তোর ড্রোন আটশ থেকে আড়াই হাজার মিটার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হবে। একটা ড্রোন তৈরি করতে কমচে কম তিরিশ হাজার টাকা খরচ হবে। এখন বল, তুই এত টাকা পাবি কই? আর এর যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আনতে হবে। আমি তোকে সব এনে দেব। কিন্তু টাকা? আর একটা কথা, ড্রোন উড্ডয়নের আগে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির অনুমতি নিতে হয়। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি হলো একটি সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। একে বাংলায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলে। ডাগগিল, তার চাচার কথা শুনে চাচাকে বলল, তুমি আমাকে যন্ত্রাংশগুলো এনে দাও আর উড্ডয়নের অনুমতি এনে দাও। আমি আব্বুকে বলে টাকা এনে দিচ্ছি। ডাগগিলের বাবা এসব সৃজনশীল কাজ খুব পছন্দ করে। ছেলের এমন কথা শুনে সে রাজি হয়ে যায়। এরপর তার ছোটো ভাইকে, মানে ডাগগিলের চাচাকে ডেকে সে টাকাও দিয়ে দেয়। ডাগগিলের চাচা সেই টাকায় যন্ত্রপাতি আনে। এরপর ডাগগিল, তার চাচার সহযোগিতায় শুরু করে ড্রোনের কাজ। তাদের ছয় মাস টানা সাধনার পর আসে সেই ক্ষণ। তারা ড্রোন তৈরি করে ফেলে। ডাগগিলের স্কুলের বিজ্ঞান মেলাও চলে আসে। ডাগগিল তার ড্রোন তুলে মেলায়। সবাই তার কাজ দেখে অবাক হয়ে যায়। বাহবা দেয়। এক স্কুল-ছাত্রের ড্রোন তৈরির এমন গল্প ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ডাগগিল এখন অনেকের কাছে হিরো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।