Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাহাড়ের বোবা চিৎকার

প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আ ফ তা ব চৌ ধু রী
নানা জাতের বৃক্ষরাজি আর লতা, গুল্মের নকশায় বোনা প্রকৃতির সবুজ চাদর পরিহিত জাফলংয়ের পাহাড়গুলো এখন উলঙ্গ। বন বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে আর একশ্রেণির কাঠ ব্যবসায়ী লুটপাট করে পাহাড় আর টিলার গায়ে জড়িয়ে থাকা প্রকৃতির সবুজ চাদর। এর ফলে পাহাড়গুলো রূপলাবণ্য হারিয়ে বিপন্ন হচ্ছে। সেই সাথে সবুজ চাদরের আঁচলে নিবিড় পরশে বেড়ে ওঠা বন্যপ্রাণীগুলো এপারে আশ্রয় হারিয়ে স্থান করে নিয়েছে সীমান্তের ওপারে। এর ফলে জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির সম্মুখীন।
প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা মূল্যবান গাছ, বাঁশ ও লতা গুল্মে ভরপুর পাহাড়গুলোর অমূল্য এ সম্পদ গেল ক’বছরে নির্বিচারে লুটপাট করে নিয়ে যায় হায়েনারা। পাহাড়ের মূল্যবান এ সম্পদ উজাড়ের পর পাথর উঠানোর নামে চলে মাটি খোদাই করে লুটপাট। পাথর ক্রাশ করার নামে বসানো হয়েছে শতাধিক কারখানা। এসব কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, ধুলো আর বালু সর্বোপরি এর বিকট আওয়াজ এক সময়ে পর্যটন স্পট হিসেবে দেশব্যাপী যে পরিচিতি ছিল জাফলংয়ের তা আজ আর নেই।
বন উজাড় আর কলকারখানার চারদিকের পরিবেশ বিপন্ন শুধু নয়, সর্বত্র গুমোট ও অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। জনজীবনে এর যেমন প্রভাব পড়ে তেমনি বন্যপ্রাণীদের মধ্যে পড়ে এর প্রতিক্রিয়া। নানা জাতের বন্যপ্রাণী তাদের আবাসস্থল হারিয়ে সীমান্তের ওপারে ভারতীয় জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এতে করে একদিকে জাফলং অঞ্চলে যেমন বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে বন্যপ্রাণী শূন্য হয়ে পড়ছে বিস্তৃত অঞ্চল।
মেঘালয়ের পাদদেশে জাফলংয়ের টিলাগুলো কেটে পাহাড়ি এলাকাকে সমতলে রূপান্তরের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। এলাকার টিলাগুলো কেটে ফেলার ফলে ক্রমশ মাটি নরম হয়ে বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক হারে ধ্বংস নামছে। নালা সৃষ্টি হয়ে মাটি নিচে নেমে একটি বিশ্রী অবস্থার সৃষ্টি শুধু হচ্ছে না, ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনাও রয়েছে। পাহাড় বা টিলার পাদদেশ ছোট ছোট ঝুপড়িসদৃশ ঘর তৈরি করে যেসব মানুষ বসবাস করছে টিলা ধ্বংসের ফলে যে কোনো সময় এসব মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে এলাকার পানচাষি খাসিয়া আদিবাসীরা তাদের আদি ব্যবসা জুম চাষ প্রায় বন্ধ রেখে ভিন্ন পথে জীবিকা নির্বাহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের আদি পরিচিতি বিনষ্ট হতে চলেছে। এখন আর আগের মতো পান চাষে তারা উৎসাহী নয়।
সিলেট শহর হতে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দূরে মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এক সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর পর্যটকের আগমন হতো। প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে পর্যটকদের আগমন দিন দিন কমে যাচ্ছে।
পরিবেশ সচেতনরা এখন সৌন্দর্যের লীলাভূমি জৈন্তা, শ্রীপুর তামাবিল আর জাফলং এলাকার বাতাসে শুনতে পাচ্ছে উলঙ্গ পাহাড়গুলোর বোবা চিৎকার। পাহাড় ও টিলাগুলোকে সবুজ চাদরে ঢেকে দিয়ে তার হারানো রূপ লাবণ্য ফিরিয়ে দেয়ার সাথে পাহাড়ের কোলে বেড়ে ওঠা বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নিশ্চিত করার আকুতি শোনা যায়।
রূপ লাবণ্য হারানো এ অঞ্চলের পাহাড়গুলোর এ বোবা চিৎকার যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্নকূহরে প্রবেশ করে আর সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তবে হয়তো উলঙ্গ পাহাড় টিলাগুলো আবার ঢেকে যাবে প্রকৃতির সবুজ চাদরে। সবুজ পাহাড়ের কোলে আবার নিশ্চিন্তে বেড়ে উঠবে নানা জাতের বন্যপ্রাণী, পশু আর পাখ-পাখালির দল। এমন মনে করছেন এলাকার সচেতন নাগরিকবৃন্দ এবং পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিরা।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড়ের বোবা চিৎকার

১৭ অক্টোবর, ২০১৬
আরও পড়ুন