Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুসলিমবিরোধী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে

গুরগাঁওয়ে নামাজে বাধা দিতে বিক্ষোভ, আটক ৩০

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মুসলমানদের মসজিদ ও মালিকানাধীন সম্পত্তিতে হামলার পর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হিন্দু গোষ্ঠী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের পর এ সহিংসতা শুরু হয়। দলগুলো প্রতিবেশী বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার বিরুদ্ধে সমাবেশ করার অনুমতি না দেওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিল। এদিকে, গুরগাঁওয়ের মসজিদে নামাজ পড়ার সময় তাতে বাধা দিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। এ সময় তারা ‘বন্ধ করো, বন্ধ করো’ বলে সেøাগান দেয়। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৩০ জন কট্টরপন্থীকে আটক করা হয়েছে।

বার্ষিক হিন্দু ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার জন্য স্থাপিত একটি বিশেষ মণ্ডপে কুরআন অবমাননা করা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পরে এই মাসের শুরুতে বাংলাদেশে অন্তত সাতজন নিহত হয়। মন্দির অপবিত্র করা ও হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ত্রিপুরা বাংলাদেশের তিন দিক দিয়ে ঘেরা এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য আসামের সাথে একটি পাতলা করিডোর দ্বারা সংযুক্ত। ২৫ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের পর ২০১৮ সাল থেকে রাজ্যটি ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পরিচালনা করছে। গত চার দিনে উত্তর ত্রিপুরা জেলা থেকে ১০টিরও বেশি ধর্মীয় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সীমান্তবর্তী শহর পানিসাগরে মঙ্গলবার রাতের সহিংসতার পরে কর্তৃপক্ষ বড় জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যেখানে একটি মসজিদ এবং মুসলমানদের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন, বিজেপির ঘনিষ্ঠ মিত্র বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর একটি সমাবেশ থেকে এ হামলা হয় পানিসাগরের একজন সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক সৌভিক দে বলেন, প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লোক সমাবেশে অংশ নিয়েছিল। দে বলেন, ‘র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারী কিছু ভিএইচপি কর্মী চামটিলা এলাকায় একটি মসজিদ ভাংচুর করে। পরে, প্রথম ঘটনার থেকে প্রায় ৮০০ গজ দূরে রোয়া বাজার এলাকায় তিনটি বাড়ি ও তিনটি দোকান ভাংচুর করা হয় এবং দুটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়’।

পুলিশ জানিয়েছে, ভাংচুর করা দোকান এবং বাড়িগুলো মুসলমানদের এবং তাদের একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরেকটি কট্টরপন্থী হিন্দু গোষ্ঠী বজরং দলের স্থানীয় নেতা নারায়ণ দাস দাবি করেছেন, মসজিদের সামনে কিছু যুবক তাদের গালাগাল করেছে এবং তলোয়ার ছুঁড়েছে। এটি এমন অভিযোগ যা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায় না। ত্রিপুরা পুলিশ টুইট করেছে যে, ‘কিছু লোক গুজব ছড়াচ্ছে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে উস্কানিমূলক বার্তা প্রচার করছে’ এবং মানুষকে শান্তি বজায় রাখার জন্য আবেদন করেছে।

গত সপ্তাহে মুসলিম সংগঠন জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দের রাজ্য ইউনিট অভিযোগ করেছিল যে, জনতা মুসলিম অধ্যুষিত মসজিদ এবং আশেপাশের এলাকায় আক্রমণ করেছে। ত্রিপুরা পুলিশ জানিয়েছে যে, তারা রাজ্যের ১৫০টিরও বেশি মসজিদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। ত্রিপুরার ৪২ লাখ জনসংখ্যার ৯ শতাংশেরও কম মুসলিম।

