নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী, চট্টগ্রাম থেকে : ১০ মাস পর ওয়ানডে প্রত্যাবর্তনে হেড কোচ হাতুরুসিংহের কপালে পড়েনি দুর্ভাবনার ভাঁজ। কারণ, সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সঙ্গে দারুণ মানানসই বাংলাদেশ দল। ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আসর প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে তারকা ক্রিকেটারদের সবার অংশগ্রহণ এবং তাদের প্রত্যাশিত পারফরমেন্সও এই ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের পূর্ব প্রস্তুতিই ছিল বাংলাদেশ দলের। ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘপরিসরের ম্যাচ না খেলেই টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের ৪র্থ শীর্ষ দলটির সঙ্গে অবতীর্ণ হতে হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের! যে দলটি গত ৯ মাসে ১০টি টেস্ট খেলে এখন বাংলাদেশ সফরে। সে কারণেই ১৪ মাস পর টেস্টে ফিরতে যখন প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ দল, তখন আশাব্যঞ্জক প্রত্যাশার কথা শোনাতে পারছেন না হেড কোচ হাতুরুসিংহেÑ ‘অনেক দিন ধরেই আমরা লংগার ভার্সন ক্রিকেট খেলছি না। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও নয়। দলের মূল খেলোয়াড়রা এই মওসুমে জাতীয় লীগে পর্যন্ত খেলেনি। ভিন্ন ভিন্ন ফরমেটে প্রচুর ম্যাচ না খেলায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জে পড়তে হচ্ছে।’
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভিন্ন ফরমেটে ফিরে টেস্ট খেলায় মনস্থির করাটাই এখন শিষ্যদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ,এমনটাই মনে করছেন হাতুরুসিংহেÑ‘আমি কোন অজুহাত দিতে চাই না। বড় ফরমেটের ম্যাচই হোক, কিংবা ছোট ফরমেটের ম্যাচÑ কে কিভাবে মানসিকভাবে প্রস্তুত হবে,তা তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্যাটসম্যান হিসেবে ম্যাচে দ্রæততম সময়ের মধ্যে খাপ খাইয়ে নেয়াটাই বড় কথা। অন্যদিকে বোলারদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অনবরত একই লেন্থে লম্বা সময় বল করা।’
ওডিআই থেকে টেস্টে ফিরে হাতুরুসিংহের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কম্বিনেশন। টেস্ট জিততে হলে প্রতিপক্ষকে ২ বার অল আউট করতে হবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে ২০ উইকেট নেয়ার মতো বোলিং ইউনিট কই? সর্বশেষ টেস্টের একাদশে থাকা পেস বোলার মুস্তাফিজুর কাঁধের সফল অপারেশন শেষে এখন পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় আছেন, পেস বোলার শহীদ সম্প্রতি জাতীয় লীগের খেলা চলাকালে পাঁজরের পেশিতে পেয়েছেন টান। রুবেল,আল আমিন এখন আপ টু দ্য মার্কে নেই। এখানেই যতো দুর্ভাবনা হাতুরুসিংহেরÑ‘ওয়ানডে ক্রিকেটের সাফল্যের সঙ্গে টেস্টকে মেলানো কঠিন। আমরা ওয়ানডে ক্রিকেটে ভাল করছি,কারণ এই ফরমেটের ক্রিকেটে আমাদের কম্বিনেশনটা যথার্থই আছে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে এখনো সঠিক কম্বিনেশনই খুঁজে পাইনি। টেস্টে ২০ উইকেট নেয়ার মতো একদল বোলার খুঁজছি। আমরা বেশ ক’জন ক্রিকেটারকে ইনজুরির কারণে হারিয়েছি। আমরা জানি না ফাস্ট বোলাররা এখন কি পর্যায়ে আছে। তাই আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হচ্ছে।’
