ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মুসলিম ঈদোৎসবগুলির মধ্যে ঈদুল ফেতর ও ঈদুল আজহা- এই দুই ঈদকে প্রধান উৎসব বলে খোদ
রাসূল (সা.) এই ধরাধামে রহমত হিসেবে আগমন করেছেন। এটা শুধু মুসলমান নয় বরং বিশ্ববাসী ও সকল মাখলুকাতের জন্য আনন্দের, সৌভাগ্যের। রাসূলপাকের আগমনে সমস্ত মাখলুকাত খুশি, আনন্দিত। তাদের জন্য এরচেয়ে আর বড় নিয়ামত কী হতে পারে! আর নিয়ামত লাভের পর আনন্দিত হওয়া, খুশি প্রকাশ করা তো স্বাভাবিক।
মহানবীর আগমনকে কেন্দ্র করে তাঁর আগমনের মাসে তাঁর জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা, রবের দেয়া শ্রেষ্ঠ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে খুশি জাহির করা, শরিয়তসম্মত বিভিন্ন কার্যাবলী সম্পাদন করাই হলো ঈদ-ই মিলাদুন্নবী। এই মিলাদুন্নবী পৃথিবীর দেশে দেশে, শহরে শহরে, গ্রামে গ্রামে পালিত হয়ে থাকে। নবীকে ভালোবাসাই ঈমান। ঈমানের দাবি হলো প্রিয় নবী (সা.)’র জীবনী আলোচনার মাধ্যমে তাকে জানা, তার আনুগত্য করা।
বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশের মানুষ ধর্মের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল। ইসলামের নবী রাসূল (সা.)’র প্রতি ভালোবাসা তাদের মনের গভীর থেকেই বিদ্যমান। এই কারণে তারা রাসূল (সা.)’র আগমনের মাসে মাসব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। বিশেষ করে ১২ রবিউল আউয়ালকে কেন্দ্র করে দেশের রাজধানী ঢাকা, গুরুত্বপূর্ণ শহর চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, রংপুরসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে র্যালি, প্রিয় নবীর জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা, বিভিন্ন ধরনের ইসলামী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সাল থেকে জাতীয়ভাবে দিনটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এদিনটি গুরুত্বসহকারে পালন করে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন পক্ষকালব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মিলাদুন্নবী (সা.) ইসলামি বইমেলা, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, জাতীয় পত্রিকাসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র, মিলাদুন্নবী স্মারক প্রকাশসহ নানাবিধ আয়োজন করা হয় এ উপলক্ষে।
ভারতে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হলেও বাংলাদেশের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি। সেখানে প্রতিবছর ঝাঁকঝমকভাবে ঈদ-ই মিলাদুন্নবী পালন করা হয়। দিল্লী, লক্ষনৌ, কাশ্মির, মুম্বাইসহ বিভিন্ন শহর ও প্রদেশে ঈদ-ই মিলাদুন্নবীর মাহফিল পালিত হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গে এদিনকে নবী দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।
পাকিস্তানে যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হয়। সরকারি ও বেসরকারি ভবনসমূহে রং বেরঙের আলোকসজ্জা, ইসলাম ও মহানবী (সা.)’র শিক্ষাবিষয়ক ব্যানার রাস্তাঘাটে টানানো হয়। পাশাপাশি বড় আকারে মিলাদ মাহফিলের আসর, নাতে রাসূল পাঠ, যিকর-আযকার মাহফিল, ইবাদত-বন্দেগি ও রোযা রাখার মাধ্যমে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হয়।
মুসলিম প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়াতেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গুরুত্বসহকারে পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হয়ে থাকে। সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত দোকানপাট সেদিন বন্ধ থাকে। মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে সভা-সেমিনার, প্যানেল আলোচনা, ইসলামি অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। এসকল অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে যত্নসহকারে সম্প্রচার করা হয়।
শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ মালয়েশিয়াতেও ধর্মীয় ভাবগাম্বীর্যে পালন করা হয় ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.)। এ উপলক্ষে নেয়া হয় দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি। র্যালি, আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দোআ মাহফিল ও মিলাদুন্নবী প্যারেডের আয়োজন করা হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নানাবিধ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে থাকে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তান ও মালদ্বীপে রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হয়। মধ্য এশিয়ার দেশ কাজকিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানেও ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হয়।
ঈদে লাইলাতিন নূর নামে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’র মাহফিল পালন করা হয় ইয়ামেনের পশ্চিমাঞ্চলে। কুরআন তিলাওয়াত, রাসূল (সা.)’র জীবনী আলোচনা, যিকর-আযকার, হামদ-নাতসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয় দেশজুড়ে। এদিন সরকারি ছুটি থাকার কারণে বেশ ঝাঁকঝমকভাবে দিনটি উদযাপিত হয়।
ইরাক ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ইসলামের উর্বরভূমি ইরাকে ভিন্ন আমেজে পালন করা হয় মিলাদুন্নবী (সা.)। মসজিদে মসজিদে খতমে কুরআন, নাত, ইসলামী প্ল্যাকার্ডসহ র্যালির আয়োজন করা হয়। খতমে কুরআনকারীদের হাদিয়া প্রদান ও শিরনি বিতরণ করা হয় সেখানে।
রাসূল (সা.)’র জীবন আলোচনা, তিলাওয়াতে কুরআন, নাশিদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আরব আমিরাতেও মিলাদুন্নবী (সা.)’র অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আরবরা তাদের ঐতিহ্য অনুসারে নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এশিয়া ও ইউরোপের দেশ তুরস্কেও গুরুত্বসহকারে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হয়। মিলাদুন্নবী (সা.)’র অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মসজিদে মসজিদে মিলাদুন্নবী (সা.)’র পোস্টার সাঁটানো হয়। মসজিদসমূহে আলোচনাসভা ও যিকর-আযকারের পাশাপাশি বাসা-বাড়িতে নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মসজিদসমূহে মানুষের অত্যধিক সমাগম তাদের মধ্যে উদযাপনের উচ্ছ্বাসকে আরো বাড়িয়ে দেয়। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মিলাদুন্নবী (সা.)কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ইসলামী অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং টুইট করে আনন্দের বার্তা প্রদান করেন।
জুলুম নির্যাতনের শিকার ফিলিস্তিনেও বন্ধ নেই মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন। মাসজিদুল আকসা, জেরুজালেম, পশ্চিম তীর, নাবলুস শহরসহ গোটা ফিলিস্তিনে ফিলিস্তিনিরা অংশ নেন মিলাদুন্নবী (সা.)’র অনুষ্ঠানে। র্যালি, হামদ-নাতসহ, তাকবীর-তাহলিলে মুখরিত হয় ফিলিস্তিনের আকাশ বাতাস।
মিশরের কায়রোসহ বিভিন্ন প্রধান শহরে র্যালি ও আলোচনা সভার মাধ্যমে পবিত্র মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হয়। মিলাদুন্নবী উদযাপনে রাষ্ট্রপ্রধান, শায়খুল আযহার, গ্র্যান্ড মুফতি, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানসমূহে অংশগ্রহণ করে থাকেন। আড়ম্বরভাবে পালিত মিলাদুন্নবী (সা.) আয়োজনে নানারকমের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।