গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী সাংবাদিক কনক সরওয়ারের বোন নুসরাত শাহরিন রাকাকে র্যাব সোমবার মধ্যরাতে আটক করে এবং দাবি করে যে তার কাছ থেকে মাদক পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সরওয়ার বলছেন, তিনি বর্তমান সরকারের সমালোচনা করেন বলেই তার বোনকে হেনস্থা করা হচ্ছে।
নুসরাত শাহরিন রাকাকে আটকের পর তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলায় ঢাকার একটি আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। বাংলাদেশ সরকারের একজন মন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, কনক সরওয়ার বিদেশে বসে অসত্য তথ্য প্রচার করছে প্রধানমন্ত্রী, সামরিক বাহিনী ও সরকার নিয়ে। তিনি বলেন, বিদেশে বসে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে কেউ অপপ্রচার করলে ও দেশে কেউ এসবে সহায়তা করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, কনক সরওয়ার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তিনি সরকারের সমালোচনা করেন। কিন্তু কখনোই রাষ্ট্রবিরোধী কিছু করেননি। নুসরাত শাহরিন রাকাকে উত্তরা থেকে সোমবার মধ্যরাতে আটকের পর মঙ্গলবার র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছিলো যে তিনি রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারকারী ও ষড়যন্ত্রকারী চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। এবং, র্যাবের ভাষায়, তিনি বিদেশে অবস্থানরত 'রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারকারীদের অন্যতম দেশদ্রোহী' কনক সরওয়ার সম্পর্কে তার সহোদর।
আটকের পর রাষ্ট্রবিরোধী কনটেন্টসহ একটি মোবাইল ফোন, একটি পাসপোর্ট ও মাদক আইস রাখার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মোট দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় বুধবার পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁশুলি আবু আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর মানহানিকর প্রচারণায় যে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এখন কাদের সম্পৃক্ততা আছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। পত্রিকায় আসছে ড. কনক সরওয়ারের বিষয়ে। এদের সাথে তার কি লিংক আছে বা তার বোনের সাথে আর কারা সম্পৃক্ত সেটা উদঘাটন হওয়া দরকার।’
যদিও নুসরাত শাহরিন রাকার ভাই কনক সরওয়ার সবসময় বলে আসছেন, তিনি সরকারের সমালোচনা করেন কিন্তু রাষ্ট্রবিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িত নন। তার বোনকে গ্রেফতারের পর তিনি বলছেন যে তার কারণেই তার বোনকে হেনস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভাইয়ের বিরুদ্ধে থাকা ক্ষোভের কারণে বোনকে এভাবে হেনস্থার মাধ্যমেই বরং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। সরওয়ার বিবিসিকে বলেন,‘গত ১০/১২ দিন আগে তার নামে একটি ফেইক ফেসবুক আইডি খোলা হয়। সেই আইডিতে কিছু পোস্টের পর আমার বোন জিডিও করেছিলো থানায় যে তার নামে আইডি খুলে সেখানে উদ্দেশ্যমূলক বিভিন্ন বিষয় দেয়া হচ্ছে। সে আসলে বিচারপ্রার্থী ছিলো। তিনি বলেন, ‘এখন বিচার প্রার্থীকেই আসামি করা হয়েছে কারণ সে আমার ছোট বোন। এটিই তার অপরাধ। আমি মনে করি ফেসবুক আইডি থেকে শুরু করে যা কিছু করা হয়েছে সবগুলোই পরিকল্পনা বা নীলনকশার অংশ।’
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামী হয়ে ২০১৫ সালে নয় মাস জেল খাটার পর ২০১৬ সালে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কনক সরওয়ার সরকারের সমালোচনা করে আলোচনায় এসেছেন। তবে বাংলাদেশে সরকারের সমালোচকদের হাতের কাছে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের হেনস্তার অভিযোগ নতুন নয়। সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক তাসনীম খলিল সিলেটে তার মাকে ভয়ভীতি দেখানো, ফ্রান্সে থাকা অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য বগুড়ায় তার বৃদ্ধ মা এবং মামাকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ, ব্লগার আসাদ নূর তার বরগুনার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বাবা-মাসহ পরিবারের ছয় জন সদস্যকে দু’দিন আটক রাখার অভিযোগ করেছেন।
এর জের ধরে বাংলাদেশে ভিন্নমত দমন করতে অ্যাকটিভিস্ট ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানির অভিযোগ তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলো একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তবে মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন বলছেন, এসব অভিযোগ সরকার প্রত্যাখ্যান করলেও এভাবে নির্যাতন ও হয়রানি এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি যে অনেক ক্ষেত্রেই যিনিই সরকার বা ক্ষমতাধর কোন ব্যক্তির যৌক্তিক সমালোচনাও করেন এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে যদি তিনি নাগালের বাইরে থাকেন অর্থাৎ বিদেশে যদি অবস্থান করেন তাহলে তার আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধবের ওপর খড়গহস্ত নেমে আসে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবং নানা ভাবে তাদের হয়রানি করেই ক্ষান্ত হয় না, নির্যাতন নিপীড়নের সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় ভয়ের পরিস্থিতি তৈরির জন্য এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় বা মামলা মোকাদ্দমায় জড়িয়ে দেয়া হয়।যেমন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট যত্রতত্র ব্যবহার করা হচ্ছে গত কয়েক বছর।’
তবে সরকার বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে বরাবরই এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এবার কনক সরওয়ারের বোনকে আটকের বিষয়ে সরকারের মন্ত্রী ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, সরওয়ার বিদেশে বসে অসত্য তথ্য প্রচার করছেন। কিন্তু এ কারণে তার বোনকে বা যারা বিদেশে থেকে সরকারের সমালোচনা করে তাদের পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা করা হচ্ছে এমন অভিযোগের জবাবে রাজ্জাক বলেন, যারা বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে ও দেশে থেকে তাদের যারা সহায়তা করে তাদের সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
‘মিথ্যাচারের একটা সীমা আছে। দেশ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এ অপশক্তিকে অবশ্যই তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। সাহস থাকলে দেশে এসে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে। বিদেশে থেকে এমন অপপ্রচার কেন করে তারা,’ তিনি বলেন। ‘যারা প্রশ্রয় দেয়, তথ্য দেয়, সহযোগিতা করে কিংবা লালন করে তাদেরকেও আমরা দেখবো। নিশ্চয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে হয়রানির জন্য করেছে বলে আমি মনে করি না।’ রাজ্জাক বলেন, সরকার, সামরিক বাহিনী কিংবা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নানা অপপ্রচার তারা চালাচ্ছে এবং একদল দেশে থেকে এসব অপপ্রচারকারীদের সহায়তা করছে বলেই আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।