পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নানামুখী সঙ্কট থাকলেও দেশে ডিম উৎপাদন বেড়েছে। আমিষের চাহিদা পূরণে একসময় পিছিয়ে থাকলেও এখন অনেকটা স্বনির্ভর। ডিম উৎপাদনে স্বাবলম্বী বাংলাদেশ। চাহিদা পূরণে যতটা প্রয়োজন ঠিক ততটাই ডিম উৎপাদনে সক্ষম দেশের খামারিরা। দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের প্রায় পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। পৃথক হিসাবে কেবল মুরগির ডিম উৎপাদিত হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে ২০৫৭ দশমিক ৬৪ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হয়েছে যা ২০১৯-২০ এ ছিল ১৭৩৬ কোটি পিস। এক বছরের ব্যবধানে ৩২১ কোটি পিস ডিম বেশি উৎপাদন হয়েছে। অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের মাথাপিছু ডিমের গড় প্রাপ্যতা বেড়ে ১২১টিতে উন্নীত হয়েছে। যা আগে ছিল ১০৪টিতে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) তথ্য বলছে, একজন সুস্থ মানুষের বছরে গড়ে ১০৪টি করে ডিম খাওয়া উচিত। এই বাস্তবতায় আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস। দিবসটি উদযাপনে এবারের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রতিদিন ডিম খাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই।’
ডিম উৎপাদকরা বলছেন, আমিষের চাহিদা পূরণে ডিমের চাহিদা অপরিসীম। সম্ভাবনাময় এই খাতটি নানামুখী সঙ্কটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। মুরগি পালনের পর ডিম উৎপাদনে ব্যয় অত্যধিক হলেও পর্যাপ্ত দাম মিলছে না। মুরগির খাবারের মূল্য ক্রমবর্ধমান, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে উচ্চ দাম, রোগ-বালাইয়ে দেদার মুরগি মরলেও ইনস্যুরেন্স বা বীমা না থাকায় খামারিরা পথে বসেন। এতে করে নতুন করে কেউ আর এই ব্যবসায় পা বাড়াচ্ছেন না বরং বড় মূলধনের ব্যবসায়ীরা মুরগি চাষ বাদ দিয়ে অন্যদিকে ঝুঁকছেন। তাঁদের মতে, বড়রা লোকসানে পড়ে এই ব্যবসা ছাড়লেও নিজস্ব জায়গার উপর ছোট পরিসরে গড়া খামারিরা কোনোমতে টিকে রয়েছেন। দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা বড় ভূমিকা পালন করছে। এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নিলে তাঁরাও ঝরে পড়বেন। ডিম থেকে আমিষের চাহিদা পূরণে সংকট দেখা দেবে। স্বয়ংসম্পূর্ণ এই খাতটি আবারও অন্ধকারে ডুববে।
ডিম উৎপাদনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা বলছেন, ক্রমবর্ধমান মানুষের চাহিদা পূরণে মুরগির নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন চলছে, যাতে বেশি পরিমাণ ডিম উৎপাদিত হয়। সাধারণত কোনো মুরগি বছরে ৫০ থেকে ৬০টি ডিম দিত। কিন্তু উদ্ভাবিত নতুন জাতের মুরগি বছরে ২৫০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত ডিম দিচ্ছে, যা দেশে ডিম উৎপাদনে সাড়া জাগিয়েছে। আরো কিভাবে ডিম উৎপাদন বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে গবেষণা চলছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) এক হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে ডিমের বাণিজ্যিক উৎপাদন দৈনিক প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ পিস। সেই হিসাবে ৩৬৫ দিনে এক বছরে দেশে ডিম উৎপাদিত হয় এক হাজার ৩৮৭ কোটি। বছর বছর ডিমের এই উৎপাদন বাড়ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের গত ১১ বছরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ক্রমাগতভাবে ডিম উৎপাদন বাড়ছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ডিম উৎপাদন ছিল ৪৬৯ কোটি পিস। তবে ১১ বছরের ব্যবধানে এই উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণের বেশি। অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০০৯-১০ সালে ডিম উৎপাদন হয় ৫৭৪ কোটি পিস, ২০১০-২০১১ সালে ৬০৭ কোটি পিস, ২০১১-১২ সালে ৭৩০ কোটি পিস, ২০১২-১৩ সালে ৭৬১ কোটি পিস, ২০১৩-১৪ সালে ১০১৬ কোটি পিস, ২০১৪-১৫ সালে ১০৯৯ কোটি পিস, ২০১৫-১৬ সালে ১১৯১ কোটি পিস, ২০১৬-১৭ সালে ১৪৯৩ কোটি পিস ও ২০১৭-১৮ সালে ১৫৫২ কোটি পিস। