মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে সীমিত ক্ষমতা থাকলেও অধিকাংশ থাই নাগরিক তাকে প্রায় ঈশ্বরের মতো ক্ষমতাসম্পন্ন বলে মনে করতো
ইনকিলাব ডেস্ক : থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজ ছিলেন বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘদিন সিংহাসনে থাকা রাজা। তাঁর শাসনামলে বহুবার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে এবং থাই জনগণ তাঁকে দেখেছেন দেশটির জন্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে। তিনি রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকলেও দেশের চরম উত্তেজনাকর রাজনৈতিক পরিস্থিতির সময় উত্তেজনা প্রশমন করতে হস্তক্ষেপ করেছেন। সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে তাঁর সীমিত ক্ষমতা থাকলেও অধিকাংশ থাই নাগরিক তাকে প্রায় ঈশ্বরের ক্ষমতাসম্পন্ন বলে মনে করে। ভূমিবল আদুলিয়াদের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যর কেম্ব্রিজ শহরে ১৯২৭ সালের ৫ ডিসেম্বর। রাজপ্রাসাদের বিবৃতিতে তাঁর বয়স ৮৯ বছর বলে জানানো হয়েছে। এর কারণ ওই এলাকার বেশ কিছু দেশের মত থাইল্যান্ডেও বয়সের হিসাব করা হয় ভিন্নভাবে। সেখানে শিশু মাতৃগর্ভে থাকার সময়টাও বয়সের হিসাবে ধরে সদ্যোজাত শিশুর বয়স এক বছর ধরে হিসাব করা হয়। প্রয়াত রাজার জন্মের সময় তাঁর পিতা প্রিন্স মাহিদোল আদুলিয়াদে হার্ভাডে ছাত্র ছিলেন। পরিবার পরে ফিরে আসেন থাইল্যান্ডে এবং সেখানেই ভূমিবল যখন দুবছরের শিশু তখন মারা যান তাঁর পিতা। তাঁর মা তখন যান সুইজারল্যান্ডে এবং সেখানেই যুবরাজ লেখাপড়া করেন। তরুণ বয়সে ছবি তোলা, খেলাধুলা, স্যাক্সোফোনে সঙ্গীত সৃষ্টি, ছবি আঁকা ও লেখার মত নানা শখ ছিল তাঁর। ১৯৩২ সালে থাইল্যান্ডে রাজার শাসনের অবসান ঘটলে থাই রাজতন্ত্রের শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৯৩৫ সালে ভূমিবলের চাচা রাজা প্রজাধিপোক সিংহাসন ত্যাগ করলে রাজপরিবারের ক্ষমতা আরও হ্রাস পায়। সিংহাসনে বসেন ভূমিবলের ভাই আনন্দ তখন তাঁর বয়স মাত্র নয়। ১৯৪৬ সালে রাজপ্রাসাদে রহস্যজনক এক গুলির ঘটনায় রাজা আনন্দ মারা যান। সিংহাসনে বসেন ভূমিবল- তখন তাঁর বয়স ১৮। তাঁর ভাবী স্ত্রী সিরিকিতের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় প্যারিসে বেড়ানোর সময়। সিরিকিত ছিলেন সেসময় ফ্রান্সে থাই রাষ্ট্রদূতের মেয়ে। তাঁদের বিয়ে হয় ১৯৫০ সালের ২৮ এপ্রিল। তাঁর শাসনামলের প্রথম সাত বছর থাইল্যান্ডে ক্ষমতায় ছিল সামরিক শাসক, এবং রাজা ছিলেন নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান। ১৯৫৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেনারেল সারিত ধানারাজাতা ক্ষমতা গ্রহণ করেন। রাজা তাকে রাজধানীর রক্ষক হিসাবে ঘোষণা করেন। সারিতের একনায়ক শাসনামলে রাজা ভূমিবল রাজতন্ত্রের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সক্রিয় হন। সারিত পুরনো প্রথা আবার ফিরিয়ে আনেন যে প্রথা অনুযায়ী রাজার সামনে মানুষের মাথা তুলে হাঁটা নিষিদ্ধ করা হয়- বিধান দেওয়া হয় রাজার সামনে মানুষকে মাথা নত করে হামা দিতে হবে। ক্ষমতাচ্যুতি : ১৯৭৩ সালে ভূমিবল থাই রাজনীতিতে নাটকীয়ভাবে হস্তক্ষেপ করেন। এ সময় গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীদের ওপর সৈন্যরা গুলি চালায়। বিক্ষোভকারীদের রাজপ্রাসাদে আশ্রয় নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এই পদক্ষেপের ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর কম্যুনিস্ট সমর্থন বাড়ার পটভূমিতে রাজা আধাসামরিক বাহিনীর হাতে বামপন্থীদের নির্যাতন ঠেকাতে ব্যর্থ হন। সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চো এর পর আরও হয়েছে। ১৯৮১ সালে একদল সেনা অফিসার প্রধানমন্ত্রী প্রেম তিনসুলানন্দের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটালে রাজা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। বিদ্রোহীরা ব্যাংককের নিয়ন্ত্রণ নেয়, কিন্তু রাজার অনুগত সেনা ইউনিট আবার তা পুর্নদখল করে। তবে রাজা যেভাবে বারবার ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষ নিয়েছেন তাতে কেউ কেউ রাজার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ১৯৯২ সালেও এক সেনানায়কের অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত মানুষজনের ওপর গুলি চালানোর ব্যাপারেও রাজা হস্তক্ষেপ করেন। প্রধানমন্ত্রী থাকসিন চিনাওয়াতের শাসনামলে ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সঙ্কটের সময় রাজাকে বেশ কয়েকবার হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেটা যথাযথ হবে না বলে প্রত্যাখান করেছিলেন। মি: থাকসিন পরবর্তীকালে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা হারান। সেনাবাহিনী তাদের আনুগত্য প্রকাশ করে রাজার প্রতি। পরবর্তী বছরগুলোতে রাজার নাম ও ছবি সম্মানের সাথে গ্রহণ করে থাকসিনের পক্ষ ও বিপক্ষ দুই ক্যাম্পই। ২০০৮ সালে সারা দেশে মহাসমারোহে রাজা ভূমিবলের ৮০তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়। ২০১৪র মে মাসে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করেন জেনারেল প্রায়ুত চান-ওচা।
কয়েক মাস পর সেনা সমর্থিত সংসদ তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে। তিনি ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চলা অস্থিরতা যাতে ফিরে না আসে সে অঙ্গীকারও দেন। বিবিসি, এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।