পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটিসহ কয়েকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পকে ঘিরে ভয়াবহ জনদুর্ভোগ চলছে কয়েক বছর ধরে। এ থেকে কবে মুক্তি মিলবে তা কেউ জানে না। মেট্রোরেলের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে নির্মাণ কাজের জন্য মিরপুর থেকে আগারগাঁও-ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি অর্ধেকেরও বেশী অংশ বন্ধ ছিল। নির্মাণকাজের শেষ পর্যায়ে এসে এখনও ফার্মগেইট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে সরু করে রাখা হয়েছে। এগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে বাধার সম্মুখিন হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজটের। এতে করে অসহনীয় ভোগান্তি পোহাচ্ছে রাজধানীবাসী।
এদিকে বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল ও গাবতলী থেকে গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত আরও দুটি মেট্রোরেল নির্মাণে নেয়া হয়েছে প্রকল্প। এর বাইরে গাবতলী থেকে চিটাগং রোড পর্যন্ত আরেকটি মেট্রোরেল নির্মাণে আগ্রহী জাপান। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে জিটুজি পদ্ধতিতে এ মেট্রোরেল নির্মাণ করতে চায় দেশটি।
জানা গেছে, গাবতলী থেকে চিটাগং রোড পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে সমীক্ষা পরিচালনা করছে জাপান। এরই মধ্যে রুট অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত ও পিপিপি রিসার্চ সম্পন্ন হয়েছে। এর ভিত্তিতে মেট্রোরেলের জন্য ডিপো, ডিপোর এক্সেস করিডোর ও কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের জন্য প্রয়োজনীয় জমি ড্যাপে (ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান) অন্তর্ভুক্তির জন্য সম্প্রতি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাউজক) চিঠি দিয়েছে মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে পাঁচটি রুটে মেট্রোরেল চলবে। এগুলোর সমন্বয়ে ডিএমটিসিএল ১২৮ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলায় কাজ করছে। এর মধ্যে উড়ালপথে হবে ৬৭ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং পাতালপথে ৬১ দশমিক ১৭ কিলোমিটার। আর এ পথে স্টেশন থাকবে ১০৪টি, যার মধ্যে ৫১টি উড়ালপথে ও ৫৩টি পাতালপথে।
জানা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে পিপিপি পদ্ধতিতে এমআরটি লাইন-২ (গাবতলী-চিটাগং রোড) নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালের ১৫ জুন জাপান ও বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা স্মারক সই করে। এরই ধারাবাহিকতায় জিটুজি ভিত্তিতে পিপিপি পদ্ধতিতে এমআরটি লাইন-২ বাস্তবায়নের প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য জাপান ও বাংলাদেশের অংশগ্রহণে ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রথম প্ল্যাটফরম সভা, ২০১৮ সালের ৭ জুন দ্বিতীয় সভা, ২০১৯ সালেল ২১ মার্চ তৃতীয় সভা ও চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে প্রকল্পটির পিপিপি রিসার্চ সম্পন্ন হয়েছে, যা গত বছর সেপ্টেম্বরে জমা দিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। ওই মাসেই মেট্রোরেলটি নির্মাণে প্রাথমিক সমীক্ষা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিক সমীক্ষায় গাবতলী থেকে চিটাগং রোড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার মেইন লাইন ও গোলাপশাহ মাজার থেকে সদরঘাট পর্যন্ত দুই দশমিক ৬০ কিলোমিটার ব্রাঞ্চ লাইনসহ সর্বমোট ২৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এমআরটি লাইন-২-এর সম্ভাব্য রুট অ্যালাইনমেন্ট হলো গাবতলী থেকে বেড়িবাঁধ সড়ক, বসিলা, মোহাম্মদপুর বিআরটিসি বাস স্টপ, সাত মসজিদ রোড, ঝিগাতলা, ধানমন্ডি ২নং রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, আজিমপুর, পলাশী, শহীদ মিনার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, গোলাপশাহ মাজার, বঙ্গভবন-সংলগ্ন পূর্ব দিকের সড়ক, মতিঝিল, আরামবাগ, কমলাপুর, মুগদা, মান্ডা ও ডেমরা হয়ে চিটাগং রোড পর্যন্ত। আর ব্রাঞ্চ লাইন হবে গোলাপশাহ মাজার থেকে নয়াবাজার হয়ে সদরঘাট।
এমআরটি লাইন-২ নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে শুরু করা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ মেট্রোরেলের জন্য ডিপো, ডিপোর এক্সেস করিডোর ও কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণে বেশকিছু জমি লাগবে। আর ঢাকার ডেমরা এলাকায় মাতুয়াইল ও দামাড়িপাড়া মৌজায় গ্রিন মডেল টাউন ও আমুলিয়া মডেল টাউনের মধ্যবর্তী স্থানে মোট ৬৫ হেক্টর জমিতে ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট হাব নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রস্তাবিত ভূমি এলাকাটি রাজউকের ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ঢাকায় পাঁচটি মেট্রোরেল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল নির্মাণকাজ চলছে। আর বিমানবন্দর-মতিঝিল ও গাবতলী-গুলশান-ভাটারা রুটে মেট্রোরেল নির্মাণে নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। এর বাইরে পিপিপির ভিত্তিতে জিটুজি পদ্ধতিতে বাকি দুটি মেট্রোরেল নির্মাণে আগ্রহী জাপান। এজন্য প্রাথমিক সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তাই ড্যাপের মধ্যে জমির ধরন অন্তর্ভুক্তির জন্য রাজউকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে এ মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে।
