Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাঁদে জমি কেনা ইসলামের দৃষ্টিতে কী?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৪৩ এএম | আপডেট : ১১:২২ এএম, ৭ অক্টোবর, ২০২১

পৃথিবীর মানুষ চাঁদে অবতরণ করার দাবি করেছে বহু দিন আগে। ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে দেশি-বিদেশি বহু মানুষ চাঁদে জমি কেনার দাবি করছে। চাঁদে জমি কেনা কি আসলে সম্ভব? যদি সম্ভব হয়, ইসলামের দৃষ্টিতে তা কি জায়েজ? এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনেই। এ জন্য প্রথমে জানতে হবে, যারা চাঁদে জমি বিক্রি করছে, তারা কিসের ভিত্তিতে জমি বিক্রি করছে?

স্নায়ুযুদ্ধের সময় মহাকাশ অভিযান শুরুর পর পরই মহাকাশের নানা বস্তুর মালিকানার বিষয়টি একটি ইস্যু হয়ে ওঠে। যখন নাসা তাদের প্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশযান চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তখন জাতিসংঘে ‘বহির্জগতের মহাকাশ চুক্তি’ বা ‘দ্য আউটার স্পেস ট্রিটি’ নামের একটি চুক্তিপত্র গ্রহণ করা হয়। ১৯৬৭ সালের সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য। সেখানে বলা হয়, পৃথিবীর বাইরের মহাশূন্যে, চাঁদ ও অন্য যেসব বস্তু আছে, সেখানে কোনো দেশ দখল বা অন্য কোনোভাবে নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করতে পারবে না।

কিন্তু এই চুক্তিতে একটা বড় ফাঁক থেকে যায়। সেখানে লেখা ছিল, কোনো রাষ্ট্র চাঁদের মালিকানা দাবি করতে পারবে না; কিন্তু কোথাও এটা বলা নেই যে কোনো সাধারণ মানুষ মালিকানা দাবি করতে পারবে কি না! এই অজুহাত কাজে লাগিয়ে ডেনিস হোপ নামক এক আমেরিকান চাঁদের জমির মালিকানা দাবি করে বসেন।

আমেরিকান আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি মালিকবিহীন সম্পদের মালিকানা দাবি করে, অন্য কোনো ব্যক্তি সে সম্পদে দাবি না রাখে এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তার স্বাক্ষর করাতে পারে, তাহলে সে ওই সম্পদের মালিক হয়ে যাবে। হোপ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একটি ডকুমেন্ট তৈরি করেন এবং স্থানীয় মেয়রের অফিস থেকে তা স্বাক্ষর করিয়ে নেন। সেই স্বাক্ষরিত কাগজের দুটি কপি তিনি যথাক্রমে রাশিয়া ও জাতিসংঘে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এই চিঠি কেউ না পড়ার ফলে আমেরিকার নিয়ম অনুযায়ী ডেনিস হোপ হয়ে যান চাঁদের মালিক।

তার ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে সর্বমোট ৬১১ মিলিয়ন একর জমি মানুষ কিনেছে। কিন্তু বিষয়টি আসলে কী!
অনেকের দাবি, আসলে পুরোটাই তাঁর সাজানো। সাংবাদিকরা তাঁর কাছে চাঁদের দলিল দেখতে চাইলে তিনি নিজের বানানো একটি দলিল দেখান, যেখানে অনেক বানান ও ব্যাকরণগত ভুল আছে। আসল দলিল তিনি সুরক্ষিত রেখেছেন বলে দাবি করেন। তাঁর অঞ্চলের মেয়রের অফিসে জানতে চাওয়া হলে তারা এ সম্পর্কে কিছু জানে না বলে দাবি করেছেন।

ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ নেই। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং কাঁকর নিক্ষেপে ক্রয়-বিক্রয় করতে রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১২৩০)

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেছেন, ‘প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে আছে পানির মধ্যের মাছ, পলাতক গোলাম, শূন্যে উড়ন্ত পাখি বা অনুরূপ পর্যায়ের কোনো কিছুর ক্রয়-বিক্রয়।’

ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের বেচাকেনাকে ‘বাই-বাতিল’ বলা হয়। যে ক্রয়-বিক্রয় মূলগত ও গুণগত উভয় দিক থেকে শুদ্ধ নয়, তাকে ‘বাই-বাতিল’ বলা হয়। ‘বাই-বাতিল’-এর মোট ছয়টি প্রকার আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো— হস্তান্তর অযোগ্য বস্তু ক্রয়-বিক্রয় : যে পণ্য হস্তান্তর করা যায় না তার বিক্রি বাতিল বলে গণ্য হবে। যেমন- উড়ন্ত পাখি, পানির মাছ, ছিনতাইকৃত সম্পদ ও দখলহীন সম্পত্তি বিক্রি করা জায়েজ নয়।

প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় : বস্তুর গুণাগুণ গোপন করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কোনো বস্তু বিক্রয় করা বৈধ নয়। বর্তমানে চাঁদে জমি বিক্রয়ের যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় তাতে উপরোক্ত শর্তগুলো মেনে চাঁদের জমি হস্তান্তর করা সম্ভব নয়। ডেনিস হোপ কর্তৃক চাঁদের মালিকানা দাবি ও বিক্রয়ের ব্যাপারে প্রতারণার অভিযোগ আছে এবং প্রতারণার আশঙ্কা আছে। মানুষের জন্য চাঁদে যাতায়াত সহজ হয়নি যে তারা চাঁদে গিয়ে তাদের ক্রয়কৃত জমি হস্তগত করে নেবে। অতএব এখনো ইসলামী আইন মেনে চাঁদে জমি কেনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। যদি কখনো ইসলামে ক্রয়-বিক্রয়ের সব শর্ত মেনে চাঁদের জমি হস্তান্তর করা ও হস্তগত করা সম্ভব হয়, মানুষের যাতায়াত সহজ হয়, সেখানে মানুষের অবস্থান করা সম্ভব হয়, তখন চাঁদের জমি ক্রয়-বিক্রয়ের জায়েজ কোনো পদ্ধতি বের করা সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাঁদে জমি কেনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