Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামনের কঠিন চ্যালেঞ্জে প্রস্তুত ওয়ানডে অধিনায়ক

সাকিবকে টপকে গেছেন মাশরাফি ষ টেস্ট দলকে শুভকামনা

প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম


শামীম চৌধুরী : সাকিবের ৫ বছর ১৯৩ দিন আগে শুরু মাশরাফির ওয়ানডে ক্যারিয়ার। সাকিবের ওয়ানডে অভিষেকের আগেই ৩৮ ম্যাচে ৪৬ উইকেট পকেটে জমা ছিল মাশরাফির। অথচ কি জানেন, পাঁচ পাঁচ বার হাটুর লিগামেন্টে অপারেশনে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১১০টি ম্যাচ মিস করা মাশরাফি সাকিবের পেছনে ছুটতে ছুটতে শেষ পর্যন্ত উইকেট শিকারে সাকিবকে টপকে গেছেন! দেড়শ’ তম ম্যাচ থেকেই পাল্লাটা চলছিল এই দুই বোলারের। এই মাইলস্টোনে যেখানে সাকিব পা দিয়েছেন ১১৯তম ম্যাচে, মাশরাফির সেখানে লেগেছে ১২০ ম্যাচ। ২’শ উইকেটে সাকিবের ১৫৬’র বিপরীতে মাশরাফির ১৫৭ ম্যাচ। সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে রাজ্জাককে (২০৬ উইকেট) টপকে সাকিব শীর্ষে উঠে এলেও ইংল্যান্ড সিরিজে হারিয়েছেন শীর্ষস্থান। ইংল্যান্ড সিরিজে ৮ উইকেটে আইসিসি’র ওয়ানডে বোলিং র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ১০ এ উঠে আসা মাশরাফি সর্বশেষ ম্যাচে ২ উইকেটে ১৬৬তম ম্যাচে এসে টপকে গেছেন সাকিবকে। ১৬৩ ম্যাচে সাকিবের উইকেট সংখ্যা যেখানে ২১৫, সেখানে মাশরাফির উইকেট সংখ্যা ২১৬। তবে দেশের হয়ে মাশরাফির উইকেট সংখ্যা কিন্তু সাকিবের সমান (২১৫টি)।
তারুণ্যে যে বোলিং করতেন, ৩৪এ এসেও সেই মাশরাফিকেই দেখছে দর্শক। অধিনায়কত্বের বাড়তি বোঝা চেপে যাওয়ায়ও মাশরাফির বোলিংয়ে সেই আগুনই দেখতে পাচ্ছে বিশ্ব। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে ৪ উইকেট, ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও জয়ের আশা ছেড়ে দিয়ে অন্যরা যখন নিয়মরক্ষার বোলিং করেছেন, সেখানেও ব্যতিক্রম মাশরাফি। শেষ স্পেলটির চিত্রই (৩-০-১৩-২) বলে দিচ্ছে তা। ক্যাপ্টেনসি ক্যারিয়ারে ২৭ ম্যাচে ৪২ উইকেট বোলিং ধারাবাহিকতার দৃষ্টান্ত এর চেয়ে ভাল কি আর হতে পারে বলুন। তার নেতৃত্বে ওয়ানডে ক্রিকেটে জয়ের সেঞ্চুরি দেখেছে বাংলাদেশ দল। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। টানা ৬টি দ্বি-পাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ জয়ে অন্য এক উচ্চতায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ক্যাপ্টেনসি ক্যারিয়ারে ৩৪ ম্যাচে ২৩ জয়ে সাফল্যাঙ্কে বাংলাদেশের অতীতের সব অধিনায়ককে ছাড়িয়ে গেছেন। আর ৭টি ম্যাচ জিতলেই ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বাধিক ম্যাচ জয়ী অধিনায়ক হাবিবুল বাশারকে (৬৯ ম্যাচে ২৯ জয়) যাবেন ছাড়িয়ে। ক্যাপ্টেনসির ২ বছরে বাংলাদেশকে এতোটা উচ্চতায় নিয়ে এসেও টানা ৭ম ট্রফি জয়ে ইতিহাস রচনার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে মাশরাফির। তবে তার জন্য কোনো আফসোস নেই মাশরাফির। বরং নিজের এবং দলের পারফরমেন্সে সন্তুস্ট মাশরাফিÑ ‘ব্যক্তিগত পারফরমেন্স ভালোই হচ্ছে। টিম জিতলে সবকিছু বলতে ভালো লাগে।’
