মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মারাত্মক ঘটনা যোগীরাজ্যে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয়ে চাপা পড়ে ২ কৃষকের মৃত্যু ও ২ কৃষককে গুলি করে মারার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশের লখিমপুর খেরিতে। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার পর সংঘর্ষে গতকাল পর্যন্ত ৪ কৃষক, একজন সাংবাদিক ও আরো ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে লখিমপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় বিক্ষোভের আঁচ পৌঁছেছে যোগীরাজ্যের রাজ্যে লাক্ষেèৗয়। রাস্তায় প্রতিবাদ শুরু করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে উত্তরপ্রদেশের রাজধানী। লখিমপুরের পরে এবার রাজ্যের রাজধানীতেও জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে দিল্লি-লখনউ জাতীয় সড়কের উপরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন কৃষকরা। তার ফলে অবরুদ্ধ জাতীয় সড়ক। গতকাল সকালেই লখিমপুরে যাওয়ার চেষ্টা করেন সমাজবাদী পার্টি নেতা তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। তাঁকে বাধা দেয় পুলিশ। বাধা পেয়ে রাস্তার মধ্যে ধরনা শুরু করেন তিনি। তাঁকে আটক করে লাক্ষেèৗ পুলিশ। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। লখিমপুরের ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘উত্তরপ্রদেশে কিলিং রাজ চলছে। সেখানে নির্মমভাবে কৃষকদের হত্যা করা হয়েছে। যা হয়েছে তা খুবই অমানবিক, দুর্ভাগ্যজনক, নির্দয়।’ পাশাপাশি তার তোপ, ‘বাংলায় সবাই খুশি মতো চলে আসে। কিন্তু ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে রেখেছে। নিজেদের রাজ্যে কাউকে ঢুকতে দেয় না।’ রোববারই ঘটনা জানাজানি হতে টুইটারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। লিখেছিলেন যে, ‘লখিমপুর খেরির ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করছি। কৃষকদের প্রতি বিজেপি-র উদাসীন মনোভাব আমাকে যন্ত্রণা দিয়েছে। সোমবার তৃণমূলের পাঁচ সাংসদের দল আক্রান্ত কৃষক পরিবারের সঙ্গে দেখা করবে। আমাদের কৃষকদের আমরা নিঃশর্ত সমর্থন করছি।’
গতকাল সকালেই উত্তরপ্রদেশের উদ্দেশে রওনা হন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। ওই দলে ছিলেন, সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, দোলা সেন, প্রতিমা মণ্ডল, আবির রঞ্জন বিশ্বাস এবং সুস্মিতা দেব। ইতোমধ্যেই লখিমপুরে যেতে গিয়ে আটক কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। অনশন শুরু করেছেন তিনি। গ্রেফতার অখিলেশ যাদব। ফলে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা আদৌ পৌঁছতে পারবেন কিনা তা নিয়েই সংশয় রয়েছে।
লখিমপুরে কৃষক হত্যার ঘটনায় উত্তাপ বাড়ছে। চাপ বাড়ছে যোগী সরকারের ওপর। ইতোমধ্যেই মৃত কৃষকদের পরবিরাবর্গকে ৪৫ লাখ ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। আশ্বাস দিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে গোটা ঘটনার তদন্তের। তবে, যোগী সরকারের এই ক্ষতিপূরণের রাজনীতির প্রতিবাদ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
উত্তরপ্রদেশের লখিমপুরে রোববার কৃষকদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলন চলছিল। সেই সময়ে ওই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিসের গাড়িসহ মোট ৩টি এসইউভি। অভিযোগ, কৃষকদের ভিড় দেখেও দাঁড়ায়নি গাড়ি। গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় আট কৃষকের। এরপরেই উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। দিনভর লখিমপুরে চলে প্রবল বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের দাবি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলেই একটি গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