ত্রিপুরা-ভিত্তিক লেখক বিকাশ চৌধুরী বলেছেন, ‘যদিও ত্রিপুরার জনসংখ্যার একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনকার বাংলাদেশ থেকে হিন্দু উদ্বাস্তু, তবে প্রতিবেশী দেশে পূর্ববর্তী ধর্মীয় বিশৃঙ্খলার পর এখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি’। বিরোধী দলগুলো মুসলিমদের ওপর হামলার জন্য বিজেপির ঘনিষ্ঠ ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফ্রেঞ্জ এলিমেন্টস’কে দায়ী করেছে। আঞ্চলিক তৃণমূল কংগ্রেস দলের একজন সাংসদ সুস্মিতা দেব বিবিসিকে বলেছেন যে, বিজেপি বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতাকে নভেম্বরে রাজ্যের পৌর নির্বাচনের আগে ভোটারদের ‘মেরুকরণ’ করতে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। ত্রিপুরার সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী রতনলাল নাথকে ফোন করলেও সাড়া মেলেনি। কিন্তু একজন বিজেপি নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে, কারণ তিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলার জন্য অনুমোদিত নন, বিবিসিকে বলেছেন যে, বিরোধীদের ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ব্যাপক হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা থেকে রাজনৈতিক পুঁজি করার চেষ্টা উচিত নয়’। তিনি দাবি করেছেন যে, ‘রাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যা করা দরকার তা করেছে’।

এদিকে, গুরগাঁওয়ে গত সপ্তাহেও নামাজ চলাকালীন একদল কট্টরপন্থী হিন্দুকে ‘জয় শ্রীরাম’ েস্লাগান দিতে দেখা গিয়েছিল। চলতি সপ্তাহে ফের নামাজে বিঘ্ন ঘটানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুলিশ। আপাতত পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে বলেই জানিয়েছেন গুরগাঁওয়ের পুলিশ কর্মকর্তা। জানা গিয়েছে, গুরগাঁওয়ের সেক্টর ৪৭ এলাকায় এক মসজিদে নামাজ চলাকালীন সেখানে হাজির হয় কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। তাদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা ছিল ‘গুরগাঁও প্রশাসন ঘুম থেকে জেগে ওঠো।’ পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে গুরগাঁওয়ের এসডিএম অনীতা চৌধুরী এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন এই এলাকা শান্তিপূর্ণই রয়েছে। যারা নামাজে বাধা সৃষ্টি করছিল তাদের আটক করা হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই তাদের সম্পর্কে খবর আসছিল। অবশেষে আজ পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হল।’
ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের ভিডিও ফুটেজ। সেখানে দেখা গিয়েছে তাদের ‘বন্ধ করো, বন্ধ করো’ সেøাগান দিতে। তাদের হাতে ছিল নানা রকম পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড। অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক পরা ছিল না। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছেন পুলিশকর্মীরা। কট্টরপন্থীদের ঠেকাতে পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। এই নিয়ে টানা তিন সপ্তাহ ওই এলাকায় নামাজ পড়ার সময় এই ধরনের ঘটনা ঘটল। গত সপ্তাহে সেক্টর ১২-এ অঞ্চলে কট্টরপন্থীদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে দেখা গিয়েছে। গত তিন বছর ধরে নামাজ পড়তে আসা এক ব্যক্তির দাবি, কয়েক সপ্তাহ ধরেই এমন হচ্ছে। আসলে এখানে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে কিছু মানুষ। সূত্র: ডন, বিবিসি নিউজ।



 

