নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী, চট্টগ্রাম থেকে : প্রথম টেস্ট জয়ের এক যুগ পূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে এখন বাংলাদেশ। অপেক্ষা মাত্র ৩ মাস। অথচ, ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারি যে ভেন্যুতে টেস্টে প্রথম বিজয়বার্তা বিশ্বকে দিয়েছে বাংলাদেশ দল, সেই এম এ আজিজ স্টেডিয়াম মুছে ফেলেছে ক্রিকেটের স্মৃতি চিহ্ন! টেস্ট ভেন্যুর স্বীকৃতি পেতে প্রয়োজন উন্নত প্রেস বক্স, কমেন্ট্রি বক্স, ম্যাচ রেফারি রুম। প্লেয়ার্স ড্রেসিং রুমের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প পথ ছিল না খোলা। পূর্ব পাকিস্তান দলের হয়ে পাকিস্তান আমলে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট খেলেছেন বলে পূর্ব সম্পর্কের কারনে ম্যাচ রেফারী নাসিমুল গনি এসব সুবিধা নিশ্চিত করার আগেই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে টেস্ট ভেন্যুর স্বীকৃতি দিতে আইসিসিকে করেছেন সুপারিশ। ২০০১ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট আয়োজনে দেশের দ্বিতীয় টেস্ট ভেন্যুর যাত্রাটি অবশ্য সহজ ছিল না। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং সংস্কারে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) যখন করেছে অপারগতা প্রকাশ, তখন সে সময়ের সিজেকেএস স্থানীয় ২ পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানী গ্রæপ এবং পেডরোলো ওয়াটার পাম্পের আর্থিক সহায়তায় দ্রæততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং সংস্কার করেছে। অথচ, কি জানেন ২০০৬ সালে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পথচলায় এখন ব্রাত্য ৮ টেস্ট ১০ ওয়ানডের ভেন্যু এম এ আজিজ স্টেডিয়াম!
পুরোনো প্রেসবক্সের লোহার সিঁড়িতে ধরেছে মরিচা। পরিত্যক্ত কক্ষ এখন সেই প্রেস বক্সটি। প্যাভিলিয়ন ভবনের তিন তলায় সিজেকেএস কনভেনশন হলকে অস্থায়ী ভিত্তিতে ২টি প্রস্তুতি ম্যাচের প্রেসবক্সের জন্য দেয়া হয়েছে বরাদ্দ! এক সময়ে যে স্টেডিয়ামের মাঠে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছাড়াও বৃষ্টি বড় ধরনের বাধা হতে পারেনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনেÑমাত্র ক’দিনের প্রস্তুতিতে ক্রিকেট মাঠ তৈরি হয়ে যেতো, মাঠের সøব ছিল গর্ব করার মতো। গতকাল ভোরে কিছুক্ষণের ঝির ঝির বৃষ্টিতে সেই মাঠেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিসিবি একাদশের প্রথম দুই দিনের অনুশীলন ম্যাচের প্রথম দিনের খেলা হয়েছে পরিত্যক্ত! তাও আবার সকালে মাঠ পরিদর্শন করে ভেজা আউট ফিল্ডে ফিল্ডিং করা সম্ভব নয় বলে ইংল্যান্ড টীম ম্যানেজমেন্ট জানিয়ে দিয়েছে তাদের অবস্থান ম্যাচ রেফারিকে! মাত্র ক’দিনের প্রস্তুতিতে পিচ নিয়ে অসন্তোষ নেই দু’দলের কারো, এমনকি গ্র্যাউন্ডসম্যানরাও ইয়েস কার্ড দিয়েছেন পিচকে। তবে আউট ফিল্ড নিয়েই যতোসব অসন্তোষÑ গতকাল সারা দিন প্রচÐ রোদের পরও ঘাসে জমে থাকা পানি শুকায়নি! জানেন, মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য আধুনিক ড্রেনেজ সুবিধা নেই বলে মাঠকর্মীরা মাঠের ভেতরের পানি নিষ্কাশনে সনাতনী পদ্ধতিতে ২৫টির মত নালা তৈরি করেছে!
ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলশ ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) টেস্ট সিরিজের আগে একটির পরিবর্তে ২টি অনুশীলন ম্যাচ চেয়ে নিয়েছে বিসিবি’র কাছ থেকে। তাদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে গত আগস্টেই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ২ দিনের ২টি অনুশীলন ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত পাকা করেছে বিসিবি। অথচ, ২ মাস সময়কে কাজে লাগাতে পারেনি বিসিবি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ফুটবলের আসর গত ৪ আগস্ট শেষ হওয়ার পর পর পিচের কাজে হাত দিতে পেরেছে ঠিকই, তবে আউট ফিল্ডের কাজে হাত দিয়েছে মাঠ কর্মীরা ১৩ সেপ্টেম্বর। বন ঘাসে ছেয়ে পড়া মাঠের পূর্ব প্রান্তের ঘাস উপড়ে ফেলতেই নাকি লেগে গেছে ৮দিন। এমন তথ্য দিয়েছেন সহকারী কিউরেটর আবদুল মতিন। চট্টগ্রামও কক্সবাজারের তিনটি ভেন্যুর কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু দিয়েছেন আরো বিস্ময়কর তথ্যÑ‘যখন মাঠটি বুঝে পেলাম,তখন কোথাও কোথাও ঘাসের উচ্চতা ছিল এক হাত। মাঠটি এতোটাই নরম যে, এখানে নিয়মিত পরিচর্যা প্রায় অসম্ভব।’ মাঠের বরাদ্দ বিসিবি পেয়েও কাজে হাত দিতে এতো বিলম্বের কারণ বিপিএল পরবর্তী সিজেকেএস অনূর্ধ্ব-১২ একাডেমী কাপ আয়োজন। ২৬ আগস্ট থেবে শুরু হয়ে যা শেষ হয়েছে ১৩ সেপ্টেম্বর। বৃষ্টিও মাঠকর্মীদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টেস্ট ভেন্যুতে প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজন অসম্ভব বলেই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা থাকার পরও দ্বিতীয় ভেন্যুতে ২টি প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বিসিবিকে। তবে বিসিবি-সিজেকেএস সুসম্পর্ক এখন কতোটা বিদ্যমান, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে সিজেকেএস’র দাবিতেই কিন্তু ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বিপিএল’র চট্টগ্রাম পর্বের ম্যাচ হয়েছে এই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে! এ বছরের জানুয়ারিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ৩টি ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়েছে বন্দরনগরীর প্রাণকেন্দ্রে থাকা এই স্টেডিয়ামেই! অথচ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের রেকর্ড স্কোরের (৩৭১/৩) ম্যাচে প্রশংসিত দেশের দ্বিতীয় টেস্ট ভেন্যুটি মাত্র ৮ মাসেই হারিয়েছে রূপ! যে মাঠটিকে এক সময় নিয়মিত পরিচর্যা করতো বিসিবি, সেই মাঠে এখন জাতীয় লীগের খেলা পর্যন্ত আয়োজনে অপরাগতা প্রকাশ করে বিসিবি।
এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ঘেঁষে নির্মিত হোটেল রেডিসনে দল দু’টির আবাসন। চাইলেই ক’পা হেঁটে হোটেল থেকে মাঠে এবং মাঠ থেকে হোটেলে আসা-যাওয়া সম্ভব। এ কারণেই গতকাল মাঠের পূর্বাভাস পেয়ে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম মুখো হয়নি ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। সকাল ১১টায় ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষনার খবর শুনে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে করেছে সফরকারী দলটি অনুশীলন। ২ দিনের প্রথম অনুশীলন ম্যাচ নেমে এসেছে একদিনে। আজ লাল বলে সাদা জার্সিতে খেলা হবে,দু’প্রান্তে যথারীতি থাকছে সাদা রঙের সাইট স্ক্রিন। তবে দীর্ঘপরিসর ম্যাচের আবহে ম্যাচটি হবে একদিবসীয়। দু’দলের ইনিংস হবে ৪৫ ওভার করে। তাতে যতোটা না ক্ষতি হয়েছে ইংল্যান্ড দলের, তার চেয়ে ক্ষতিটা হয়েছে বাংলাদেশ দলের। মাশরাফি এবং নাসির ঢাকায় ফিরে যাওয়ায় টেস্ট একাদশ নির্বাচনে বিসিবি একাদশের অন্ততঃ দু’টি পজিশনের দিকে চোখ রাখতে হচ্ছে নির্বাচকদেরÑসৌম্য, মোসাদ্দেক, সাব্বির, শাহরিয়ার নাফিস, রুবেল, শুভাগতহোমদের সেই পরীক্ষাটাই যে প্রথম ম্যাচে নিতে পারলেন না তারা। অফ ফর্মের কারণে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচ দর্শকের কাতারে থাকার কষ্টটা লাঘবে অনুশীলন ম্যাচকে নিয়েছিলেন বেছে সৌম্য সরকার, টেস্টে দলে থাকার নিশ্চয়তায় যে পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলেন, গতকাল নির্বাচকদের সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণই যে হতে পারেননি তিনি। সেই আক্ষেপটা করেছেন সৌম্যÑ‘বিসিবি একাদশে যারা আছেন, তাদের বেশিরভাগই জাতীয় লিগে খেলছে। আমরা যারা জাতীয় দলে ছিলাম তাদের জন্য এই ম্যাচটা খেলার যে সুযোগ ছিল, সেখানে একটা দিন চলে গেছে। আরেকটা দিন আছে। ৯০ ওভার বাকি আছে। তবে ব্যাটিং করার সুযোগ পেলে আমার জন্য ভালো হতো।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।