মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্বজুড়ে ৬ ঘণ্টা সার্ভিস বন্ধ থাকায় ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের একদিনেই লোকসান হয়েছে কমপক্ষে ৬১০ কোটি ডলার। সোমবার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। এতে ফেসবুকের শেয়ার একদিনেই পড়ে যায় শতকরা ৫ ভাগের বেশি। শেয়ারবাজার নাসডাকের লেনদেন বন্ধ হওয়ার পূর্বে ফেসবুকের প্রতিটি শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৩২৫ ডলারে। আগের দিন শুক্রবার এই মূল্য ছিল ৩৪৩.০১ ডলার। ফলে সোমবারের মূল্য পতন হয়েছে শতকরা ৫.২৫ ভাগ। এ কারণে কোম্পানির বাজার মূল্যের পতন হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৭০ কোটি ডলার। শুক্রবার মোট বাজারমূল্য ছিল ৯৬ হাজার ৫৮০ কোটি ডলার। তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদোলু’কে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানের অনলাইন এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
এতে আরো বলা হয়, ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের সোমবার নিট সম্পদের পতন হয়েছে ৬১০ কোটি ডলার, যা কিনা শতকরা ৫.২৫ ভাগ। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা সংক্রান্ত বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোরবসের রিয়েল টাইম বিলিয়নিয়ারস লিস্টে তিনি এখন অবস্থান করছেন ৬ষ্ঠ স্থানে। ডাউনডিটেক্টরের সর্বশেষ ডাটা অনুযায়ী, সোমবার বিশ্বজুড়ে ৬ ঘণ্টার জন্য সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায় ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের। পরে তা সচল হয়েছে। ফেসবুকে প্রায় এক লাখ ২৪ হাজার বার আউটেজেস বা ব্লাকআউট হয়েছে এ পর্যন্ত। ইন্সটাগ্রামের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৯৭ হাজার এবং হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩৩ হাজার। এদিকে, ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্বজুড়ে ৬ ঘণ্টা অচল ছিল। এতে নাভিশ্বাস ওঠে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের। কারণ, এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন শুধু তরুণ প্রজন্মের মধ্যে চ্যাটিং বা আড্ডার উপলক্ষ নয়। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য, রাজনীতি, শিক্ষা সহ অনেক কিছু। ফলে সব শ্রেণির মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এসব মাধ্যম। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা সারা বিশ্বে এর সেবা বন্ধ থাকায় সেইসব মানুষের যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল। পরে অবশ্য পুনঃস্থাপন করা হয়েছে এসব সেবা। বলা হয়েছে ‘কনফিগারেশন চেঞ্জের’ জন্য এমনটা হয়েছে। এরপর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে। সোমবার সন্ধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্লাটফর্ম টুইটারে ফেসবুক নিশ্চিত করেছে যে, তাদের অ্যাপস অনলাইনে সচল হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবহারকারীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে তারা।
ফেসবুক থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের ওপর নির্ভরশীল বিশ্বের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী ও ব্যবসায়ী। তাদের কাছে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমাদের অ্যাপস ও সার্ভিস পুনঃস্থাপনের জন্য কঠোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ফলে আমাদের সেবা অনলাইনে এখন সচল হওয়ার জন্য আমরা আনন্দিত। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা।
ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়া শনাক্ত করে ডাউনডিটেক্টর ডট কম। তারা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ থেকে কলম্বিয়া ও সিঙ্গাপুর- এসব স্থান থেকে কমপক্ষে এক কোটি ৬ লাখ সমস্যার রিপোর্ট পেয়েছে। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা পরে সার্ভিস পুনঃস্থাপন হওয়ার পর ডাউনডিটেক্টর এই ‘ব্লাকআউটকে’ এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় ব্লাকআউট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তারা বলেছে, এত দীর্ঘ সময়ের ব্লাকআউট আমরা এর আগে কখনো দেখিনি।
