গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি কার্যালয় থেকে বের হন মুসা বিন শমসের। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে ও স্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে মেরুন কালার একটি গাড়িতে ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি কার্যালয় থেকে বের হন ৬টা ৫৫ মিনিটে। ডিবি সূত্র জানায়, ভুয়া অতিরিক্ত সচিব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার আব্দুল কাদেরের সঙ্গে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মুসা বিন শমসেরকে। মুসা বিন শমসেরের আইন উপদেষ্টা ছিলেন প্রতারক আব্দুল কাদের।
গতকাল মঙ্গলবার মুসা বিন শমসেরকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি (মুসা বিন শমসের) প্রতারক কাদেরকে তার আইন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তাকে ২০ কোটি টাকার চেক দিয়েছেন। তাকে ‘বাবা’, ‘ সোনা’ বলেও ডাকতেন।
তিনি আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মুসা বিন শমসের দাবি করেছেন, তিনি কাদেরের প্রতারণার বিষয়ে কিছু জানেন না। আমরা তাকে বলেছি, একজন নাইন পাস লোককে আপনি না বুঝে কীভাবে নিয়োগ দিলেন, তার কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা নিয়ে কীভাবে লাভসহ ২০ কোটি টাকার চেক দিলেন? এছাড়াও মুসা সাহেব কাদেরের সম্পর্কে বেশি জানেন না বললেও আমরা তার সাথে কাদেরের কথপোকথন পেয়েছি। প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারও ডাকা হতে পারে বলেও জানানো হয়।
তবে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুসা বিন শমসের সাংবাদিকদের বলেছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভুয়া অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাদের একজন মিথ্যাবাদী। আমিও প্রতারণার শিকার হয়েছি। এ ভুয়া অতিরিক্ত সচিবের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো, তার বিরুদ্ধে মামলা করবো।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সচিব পরিচয়ে গ্রেফতার আব্দুল কাদেরের প্রতিষ্ঠানে শমসেরের একাধিক ছবি টাঙানো রয়েছে। তিনি নিজেকে শমসেরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অ্যাডভাইজার হিসেবে পরিচয় দিতেন। প্রতারক আব্দুল কাদেরের কাছ থেকে মুসা বিন শমসের ও তার স্ত্রীর সঙ্গে করা কিছু চুক্তিপত্র উদ্ধার করা হয়। এসব বিষয় জানতেই মূলত শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডিবির কর্মকর্তাদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। এ সময় তার স্ত্রী ও ছেলে সঙ্গেই ছিলেন।
সূত্র জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সহায়তায় গত ৭ অক্টোবর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার প্রতারককে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। তারা হলো- ভুয়া অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাদের চৌধুরী, তার দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরী ছোঁয়া, শহিদুল আলম ও আনিসুর রহমান। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও এক রাউন্ড গুলিসহ একটি ওয়াকিটকি, একটি প্রাডো গাড়ি, অতিরিক্ত সচিবের অফিসিয়াল আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ডসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, আব্দুল কাদের চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নবম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু তিনি অতিরিক্ত সচিব পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। রাজধানীর গুলশানে জব্বার টাওয়ারে তার একটি কার্যালয় রয়েছে। সেখানে বসেই তিনি বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। তার সঙ্গে দেখা করানোর জন্য সহযোগীরা ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা নিতেন। ঢাকা ট্রেড করপোরেশন, জমিদার ট্রেডিং, সামীন এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী গ্রুপ, হিউম্যান ইম্প্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশন, সততা প্রপার্টিজ, ডানা লজিস্টিকস, ডানা মটর্স নামে আব্দুল কাদের চৌধুরীর নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর কথা বলেই তিনি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালে তিনি সরকারি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার নামে সারাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।