Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চলতি মাসে খুলে দেয়া হবে সব বিশ্ববিদ্যালয়

সাংবাদিকদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব বেতন বকেয়ায় বাতিল হবে পৌরসভা নিয়োগ দেওয়া হবে প্রশাসক অবৈধ ধর্মঘটে চাকরিচ্যুতি-কারাদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

একসঙ্গে এক বছর সময় বেতন-ভাতা বকেয়া রাখলে পৌরসভা বাতিলের বিধান রেখে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) আইন, ২০২১ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে মেয়রের ৫ বছরের মেয়াদ শেষে নির্বাচন না হলে পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধিত আইনে। এছাড়া কোনো পরিষেবাকে অত্যাবশ্যক ঘোষণার পর কর্মীরা বেআইনিভাবে ধর্মঘট ডাকলে তাদের চাকরিচ্যুতির সঙ্গে সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেলের বিধান রেখে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন, ২০২১’ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংশোধিত আইন অনুযায়ী, পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। পৌরসভার সচিব এর নাম পরিবর্তন করে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালের পৌরসভা আইনে একটা অপূর্ণতা ছিল। এই জিনিসটা কেউ খেয়াল করেনি। নির্বাচিত পৌরসভার সময়সীমা ছিল ৫ বছর। কিন্তু সেখানে একটা বিধান ছিল যে ৫ বছর হলেও পরবর্তী পৌরসভার নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ওই মেয়র কন্টিনিউ করবে। এতে দেখা গেল অনেক জায়গাতে ৫ বছরের পরে বিভিন্ন ইস্যুতে মেয়ররা মামলা-মোকাদ্দমা করে ১২ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত মেয়র থেকে যাচ্ছেন। কিন্তু যেহেতু আইনে কোনো কিছু ক্লিয়ার ছিল না সেজন্য কিছু করা যাচ্ছিল না। দোহারে মনে হয় ১৫ বছর ধরে মেয়র আছেন। কিছুই করা যাচ্ছিল না। হাইকোর্ট থেকেও তাদের পক্ষে রায় ছিল। বেশ কিছুদিন থেকে মন্ত্রিসভায় এটা নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এর আগে একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আজকে এই আইনের মধ্যে ওই বিধানটা সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে। ৫ বছর যখন শেষ হয়ে যাবে তখন মেয়র ও ওনার কাউন্সিল বাতিল হয়ে যাবে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সেক্ষেত্রে (বাতিলের পর) প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো কর্মকর্তা বা সরকার যদি কোনো ব্যক্তিকে যোগ্য মনে করেন, ছয় মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবেন। ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এই বিধানটা পৌরসভা আইনে ছিল না।
তিনি বলেন, এখন পরিষ্কার হয়ে গেল পৌরসভায় ৫ বছরের বেশি কেউ (মেয়র ও কাউন্সিলর) থাকতে পারবে না। আগে পৌরসভা করার জন্য প্রতি কিলোমিটারে দেড় হাজার লোক থাকার একটা শর্ত ছিল, সেটা দুই হাজার করে দেওয়া হয়েছে। এতে ট্যাক্স কালেকশনটা বাড়বে, কাজকর্ম বেশি হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি একসঙ্গে ১২ মাস বকেয়া থাকলে ওই পৌরসভা বাতিল করা যাবে। বর্তমানে ৮০ শতাংশ পৌরসভা বেতন-ভাতা দিতে পারছে। সমস্যাটা এখন অনেক কমে আসছে। আগে পৌরসভা করার জন্য প্রতি কিলোমিটারে দেড় হাজার লোক থাকার একটা শর্ত ছিল। সেই সংখ্যা দুই হাজার করে দেওয়া হয়েছে। এতে ট্যাক্স কালেকশন বাড়বে, কাজকর্ম বেশি হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবন বলেন, কোনো পরিষেবাকে অত্যাবশ্যক ঘোষণার পর কর্মীরা বেআইনিভাবে ধর্মঘট ডাকলে তাদের চাকরিচ্যুতির সঙ্গে সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেলের বিধান রেখে অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন, ২০২১ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের দুটো আইন ছিল। এসেনশিয়াল সার্ভিসেস মেনটেন্যান্স অ্যাক্ট, ১৯৫২’ ও ‘দি এসেনশিয়াল সার্ভিসেস (সেকেন্ড) অর্ডিন্যান্স ১৯৫৮’ এ দুটোকে একসঙ্গে করে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইন পাস হলে সরকার কোনো সময় যদি প্রয়োজন হয় বিভিন্ন সার্ভিসকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা করতে পারবে। এটা ঘোষণা করলে সেখানে স্ট্রাইক (ধর্মঘট) করা যাবে না, বন্ধও করা যাবে না। মালিকরা লে-অফও করতে পারবে না। অত্যাবশ্যক করতে বুঝায় যেমন ডাক, টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট সেবা, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব ডিজিটালসেবা, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল, ডিজিটাল আর্থিক সেবা, বিদ্যুৎ উপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজ। জল, স্থল ও আকাশ পাশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, বিমানবন্দর পরিচালনা, স্থল ও নদীবন্দর পরিচালনা, কাস্টমসের মাধ্যমে কোনো পণ্য ও যাত্রীর পণ্য ছাড় করার কাজ, সশস্ত্র বাহিনীর কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কার্যক্রম, প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম বা খাদ্যদ্রব্য ক্রয়, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রমÑ সরকার যদি মনে করে কোনো কারণে কখনো এগুলোকে অত্যবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করতে হবে, তবে ঘোষণা করতে পারবে। সেই ঘোষণা সর্বোচ্চ ৬ মাসের জন্য কার্যকর থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইন ভাঙলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। শ্রমিক পর্যায়ে কেউ আইন ভাঙলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা ৬ মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। মালিক পর্যায়ে আইন ভাঙলে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হবে। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে ধর্মঘট করলে তাকে বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা অর্থাৎ চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হবে। এছাড়া তাকে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আচকের বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিনারিও কি সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে কেন দেরি হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলে। আশাপ্রকাশ করছি যে, এ মাসের মধ্যে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। একটা প্রাক্টিক্যাল প্রবলেম হলো ম্যানেজমেন্ট। হলগুলোর অবস্থা তো খুবই খারাপ। দুই বছর যেহেতু বন্ধ ছিল সুতরাং হলগুলো খুলে রিনোভেন্ট করে ছাত্রছাত্রীদের জিনিসপত্র বা বিছানাপত্র কতটুকু ব্যবহার উপযোগী আছে, সেগুলো দেখতে হবে। অ্যাপারেন্টলি মনে হচ্ছে যে, এটাই অন্যতম বড় একটা কারণ ইউনিভার্সিটিগুলো খুলতে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্কুল-কলেজ তো আমরা খুলে দিয়েছি, পরীক্ষাও তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ইনশিওর করেছেন যে, পরীক্ষা নিতে কোনো অসুবিধা হবে না, যেগুলো অলরেডি ডিক্লেয়ার করা হয়েছে। যদি ম্যাসিভ কোনো ডিটুরেশন না হয়, এই সিনারিও কন্টিনিউ থাকলে বা স্ট্যাবল থাকলে ইনশাল্লাহ যেভাবে পরীক্ষা ডিক্লেয়ার করা হয়েছে। সেটা নিয়ে নেওয়া হবে।
তিনি জানান, ভ্যাকসিনের বিষয়ে ১৮ বছর পর্যন্ত বলা হচ্ছে। ১৮ বছরের নিচের বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দেওয়া যায় কি-না তার টেকনিক্যাল বিষয় দেখে এক্সপ্লোর করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্ববিদ্যালয়


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