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডিম উৎপাদন হয়েছে এক হাজার ৭১১ কোটি পিস। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডিম উৎপাদন হয়েছে এক হাজার ৭৩৬ কোটি পিস। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০৫৭ দশমিক ৬৪ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে ৩২১ কোটি পিস ডিম বেশি উৎপাদন হয়েছে। প্রাণিসম্পদের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, মাথাপিছু চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে ডিম উৎপাদন হচ্ছে পোল্ট্রি খাতে। এক বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের মাথাপিছু ডিমের গড় প্রাপ্যতা বেড়ে ১২১টিতে উন্নীত হয়েছে। যা আগে ছিল ১০৪টিতে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) তথ্য বলছে, একজন সুস্থ মানুষের বছরে গড়ে ১০৪টি করে ডিম খাওয়া উচিত। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ডিম এখন খুবই সহজলভ্য বলা যায়। এজন্য পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিম খাওয়ার প্রচলন আরও বাড়িয়ে মানুষকে অনেক রোগ থেকে বাঁচানো সম্ভব। তিনি বলেন, একজন মানুষের স্বাভাবিক ডিমের চাহিদা পূরণ হলে রোগ কম হবে। ওষুধের পরিমাণ কম লাগবে। স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকবে। কারণ রোগ-বালাইয়ে প্রচুর আর্থিক বিপর্যয় হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (উৎপাদন) ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, ডিম উৎপাদনে আমরা এখন অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে। মুরগির ডিমের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন চলছে। আগে মুরগি অনেক কম ডিম দিলেও নতুন উদ্ভাবিত জাতের মুরগি বছরে ২৫০ থেকে ৩০০টি ডিম দিচ্ছে। আবার কোনোটি বিশেষ ক্ষেত্রে বেশিও দিচ্ছে। ক্রমবর্ধমান মানুষের চাহিদা মেটাতে আরো বেশি ডিম উদ্ভাবনের বিষয়ে কাজ চলছে। কিভাবে নতুন জাত উদ্ভাবন করা যায় সেটি নিয়ে কাজ চলছে। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে যে ডিম উৎপাদিত হয়, জাতীয় হিসাবে কেবল মুরগির ডিম কত উৎপাদন সেটার আলাদা তথ্য নেই। তবে ধারণাগত তথ্যে বলা যায়, উৎপাদিত ডিমের ৭০ শতাংশ মুরগির ডিম। আর ৩০ শতাংশ হাঁস ও অন্যান্য প্রাণী থেকে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, দেশের খামারিরা চাহিদা অনুযায়ী ডিম উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী যত ডিম প্রয়োজন সবই উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু এই খাতটি নানা সংকটে ভুগছে। বিদ্যুতের বাড়তি দাম, মুরগির খাবারের দামও বেশি। ডিমপাড়া বাচ্চার দাম বাড়িয়েছে হ্যাচারি মালিকরা, যা এই খাতের সংকটকে আরো বাড়িয়েছে।’ তিনি বলেন, এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত খামার ছিল এক হাজার কিন্তু এখন এক শ থেকে দুই শতে এসে ঠেকেছে। ব্যবসায় টিকতে না পেরে অনেক খামার বন্ধ করে দিয়েছে। বড় বড় খামারি বছরের পর বছর লোকসান করা বন্ধ করে অন্যদিকে ঝুঁকছেন। হাতে গোনা কিছু ব্যবসায়ী টিকে রয়েছেন। কিন্তু বিদ্যমান সমস্যা সমাধান না করলে তাঁদের টিকে থাকাও কষ্টসাধ্য হবে।
আজ বিশ্ব ডিম দিবস আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস। দিবসটি উদযাপনে এবারের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রতিদিন ডিম খাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই।’ এ উপলক্ষ্যে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টানে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।