পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকার মালিকানাধীন অন্তত : ৩শ’কোটি টাকার সম্পত্তির মালিকানা হাতছাড়া হওয়ার অভিযোগ ৭ বছর ধরে ‘অনুসন্ধান’ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের পর চলছে ‘পুন:অনুসন্ধান’। অদৃশ্য কারণে ঝুলে আছে অভিযোগটির পরিণতি।
দুদক সূত্র জানায়, ১৯৬৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) ঢাকার গুলশান মডেল টাউনের ৮৩ নম্বর রোডের ৬ নম্বর প্লটটি (৪৮.৬০ শতক) পিপলস জুট মিলের নামে লিজ বরাদ্দ দেয়। খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত এ মিলটির মালিক ছিলেন প্রিন্স করিম আগা খান। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে (পিও নং-১৬/১৯৭২) অবঙ্গালি আগা খানের জুট মিল এবং প্রতিষ্ঠানের সমুদয় সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষিত হয়। একই বছর পৃথক এক আদেশে (পিও নং-২৭/১৯৭২) অবাঙ্গালিদের সম্পত্তির মধ্য থেকে কিছু মিল-কারখানা রাষ্ট্রীকরণ করা হয়। এর মধ্যে পিপলস জুট মিলটিও ছিল।
নিয়মানুসারে পিপলস জুট মিলের সম্পত্তি গুলশান মডেল টাউনের ৬ নম্বর প্লটটিও রাষ্ট্রীয়করণ হয়। জুট মিলের পক্ষে ওই বাড়িতে বসবাসকারী আবদুল আজিজকে বাড়ি খালি করে দিতে তৎকালীন ‘মিনিস্ট্রি অব পাবলিক ওয়ার্কস অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট, ঢাকা থেকে নোটিশ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে চলে যায় পিপলস জুট মিলস। মিলটির অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তির মতোই এ প্লটটি ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি’র তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ‘রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য করতে বিজেএমসির পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়।
পরে সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে খুলনা পিপলস জুট মিলের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। মামলা চলাকালে ১৯৮৮ সালে প্লটটির ওপর ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে রাজউকের কাছে একটি নকশাও জমা দেয় পিপলস জুট মিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্লটটি ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি’ গণ্য করে নকশা অনুমোদন দেয়া হয়নি।
অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে আসে, ১৯৮৫ সালের ২৮ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট অর্ডারের (৫৪ নম্বর আদেশের ৫ নম্বর ধারা) পরিত্যক্ত সম্পত্তির একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়। তাতে গুলশান মডেল টাউনের ৭৮টি বাড়িও স্থান পায়। গেজেটের ৯ নম্বর বাড়িটি ছিল এনইজি-৬ নম্বর প্লট। ১৯৮৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পূর্বতন গেজেট বাতিল করে সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করা হয়। তাতেও এ প্লটটিকে ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
এরপরও প্লটটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির আওতামুক্ত করতে পূর্ত মন্ত্রণালয় এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তি পরিচালনা বোর্ডের কাছে একাধিক আবেদন করে পিপলস জুট মিলস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্লটটি গ্রাস করতে নানা ফন্দি আটতে থাকে রাজউক সংশ্লিষ্টরা। পরে সুপরিকল্পিতভাবে ১৯৯২ সালের ১৮ মার্চ রাজউক (স্মারক নং-রাজউক/এস্টেট/৫৮৮) ‘এম.এস.জুট মিলস, খালিশপুর, খুলনার ঠিকানায় লিজ বরাদ্দ বাতিলের চিঠি পাঠায়। রাজউকের এ চিঠিতে নির্ধারিত সময়ে ইমারত নির্মাণ না করার কারণে প্লট বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। অথচ তখন ‘এম.এস. জুট মিলস’ নামক কোনো জুট মিলের অস্তিত্বই বাংলাদেশে ছিল না, এখনও নেই। প্লটটি নতুন করে বরাদ্দ দিতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে পিপলস জুট মিলের পরিবর্তে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করেন রাজউক কর্মকর্তারা।
বরাদ্দ বাতিলের চিঠিতে চেপে যাওয়া হয় পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্তির বিষয়টি। বিজেএমসির সাবেক চেয়ারম্যান মিত্র বাবু নেপথ্যে থেকে পিপলস জুট মিলের নামে ভুয়া দলিল সৃষ্টি করে অন্তত: ৩শ’কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি গ্রাস করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় দুদকের একটি অনুসন্ধানে। অথচ সরকারি গেজেট অনুযায়ী এই প্লটটি প্রথমে পরিত্যক্ত সম্পত্তি এবং পরে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।
তথ্যানুসন্ধান মতে, ১৯৬৫ সালে পিপলস জুট মিল বরাবরে প্লটটি বরাদ্দ দেয়ার আগে এটি জনৈক কমান্ডার জাহিদির নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। পরে জাহিদির বরাদ্দ বাতিল করে গুলশান মডেল টাউনের রোড-৮৩, এনইজি-৬ নম্বর প্লটটি পিপলস জুট মিলকে বরাদ্দ দেয় রাজউক। ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্রে ধারাবাহিকভাবে জাহিদি ও পিপলস জুট মিলসের নাম রেকর্ডভুক্ত ছিল। সেই রেকর্ড খারিজ না করেই ১৯৯২ সালে তড়িঘড়ি করে চারজনের নামে নতুন করে বরাদ্দ দেয় রাজউক। পরে ভূমি অফিসের নথিও গায়েব করে দেয়া হয়। বর্তমানে প্লটগুলোর হোল্ডিং নম্বর-২৮, ২৮(এ), ২৮(বি), ২৮(সি) হিসেবে নামজারি রয়েছে। কিন্তু কোনো বিধি-বিধান বলে প্লট নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে প্লটগুলো সৃষ্টি করা হয়েছিল কি না-এ প্রশ্নটি রয়েই গেছে।
সূত্রমতে, জালিয়াতির মাধ্যমে মূল্যবান এই সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের ঘটনার ৭ বছর ধরে অনুসন্ধানই চালাচ্ছে দুদক। বিগত কমিশনের সময় মামলা দায়েরের পক্ষে সুপারিশ সম্বলিত অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কমিশন মামলার অনুমোদন দেয়নি। বরং পুন:অনুসন্ধানে পাঠিয়ে কালক্ষেফণের কৌশল গ্রহণ করা হয়। জানা গেছে, কথিত এই বরাদ্দ প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত। এছাড়া যারা এই প্লটগুলোর বেনিফিশিয়ারি তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী। প্রভাবশালী ব্যক্তিগত প্রশ্নবিদ্ধ এসব প্লট ব্যাংকে বন্ধক রেখে এরই মধ্যেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্লটগুলোতে স্থাপিত হয়েছে সুউচ্চ ভবন। অথচ রাজউক সংশ্লিষ্ট বৃহৎ এই পুকুর চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের এখনও আইনের আওতায় আনা যায় নি। যদিও প্লটগুলো এরই মধ্যেই কয়েক হাত বদল হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। তবে বিস্তারিত জেনে তথ্য দেয়া সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।