বিশ্বকাপের পর টানা ১৮টি ওয়ানডে ম্যাচ হোমে খেলেছে বাংলাদেশ দল। আগামী জুলাই মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে হোমে কোন ওয়ানডে ম্যাচ নেই বাংলাদেশ দলের। হোমের বাইরে ৯ মাস কাটাতে হবে বাংলাদেশকে এই ভার্সনের ক্রিকেটে। নিউজিল্যান্ড সফর, শ্রীলংকা সফর, আয়ারল্যান্ড সফর এবং আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মিশন অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ দলের সামনে। সে কারণেই দেশের বাইরে দল হিসেবে পারফর্ম করার চ্যালেঞ্জ মাশরাফিরÑ ‘আমাদের আসল চ্যালেঞ্জ ওখান থেকেই শুরু হবে। হোমে সব মিলিয়ে আমরা প্রায় ৯০ ভাগ সফল। এই ম্যাচ জিতলে শতভাগ হতো। সামনে আমাদের কঠিন চ্যলেঞ্জ আসছে। বেশিরভাগ খেলাই এখন বাইরে। এর জন্য তৈরি হতে হবে।’
মুশফিকুরকে সরিয়ে মাশরাফির হাতে অধিনায়কত্ব তুলে দিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছে বিসিবি, সে আস্থার প্রতিদান ইতোমধ্যে দিয়েছেন টীমমেটদের এই মোটিভেটর। সামনের কঠিন দিনগুলোর পর্বত সম হার্ডল একটা একটা করে পার করকে চান তিনি। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অশগ্রহণের জটিল র‌্যাঙ্কিংয়ের হিসেব মিলিয়েছেন। ২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার জন্য আইসিসি’র বেধে দেয়া সময়ের হিসাবটাও যে মেলাতে হবে তাকে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ থেকে তাই নুতন অধ্যায় শুরুর প্রত্যয় মাশরাফিরÑ‘অধিনায়কত্ব নেওয়ার পরও যা ভাবতাম, এখনও তাই ভাবি। প্রত্যেকটা সিরিজ খেলতে নামার আগে কিছু প্রস্তুতি নিয়ে নামি। সামনে যত সিরিজ আছে চিন্তা করলে আমি টায়ার্ড হয়ে যাবো, এটা নিশ্চিত। সামনে যে সিরিজ আসছে অথবা নিউজিল্যান্ড সিরিজ। ওটা নিয়েই মনোযোগী হবো। আমি যখণ অধিনয়াকত্ব পেয়েছিলাম তখন হারের বৃত্ত থেকেই আমরা জেতা শুরু করি। যদি নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে নতুন করে শুরু করতে পারি তাহলে অন্যরকম হবে। অবশ্যই লুজিং সাইডে থাকা সব সময় পেইনফুল।’
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টে দলে নেতৃত্ব দেয়া মাশরাফি বোলিংয়ের সময়ে ফলো থ্রুতে পা পিছলে সেই যে চোট পেলেন,তার পরও আর দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচে ফেরেননি। বাংলাদেশ দলের টেস্ট ম্যাচে দর্শক তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হেরে গেলেও দারুন সব অর্জন থেকে প্রেরণা নিয়ে টেস্টে বাংলাদেশ দল মেলে ধরবে, মুশফিকুরদের জন্য সে শুভকামনাই করেছেন, দিয়েছেন টিপস ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফিÑ ‘টেস্টে আসলে সবকিছুই নির্ভর করে প্রথম ইনিংসের উপর। ব্যাটিং কিংবা বোলিং যাই হোক না কেন। আমার অবশ্যই শুভেচ্ছা তাদের সঙ্গে থাকবে। আমার বিশ্বাস ভালো করব। আমরা যদি প্রথম ইনিংসে যে কোনো কিছুতে ভালো করি, আমাদের জেতার সুযোগও থাকবে। এখনো দুটা টেস্ট ম্যাচ আছে। হয়তোবা আমি থাকছি না। কিন্তু যারা খেলবে বেশিরভাগ ওয়ানডে খেলোয়াড়ই থাকবে। তারা যদি ভালো খেলে তাহলে আত্মবিশ্বাসটা বৃদ্ধি পাবে।’

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী
বোলার ম্যাচ/ইনি উইকেট সেরা গড় ইকো. ৪/৫
মাশরাফি বিন মর্তুজা ১৬৪/১৬৪ ২১৫ ৬/২৬ ২৯.৭১ ৪.৬৮ ৬/১
সাকিব আল হাসান ১৬৩/১৬২ ২১৫ ৫/৪৭ ২৭.৯৩ ৪.৩২ ৭/১
আব্দুর রাজ্জাক ১৫৩/১৫২ ২০৭ ৫/২৯ ২৯.২৯ ৪.৫৬ ৫/৪
মোহাম্মদ রফিক ১২৩/১২২ ১১৯ ৫/৪৭ ৩৮.৭৫ ৪.৩৯ ২/১
রুবেল হোসেন ৬৯/৬৯ ৮৮ ৬/২৬ ৩৩.৩১ ৫.৬৩ ৫/১



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সামনের কঠিন চ্যালেঞ্জে প্রস্তুত ওয়ানডে অধিনায়ক
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