মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মুসলমানদের মসজিদ ও মালিকানাধীন সম্পত্তিতে হামলার পর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হিন্দু গোষ্ঠী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের পর এ সহিংসতা শুরু হয়। দলগুলো প্রতিবেশী বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার বিরুদ্ধে সমাবেশ করার অনুমতি না দেওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিল। এদিকে, গুরগাঁওয়ের মসজিদে নামাজ পড়ার সময় তাতে বাধা দিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। এ সময় তারা ‘বন্ধ করো, বন্ধ করো’ বলে সেøাগান দেয়। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৩০ জন কট্টরপন্থীকে আটক করা হয়েছে।
বার্ষিক হিন্দু ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার জন্য স্থাপিত একটি বিশেষ মণ্ডপে কুরআন অবমাননা করা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পরে এই মাসের শুরুতে বাংলাদেশে অন্তত সাতজন নিহত হয়। মন্দির অপবিত্র করা ও হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ত্রিপুরা বাংলাদেশের তিন দিক দিয়ে ঘেরা এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য আসামের সাথে একটি পাতলা করিডোর দ্বারা সংযুক্ত। ২৫ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের পর ২০১৮ সাল থেকে রাজ্যটি ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পরিচালনা করছে। গত চার দিনে উত্তর ত্রিপুরা জেলা থেকে ১০টিরও বেশি ধর্মীয় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সীমান্তবর্তী শহর পানিসাগরে মঙ্গলবার রাতের সহিংসতার পরে কর্তৃপক্ষ বড় জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যেখানে একটি মসজিদ এবং মুসলমানদের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন, বিজেপির ঘনিষ্ঠ মিত্র বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর একটি সমাবেশ থেকে এ হামলা হয় পানিসাগরের একজন সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক সৌভিক দে বলেন, প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লোক সমাবেশে অংশ নিয়েছিল। দে বলেন, ‘র্যালিতে অংশগ্রহণকারী কিছু ভিএইচপি কর্মী চামটিলা এলাকায় একটি মসজিদ ভাংচুর করে। পরে, প্রথম ঘটনার থেকে প্রায় ৮০০ গজ দূরে রোয়া বাজার এলাকায় তিনটি বাড়ি ও তিনটি দোকান ভাংচুর করা হয় এবং দুটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়’।
পুলিশ জানিয়েছে, ভাংচুর করা দোকান এবং বাড়িগুলো মুসলমানদের এবং তাদের একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরেকটি কট্টরপন্থী হিন্দু গোষ্ঠী বজরং দলের স্থানীয় নেতা নারায়ণ দাস দাবি করেছেন, মসজিদের সামনে কিছু যুবক তাদের গালাগাল করেছে এবং তলোয়ার ছুঁড়েছে। এটি এমন অভিযোগ যা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায় না। ত্রিপুরা পুলিশ টুইট করেছে যে, ‘কিছু লোক গুজব ছড়াচ্ছে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে উস্কানিমূলক বার্তা প্রচার করছে’ এবং মানুষকে শান্তি বজায় রাখার জন্য আবেদন করেছে।
গত সপ্তাহে মুসলিম সংগঠন জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দের রাজ্য ইউনিট অভিযোগ করেছিল যে, জনতা মুসলিম অধ্যুষিত মসজিদ এবং আশেপাশের এলাকায় আক্রমণ করেছে। ত্রিপুরা পুলিশ জানিয়েছে যে, তারা রাজ্যের ১৫০টিরও বেশি মসজিদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। ত্রিপুরার ৪২ লাখ জনসংখ্যার ৯ শতাংশেরও কম মুসলিম।
ত্রিপুরা-ভিত্তিক লেখক বিকাশ চৌধুরী বলেছেন, ‘যদিও ত্রিপুরার জনসংখ্যার একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনকার বাংলাদেশ থেকে হিন্দু উদ্বাস্তু, তবে প্রতিবেশী দেশে পূর্ববর্তী ধর্মীয় বিশৃঙ্খলার পর এখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি’। বিরোধী দলগুলো মুসলিমদের ওপর হামলার জন্য বিজেপির ঘনিষ্ঠ ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফ্রেঞ্জ এলিমেন্টস’কে দায়ী করেছে। আঞ্চলিক তৃণমূল কংগ্রেস দলের একজন সাংসদ সুস্মিতা দেব বিবিসিকে বলেছেন যে, বিজেপি বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতাকে নভেম্বরে রাজ্যের পৌর নির্বাচনের আগে ভোটারদের ‘মেরুকরণ’ করতে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। ত্রিপুরার সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী রতনলাল নাথকে ফোন করলেও সাড়া মেলেনি। কিন্তু একজন বিজেপি নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে, কারণ তিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলার জন্য অনুমোদিত নন, বিবিসিকে বলেছেন যে, বিরোধীদের ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ব্যাপক হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা থেকে রাজনৈতিক পুঁজি করার চেষ্টা উচিত নয়’। তিনি দাবি করেছেন যে, ‘রাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যা করা দরকার তা করেছে’।
এদিকে, গুরগাঁওয়ে গত সপ্তাহেও নামাজ চলাকালীন একদল কট্টরপন্থী হিন্দুকে ‘জয় শ্রীরাম’ েস্লাগান দিতে দেখা গিয়েছিল। চলতি সপ্তাহে ফের নামাজে বিঘ্ন ঘটানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুলিশ। আপাতত পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে বলেই জানিয়েছেন গুরগাঁওয়ের পুলিশ কর্মকর্তা। জানা গিয়েছে, গুরগাঁওয়ের সেক্টর ৪৭ এলাকায় এক মসজিদে নামাজ চলাকালীন সেখানে হাজির হয় কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। তাদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা ছিল ‘গুরগাঁও প্রশাসন ঘুম থেকে জেগে ওঠো।’ পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে গুরগাঁওয়ের এসডিএম অনীতা চৌধুরী এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন এই এলাকা শান্তিপূর্ণই রয়েছে। যারা নামাজে বাধা সৃষ্টি করছিল তাদের আটক করা হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই তাদের সম্পর্কে খবর আসছিল। অবশেষে আজ পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হল।’
ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের ভিডিও ফুটেজ। সেখানে দেখা গিয়েছে তাদের ‘বন্ধ করো, বন্ধ করো’ সেøাগান দিতে। তাদের হাতে ছিল নানা রকম পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড। অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক পরা ছিল না। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছেন পুলিশকর্মীরা। কট্টরপন্থীদের ঠেকাতে পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। এই নিয়ে টানা তিন সপ্তাহ ওই এলাকায় নামাজ পড়ার সময় এই ধরনের ঘটনা ঘটল। গত সপ্তাহে সেক্টর ১২-এ অঞ্চলে কট্টরপন্থীদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে দেখা গিয়েছে। গত তিন বছর ধরে নামাজ পড়তে আসা এক ব্যক্তির দাবি, কয়েক সপ্তাহ ধরেই এমন হচ্ছে। আসলে এখানে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে কিছু মানুষ। সূত্র: ডন, বিবিসি নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।