Show all comments
  • Imran Sopkipar ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১:৩৬ এএম says : 0
    আল্লাহ তোদের বিচার করবে
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Sopkipar ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১:৪০ এএম says : 0
    ত্রিপুরায় মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা হচ্ছে কিন্তু কেউ কোনো কথা বলে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Rashadujaman ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
    ভারতের মিডিয়া বাংলাদেশ নিয়ে লাফালাফি করলেও নিজ দেশের খবর রাখে না।
    Total Reply(0) Reply
  • নিজাম ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
    সাম্প্রদায়িক ভারত প্রতিবেশীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ন।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১:৫৫ এএম says : 0
    বিষয়টির পতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি,আমাদের দেশে সামান্য সমস্যা হয়েছে,মাত্র একদিন এই একটি দুর্ঘটনা হয়েছে,কিন্তু আমাদের প্রশাসন অতিরঞ্জিত কিছু করতে মুসলমানদের দেয় নাই,অথচ উল্টা মুসলমানদের গুলি করে হত্যা করেছে,কিন্তু আমরা বর্তমানে ত্রিপুরার যে সমস্ত কিছু দেখতেছি,আজ কয়েক দিন এই ঘটনা ঘটছে,আমরা আমাদের হিন্দু ভাইদের সাথে যাহা হয়েছে অবশ্যই আমরা আবার সবাই মিশে থাকছি,আমরা মুসলমানেরা জানি যে তারাও এই দেশের নাগরিক,তাদের অধিকার আছে তাদের ধর্ম তারা পালন করবে অবশ্যই,কিন্তু মাঝে মধ্যে এই সংসদীয় পদ্ধতি হওয়ার পর কিছু কিছু রাজনৈতিক আমলারা উসকানি দিয়ে সামান্য সমস্যা হয়,কিন্তু 1990এর আগে যখন রাষ্ট্র পতি পদ্ধতি ছিল,এবং দেশ সাধীন হওয়ার আগে পযন্ত হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে একটি ঘটনা ও দেখিনি,অথচ বর্তমান সংসদীয় পদ্ধতি আমলা তান্ত্রিক পদ্ধতি দেশে জন্ম হওয়ার পর থেকে সামান্য অশান্তি ,আমি মনে করি এই সমস্ত অশান্তির ঘটনা হিন্দু মুসলিম হবে না,যদি 72এর সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি হয়,অন্যথায় এই আমলাতান্ত্রিক চৌরাচার দলীয় সংসদীয় পদ্ধতিতে আমলারা উসকানি দিয়ে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার চেষ্টা করে যাবে,এত এব দেশে শান্তি আনতে জরুরি রাষ্ট্র পতি পদ্ধতি করা একান্ত জরুরি।ভারতে ও রাজনৈতিক আমলাদের কারনে এই সমস্ত কিছু,যাক ত্রিপুরার হিন্দুদের বলতে চাই তোমরা আমলাদের কারনে বাড়া বারি করোনা,এই গুলি ভালো না,তোমরা এই গুলি করবে ঐ খানে,আবার অঘটন ঘটবে বাংলাদেশে,তোমাদের বুজতে হবে ,এই গুলি দুই দেশের রাজনৈতিক আমলারা করে থাকে,সবাই বুঝতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ripon Ripon ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৪২ এএম says : 0
    ভারতের ত্রিপুরায় হিন্দুরা সাম্প্রদায়িক হামলা করছে মুসলমানদের উপর, ১৬ টি মসজিদে আগুন দিছে। এখন মিডিয়া কোথায়? কারা সাম্প্রদায়িক হামলা করতেছে এটা নিউজ কেন হয়না মূল ধারার নিউজ চ্যানেলে। এরা মূলত ইসলামের বিরুদ্ধে সম্প্রচারণ করে, আর অন্য সময় নিরব থাকে। [ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।]
    Total Reply(0) Reply
  • Mathew ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১:৪৬ পিএম says : 0
    বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মিডিয়ায় হইচই শুরু হয়েছিল তিলকে তাল বানিয়ে প্রচার করছিল, এখন তারা ত্রিপুরার মুসলিম নির্যাতন নিয়ে পুরোপুরি চুপ। এখন কোথায় আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক অ সহিষ্ণুতায় উস্কানি দাতা দালাল মিডিয়াগুলো? কোথায় সনাতনীদের পদ লেহনকারী ইবলিশের অনুচর তথাকথিত সুশীল, প্রগতিবাদী ও নাস্তিক গোষ্ঠী? এদের চোখে কি ছানি পড়েছে? কেন এরা ভারতের আসাম ও ত্রিপুরায় মুসলিমদের উপর নিষ্ঠুর অত্যাচার, ঘরবাড়ি, দোকান-পাট ও মসজিদগুলোতে অগ্নি সংযোগ ও লুণ্ঠনের ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে? অথচ এ খবিসগুলো বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সরকারী নানা পদক্ষেপ স্বত্বেও রাতদিন হিন্দু তোষণে ব্যস্ত থাকে আর সোশ্যাল মিডিয়া ও টিভি চ্যানেলে বসে চেঁচামেচি করে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুসলিমবিরোধী সহিংসতা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