মঙ্গলবার সকালে হোয়াটসঅ্যাপের প্রধান উইলিয়াম ক্যাথকার্ট টুইটারে ঘোষণা দিয়েছেন যে, তাদের সেবা ফিরে এসেছে এবং সচল হয়েছে। তবে কি কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই বলেননি তিনি। টুইটে তিনি লিখেছেন, আমরা জানি মানুষ হোয়াটসঅ্যাপে তাদের বন্ধুবান্ধব, পরিবার, ব্যবসায় সম্প্রদায়, বিভিন্ন কমিউনিটি গ্রুপ ও অন্য অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এই অ্যাপ ব্যবহার করে অসংখ্য মানুষ তাদের সাংগঠনিক কাজ করে থাকেন। ফেসবুক পরে তাদের রাউটারে কনফিগারেশন পরিবর্তনকে ত্রুটি হিসেবে শনাক্ত করেছে। বলেছে, তাদের সমস্যার মূলে এটাই।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক অ্যালান ফিশার বলছেন, ২০১৯ সালে একবার ফেসবুক মালিকানাধীন সব অ্যাপ শাটডাউন বা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার স্থায়িত্ব ছিল প্রায় এক ঘণ্টা। ওই সময় হোয়াটসঅ্যাপ বলেছিল, টেকনিক্যাল কারণে তাদের এমনটা হচ্ছিল। কিন্তু এবারের ব্লাকআউট তার চেয়েও অনেক বেশি সময়ের ছিল। সোমবারের এ সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, অবশ্যই সুস্পষ্টভাবে এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। এদিন সারাদিন ফেসবুক ডট কম-এ ‘এরর ম্যাসেজ’ দেখাচ্ছিল। ফেসবুকে ক্লিক করলেই লেখা উঠছিল, দুঃখিত, কিছু একটা ত্রুটি দেখা দিয়েছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। যত তাড়াতাড়ি পারি তা সমাধান করার চেষ্টা করছি।
এ থেকে বোঝা যায় তারা ‘ডোমেইন নেম সিস্টেম’ বা ‘ডিএনএস’ সমস্যায় ভুগছিল। একজন ব্যবহারকারীকে তার গন্তব্যে নিয়ে যেতে সাহায্য করে ডিএনএস। একই রকম ব্লাকআউট জুলাইয়ে দেখা দেয় ক্লাউড কোম্পানি আকামাই টেকনোলজিতে। এর ফলে বহু ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যায়। সিএনইটি (বা সিনেট) এর এডিটর অ্যাট লার্জ ইয়ান শের আল জাজিরাকে বলেছেন, সোমবার যেসব ঘটনা ও ত্রুটির রিপোর্ট পাওয়া গেছে তাতে মনে হচ্ছে কিছু একটা ভুলভাবে কনফিগার করা হয়েছিল।
ওদিকে ফেসবুক এভাবে বন্ধ থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ একটি অনুসন্ধান রিপোর্ট ফাঁস হয়েছে। তাতে দেখা যায়, কিভাবে ইন্সটাগ্রাম অ্যাপ টিনেজারদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে সে বিষয়ে অবহিত ছিল এই জায়ান্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ধারাবাহিক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ফেসবুক জানতো তাদের আরেক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রাম কিছু টিনেজার, বিশেষ করে মেয়েদেরকে নিজেদের ইমেজ নিয়ে এক অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলবে।
তবে ফেসবুক এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। বলেছে, অনুসন্ধানের রিপোর্টকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ফেসবুকের গ্লোল সিকিউরিটি বিষয়ক প্রধান অ্যান্টিগোন ডেভিস গত সপ্তাহে মার্কিন সিনেটের এক সাবকমিটির শুনানিতে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, বিশ্বজুড়ে আমাদের এই প্লাটফর্মে যেসব মানুষ রয়েছেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা গভীরভাবে যত্নশীল। ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের জন্য বয়সভিত্তিক নিরাপত্তার অনেকগুলো ধাপ সৃষ্টি করেছি আমরা। ওদিকে যুব সমাজের মধ্যে ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারে কী ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে সিনেট কমার্স সাবকমিটিতে শুনানিতে মঙ্গলবার উপস্থিত হওয়ার কথা ফেসবুকের সাবেক কর্মী ফ্রাঁসোয়া হুগেনের। এই সাবকমিটির চেয়ার ও ডেমোক্রেটিক সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্টাল বলেছেন, এই সাক্ষ্য হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সাক্ষ্য দিয়ে এটা অনুধাবন করা যাবে যে, ফেসবুক প্লাটফরম কিভাবে যুব সমাজের জন্য ক্ষতিকর। সূত্র : রয়টার্স, আনাদোলু, আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।