Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণি সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই

মো. ইব্রাহিম, শেখ খাগড়াছড়ি থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

খাগড়াছড়ির পাহাড়ি অঞ্চলের এখন আর চোখে পড়ে না বন্যপ্রাণি। এক সময় নানা প্রাণির বিচরণ ছিল এখানে। হরিণ, হাতি, বন মোরগ, শিয়াল, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রাণি ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে গভীর অরণ্যে। কিন্তু ক্রমাগত বন ধ্বংস, বৃক্ষ নিধন এবং জুম চাষের জন্য পাহাড় পোড়ানোর কারণে ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে অনেক বনের পশু পাখি। শিকারীদের অপতৎপরতা আর এক সময়ের অভয়ারণ্য হারিয়ে যাওয়ায় বন্যপ্রাণি শূন্য হয়ে গেছে এখানকার পাহাড়গুলো। বন বিভাগ বলছে, জনসংখ্যা বাড়ার কারণে বন কমছে, ফলে বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য দখল হওয়ায় তারা অন্যত্র ছুটছে। স্থানীয় উপজাতিরা জানায়, তারা দুই যুগ আগেও এসব পাহাড়ে দেখেছে হাতি, চিতাবাঘ ও ভাল্লুকের মতো প্রাণি। খুব কম সময়ের ব্যবধানে কেবল এসব প্রাণিই হারিয়ে যায়নি, হারিয়ে যেতে বসেছে খুব পরিচিত হরিণ, সজারু, বনরুই, খরগোশ, খেকশিয়ালও। এখন আর আগের মতো দেখা যায় না বানর, বন শুকর, বন হাঁস-মুরগি প্রভৃতি প্রজাতির জীবজন্তু। দীঘিনালার রিজার্ভ ফরেস্টভুক্ত ইয়ারিংছড়ি এলাকার অংসা মামা ইনকিলাবকে জানান, এক সময় জঙ্গলে দেখা যেত হাতি, চিতাবাঘ, ভাল্লুকসহ বিভিন্ন জীব। এখন তো গোটা পাহাড় খুঁজে একটি হরিণ পাওয়াও দুঃসাধ্য। পানছড়ির লোগাং সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা সবিতা চাকমা বলেন, আগের মতো হাতি, হরিণ, খরগোশ দেখি না। বসতির বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে বনের এসব জীবগুলো হয়ত আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকার পুরনো বাসিন্দারা জানায়, আগে বনে বনে ঢাকা ছিল পাহাড়ি অঞ্চল। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের সহযোগিতায় রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ উজাড় শেষ করে এখন প্রাকৃতিক বন, পাহাড়ের অংশীদারিত্বমূলক বনের গাছ কাটা চলছে। ফলে আগের মতো পাহাড় ও বনের অস্তিত্ব নেই। খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক প্রদীপ চৌধুরী জানান, অব্যাহত বৃক্ষ নিধন ও বনের প্রাণিগুলোর প্রতি মানুষের নিষ্ঠুর আচরণের কারণে অভয়ারণ্য বিনষ্ট হয়েছে। ফলে প্রাণিরা পালিয়েছে। এতে পার্বত্য অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য হারিয়েছে।
ওপাহারের এক কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রাণির সহজাত পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় জীবজন্তুরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। পাহাড়ের প্রাণিরা অভয়ারণ্যের খোঁজে চলে যাওয়ায় কেবল পরিবেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ইকো-সিস্টেম নষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের পার্বত্যাঞ্চলে অতিথি আপ্যায়ন, উপঢৌকন প্রদান, প্রভৃতি উদ্দেশ্যে এক শ্রেণির মানুষ শিকারিদের বড় অঙ্কের টাকা অগ্রীম দিয়ে রাখে।
বর্তমানে বন্যপ্রাণি রক্ষা আইনে সবরকম বন্য পশুপাখি ধরা, হত্যা, পালন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও বিশেষ করে উপজাতিরা বনমোরগ-মুরগি ধরা অব্যাহত রেখেছে। তারা ফাঁদ পেতে এদের শিকার করে। আবার কখনো শস্যদানায় বিষ মিশিয়ে এদের খাইয়ে দেয়। বিষের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে বনমোরগ নিজের ধারালো নখর দিয়ে নিজেরই শ্বাসনালী ছিড়ে আত্মহত্যা করে। বনমোরগ-মুরগি পার্বত্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল, গারো পাহাড়ে টিকে আছে। এদের রক্ষায় বন বিভাগের নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বিশেষ করে উপজাতিদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম ইনকিলাবকে বলেন, খাগড়াছড়ির পাহাড়-জঙ্গলে বনের জীবজন্তুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হ্রাস পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান হরিণ, বানর আর শুকর ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাণি খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাঙামাটি ও বান্দরবানে গুটিকয়েক হাতি থাকতে পারে। তিনি এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বন কমে আসায় মূলত বন্যপ্রাণি হারিয়ে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যপ্রাণি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