রাজধানীর যানজটের জনদুর্ভোগ কমাতে বাস্তবায়ন হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্প। কিন্তু জনদুর্ভোগ নিরসনে নেয়া প্রকল্পগুলো প্রণয়নের সময় জনদুর্ভোগ এড়াতে কোন বিকল্প ব্যবস্থা না রাখায় বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কারণে প্রায় ৫ বছর ধরে এই রুটে জনদুর্ভোগ মানুষের নিত্যসঙ্গী। এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্লানার্স ইন্সটিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ভোগান্তি কমিয়ে কাজ করার সংস্কৃতিই বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। যে কোন প্রকল্পে অনেক ডিটেইলিং থাকে যখন টার্মস অ্যান্ড রেফারেন্স তৈরি করা হয়। সেখানে লেখা থাকে যে জনদুর্ভোগ কমাতে হবে, বিকল্প রাস্তা তৈরি করতে হবে। নির্মাণ সামগ্রী সুরক্ষিত রাখা এবং ক্ষেত্র বিশেষে ঢেকে রাখতে হবে। বাংলাদেশে বায়ুদূষণ, ধুলিদূষণ, বৃষ্টির সময় কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হওয়া -এটা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে বিশাল একটা গাফিলতি আছে। এর সুযোগ নিয়ে ঠিকাদাররা বারবার উদাসীনতা দেখাচ্ছেন বলেই জনদুর্ভোগ সর্বোচ্চ। তিনি বলেন, বড় যেসব প্রকল্প ভয়াবহ জনদুর্ভোগ তৈরি করেছে তাদের ক্ষেত্রে আইনের কোন প্রয়োগের নজিরও দেখা যায় না বলে সড়ক সংশ্লিষ্ট সব প্রকল্পেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। প্রকল্পের সাথে যারা জড়িত আছেন তাদের দেখভাল করার সক্ষমতা হয় সর্বনিন্ম বা আগ্রহ কম। ফলে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সেই আগ্রহ নেই। আইনে জনদুর্ভোগের জন্য যাদের পেনাল্টি হওয়ার কথা সেটি না হওয়ার কারণেই পুনরাবৃত্তি হওয়ার ছবিটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। ভুক্তভোগিদের মতে, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করতে যেসব সরকারি সংস্থার কাজ করার কথা তাদেরও কোন তৎপরতা দেখা যায় না। ফলে প্রকল্প চলাকালে সড়কজুড়ে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলার মূল্য দিতে হয় সাধারণ মানুষকে। আবার কখনো এটি হয় দীর্ঘ সময়ের জন্য কারণ কোন প্রকল্পই সময়মত শেষ করার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বিরল।
মিরপুরের অধিবাসী নিপা চৌধুরী বলেন, মেট্রোরেল চালু হলে আমরা মিরপুরের বাসিন্দারা হয়তো সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবো। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে যে ভোগান্তি পোহাচ্ছি তার কি হবে? তিনি মেট্রোরেল প্রকল্পের শুরুর কয়েক বছরের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে বলেন, মিরপুর-১২ থেকে তেজগাঁওয়ে যেতে দুই আড়াই ঘণ্টা লাগতো। রাস্তাও ছিলো এমন যে একদিকে ভাঙ্গা চোরা আরেকদিকে অর্ধেক নাই বা একদিকে বন্ধ, আরেকদিকে খুলে দিয়েছে-এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে গত কয়েক বছর ধরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে আগারগাঁও পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে হওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে সড়ক পথ চলাচলের উন্মুক্ত করা হচ্ছে কিন্তু আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের অনেক জায়গাতেই সড়ক একাংশ বন্ধ রাখা হয়েছে। চলতি পথে এই অংশের যানজটই নগরজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলেছে। ভুক্তভোগীদের মতে, মেট্রোরেলের এক প্রকল্পেই অর্ধযুগের ভোগান্তির পর সাধারণ মানুষের আর উন্নয়ন প্রকল্পে আগ্রহ থাকার কথা নয়। সে কারণে আগামীতে গাবতলী থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত প্রকল্প শুরু হলে ভোগান্তি যাতে কম হয় সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাপানী কোম্পানীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনেকেই বলেছেন, জাপানের রেকর্ড আছে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করার। বিশেষ করে মেঘনা সেতু তৈরীতে তারা বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। মেট্রোরেলের আগামী প্রকল্পে এমন দৃষ্টান্ত আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।