যদিও, দুর্ঘটনার সময় তার ছেলে আশিস সেখানে ছিলেন না বলেই দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেছেন যে, ‘আট নিহতের মধ্যে চারজন হলেন বিজেপি কর্মী এবং একজন গাড়ির চালক। এঁরা আন্দোলনকারী কৃষকদের তলোয়ার ও লাঠি নিয়ে হামলার জেরে নিহত হয়েছেন।’
এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। সংঘর্ষে ৪ কৃষকসহ মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত এক সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে গতকাল। ঘটনার পরপরই প্রতিবাদে নামে বিরোধীরা। উপনির্বাচনে বিপুল জয় পাওয়ার দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে লেখেন, ‘লখিমপুর খেরির বর্ররোচিত ঘটনার আমি তীব্র বিরোধিতা করছি। কৃষকদের প্রতি বিজেপি-র উদাসীন মনোভাব আমাকে গভীর যন্ত্রণা দিয়েছে’। এদিন তৃণমূলের পাঁচ সাংসদের দল আক্রান্ত কৃষক পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে রওনা দেন। কিন্তু ১৪৪ ধারা জারির কারণে তারা সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। প্রতিনিধি দলে ছিলেন তৃণমূলের কাকলী ঘোষ দস্তিদার, দোলা সেন, প্রতিমা মণ্ডল, আবীর রঞ্জন এবং সুস্মিতা দেব।
লখিমপুরের ঘটনার পর আরো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে বিক্ষোভরত কৃষকরা। ঘটনার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে কৃষকদের সংগঠন সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলাশাসকের অফিসের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে প্রতিবাদী কৃষকরা উত্তরপ্রদেশে আসতে শুরু করেছেন। ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়েছে ওই কৃষক সংগঠনের তরফে। ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিলেও স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, গোলমাল এড়াতে লখিমপুর খেরি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হতে পারে। ফলে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পর্যন্ত যেতে পারবেন কিনা সেটাই এখন দেখার। প্রসঙ্গত, গতকাল লখিমপুর যাওয়ার চেষ্টা করেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। ভোর হওয়ার আগেই তিনি রওনা দেন লখিমপুরের উদ্দেশে। কিন্তু তাকে বহু জায়গায় বাধা দেওয়া হয় বলে খবর।
রোববার মধ্যরাতে এ বিষয়ে একটি টুইটও করেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি লেখেন, ‘এটা কৃষকের দেশ, ইঔচ-র দেশ না। আমি লখিমপুর গিয়ে কোনো অপরাধ করছি না। আমি শুধু আক্রান্তদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যেতে চাই। তা সত্ত্বেও আমাকে থামানো হচ্ছে কেন’? জানা গেছে, পুলিশ তাঁকে হেফাজতে নিয়েছে ও তাঁকে জেলা পুলিশের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘কৃষকদের নিধন করতে রাজনীতির ব্যবহার এই সরকারের। এদিনের ঘটনা এটাই দেখিয়ে দিল। এটা কৃষকদের দেশ, বিজেপির নয়’। এরপরেই উপস্থিত পুলিশ অফিসারদের প্রিয়াঙ্কার প্রশ্ন, ‘স্বজনহারা পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলাম। কোনো অপরাধ করছি না। আমাদের বাধা দিচ্ছেন কেন? আপনাদের ওয়ারেন্ট থাকা উচিত’।
এদিকে, এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাক্ষেèৗ থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সীতাপুরের একটি গেস্ট হাউজে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে আটকে রাখা হয়েছে। প্রকাশিত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, প্রাদেশিক অস্ত্র কনস্টেবুলারির গেস্ট হাউজে রুম পরিষ্কার করছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সেই রুমেই তিনি এদিন আটক ছিলেন। তার দলের এক সদস্য বলেন, ‘যে ঘরে তাকে (প্রিয়াঙ্কা গান্ধী) রাখা হয়েছে তা নোংরা ছিল, তিন নিজেই রুমটি পরিষ্কার করেছেন।’ কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা গেস্ট হাউজের বাইরে অবস্থান নিয়ে তাদের নেত্রীর আটকের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, নিউজ১৮, এনডিটিভি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।