দ্বিতীয় ২ দিনের ম্যাচে তাসকিনকে বিসিবি একাদশে রাখায় চট্টগ্রাম টেস্টে এই পেস বোলারের টেস্ট অভিষেকের সম্ভাবনা দেখেছেন অনেকেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে এই পেস বোলারের দ্বিতীয় স্পেলকে প্রশংসা পত্র দিয়েছেন মাশরাফি। তাতে জোড়াতালি দিয়ে পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট জোড়াতালি দিয়ে মেরামতের একটা সম্ভাবনা দেখেছেন যারা, তাদের সে ধারণা যে অমূলক, তা পরিষ্কার করেছেন হাতুরুসিংহে। ৩ বছর ৮ মাস যে ছেলেটি লংগার ভার্সন ক্রিকেটের বাইরে, ছোট ছোট স্পেলে বল করতে অভ্যস্ত সেই ছেলেটিকে টেস্টে নামিয়ে দিয়ে তার ক্যারিয়ার ধ্বংস করার পক্ষপাতী নন হাতুরুসিংহেÑ‘সে (তাসকিন) কি চারদিনের কোন ম্যাচ খেলেছে? তারপরও তার যাদু দেখার কথা চিন্তা করছে জনগণ। সেও মানুষ। যে তার সমগ্র জীবনে খেলেনি ৪ দিনের ম্যাচ, চারদিনের মাচে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করেনি, ১৫ ওভার বল করা তার জন্য একেবারেই নতুন। আমি এমন কারো ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিতে পারি না।’
টেস্ট ক্রিকেটে লেগ স্পিনারের প্রয়োজন অনুভব করে জুবায়ের হোসেন লিখনকে আবিষ্কার করেছিলেন ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজকে সামনে রেখে। ৬ টেস্টে ১৬ উইকেটে লিখন আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন কোচকে। অথচ, সেই লিখন ক্রমেই যাচ্ছেন হারিয়ে। দলে তাকে সেভাবে ব্যবহারই করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে আবাহনীর প্রথম জয়ে ৬ উইকেট জুবায়েরেরÑ সেই জুবায়েরই কিনা আবাহনীতে খেলতে পারেননি নিয়মিত, সব মিলে ৭ ম্যাচে ১৩ উইকেটে থেকেছেন সন্তুষ্ট। জাতীয় লীগের চলমান আসরে ঢাকা মেট্রোর হয়ে বরিশালের বিপক্ষে ম্যাচে কাটিয়েছেন উইকেটহীন। যাকে দলে পেতে এক সময় থাকতেন উদগ্রীব, সেই ছেলেটি দলে ফিরতে পারছেন না এখন। এটাই ভাবাচ্ছে কোচকেÑ‘আমরা একজন লেগ স্পিনার খুঁজছি, যে উইকেট নিতে পারবে। কিন্তু সে ¤øান হয়েছে। অন্য স্পিনার যারা আছে, তারা যথেষ্ট ভাল। তবে ২০ উইকেট নেয়ার মতো কম্বিনেশন নেই আমাদের দলে। আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটার থাকতেও তাকে নিয়ে চেষ্টা করতে পারছি না, এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বড়ই দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা আসলে জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটারদের নিয়ে চেষ্টা করছি।’
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দল যখন অনুশীলন করছে, তখন লেগ স্পিনার জুবায়েরের জন্য বিলাপ করছেন হাতুরুসিংহেÑ‘তার স্কিল ছিল, শুরুতেই দেখেছি তা। আমাদের জন্য ম্যাচ জিতিয়েছে সে। দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় ম্যাচে টেস্টে সে ৫ উইকেট পেয়েছে। ভারতের বিপক্ষে টেস্টে সে বড় দু’টি উইকেট পেয়েছে। তার জন্য যে পরিমাণ সময় এবং শক্তি ক্ষয় করেছি, তা সে উপভোগ করতে না পারায় আমি খুবই হতাশ।’ প্রশ্ন উঠছে, যে ছেলেটিকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না দেখে তৎকালীন প্রধান নির্বাচকের দল নির্বাচন কৌশল নিয়ে উঠিয়েছেন প্রশ্ন, সেই জুবায়েরের সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে তার উপর থেকে মন উঠে গেছে কোচের?
টেস্ট সিরিজে অসম্ভব কিছু’র স্বপ্ন দেখছেন না হাতুরুসিংহে। অবিশ্বাস্য কিছুর স্বপ্ন দেখাতে চাইছেন না তিনিÑ‘হাতে অস্ত্র না পেয়ে যুদ্ধ জয়ের পরিকল্পনা করা যায় না। তাই আমাদের কাছে কাকতালীয় কিছুর আশা করা ঠিক নয়। যদি আমরা ম্যাচটি জিততে পারি, তা হবে দারুণ এবং ভাল। আমরা সে পথেই আছি। এটাই আমাদেরকে প্রচুর আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। আমার কাছে কি নেই, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি না। আমার হাতে যা আছে,তার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।