মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্বব্যাপী বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম টানা ৬ দিন বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়েছে। এটি গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ - এবং এর উত্থান কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বেইজিং থেকে ব্রিটেন পর্যন্ত বিস্তৃত সঙ্কটের মধ্যে, বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, তেলের দাম ব্যারেল প্রতি তিন অঙ্কে চলে যেতে পারে। তেলের বিশ্বব্যাপী চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি, কোভিড নিয়ে কিছু ভাল খবর (টিকায় উন্নতি এবং ডেল্টার ঝুঁকি কমে যাওয়া), এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃত্তে কিছু খারাপ খবর (আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইনে সমস্যা), সবই দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন এবং রাশিয়া (ওপেক+) সহ তার মিত্ররা সরবরাহ সীমিত রেখেছে। কিন্তু চাহিদা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এই বছর ব্রেন্ট ক্রুড ওয়েলের দাম এই বছর ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের পরে যা সর্বোচ্চ। ইতিমধ্যে, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং বিদ্যুতের দামও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, অনেকে মনে করেন স্পিলওভারের প্রভাব তেলের দাম আরও বাড়িয়ে দেবে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পণ্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ট্রাফিগুরা গ্রুপ জানিয়েছে, এটা পরিষ্কার যে বিশ্ব শীতকালে আরও বেশি তেলের দাম দেখবে। ট্রাফিগুরার তেল ব্যবসার সহ-প্রধান বেন লাকক ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘আমি আগামী দুই বছরের মধ্যে উচ্চমূল্য ছাড়া আর কিছু দেখার জন্য সংগ্রাম করছি।’ একটি সম্ভাব্য মূল্য চালক হ’ল উচ্চ প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম, যা জানুয়ারি থেকে ৩০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। কমনওয়েলথ ব্যাঙ্ক অফ অস্ট্রেলিয়ার বিশ্লেষক বিবেক ধর এক নোটে বলেন, ‘এটি কিছু ভোক্তাকে তেলের দিকে যেতে বাধ্য করতে পারে, যার ফলে অপরিশোধিত তেলের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৫ লাখ ব্যারেল বাড়িয়ে দেয়।
গোল্ডম্যান স্যাকস গত সপ্তাহে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, ব্রেন্টের দাম ৯০ ডলার প্রতি ব্যারেল ছাড়িয়ে যাবে। এক বিবৃতিকে তারা বলেছে, ‘যদিও আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ধরে রেখেছি, তবে বর্তমান বৈশ্বিক সরবরাহ-চাহিদার ঘাটতি আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি।’ ট্রাফিগুরার লাকক বলেছেন যে, ব্রেন্ট ১০০ ডলার হলেও তিনি অবাক হবেন না। এবং ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকা গ্লোবাল রিসার্চ বিশ্লেষক পল সিয়ানা আরও বেশি বৃদ্ধি দেখছেন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট, ইউএস স্ট্যান্ডার্ডের দাম এক ধরণের খারাপ পরিস্থিতিতে ১১৬ ডলার প্রতি ব্যারেল পর্যন্ত যেতে পারে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শেল তেলের উৎপাদন হ্রাস, মেক্সিকো উপসাগরে হারিকেনের কারণে সরবরাহব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটা ও চাহিদা বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি তেলের দাম এভাবে বাড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো তেল উৎপাদন হ্রাস করার কারণেও তেলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার শীতকালে তাপমাত্রা বেশি কমে গেলে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
জ্বালানির এই ক্রমবর্ধমান দরবৃদ্ধির কারণে হোয়াইট হাউস ইতিমধ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যে জ্বালানির এই ক্রমবর্ধমান দরবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে বাইডেন প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক জেইক সালিভান মধ্যপ্রাচ্যে গেছেন। সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি, যদিও অ্যাজেন্ডায় তেলের দাম আছে কি না, তা জানা যায়নি।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন পাসকি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন সর্বতোভাবে তেলের দাম কমানোর চেষ্টা করছে। এ ছাড়া ওপেকের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতামূলক বাজার এবং মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এই সময় তেলের দাম বাড়তি থাকা ঠিক হবে না। আসন্ন শীতে তেলের চাহিদা দিনে ৫ লাখ ব্যারেল ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে বিশ্বের বৃহত্তম তেল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ভিটল গ্রুপ।
তেলের চাহিদা বৃদ্ধির আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে চীনা সরকারের নীতিগত অবস্থান। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে ধাপে ধাপে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটিতে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে। তারা বেইজিংয়ের বায়ু যতটা সম্ভব নির্মল রাখার চেষ্টা করছে। সে জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে তারা আরও বেশি তেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তারা বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি তেল আমদানিকারক। তাদের চাহিদা বৃদ্ধি মানে তেলের বাজার আরও রমরমা হওয়া। অন্যদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ ভারতও গত তিন মাসে তেল আমদানি বৃদ্ধি করেছে। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ থেকে দেশটি বেরিয়ে এসেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। তাদের ধারণা, ভবিষ্যতে তেলের চাহিদা আরও বাড়বে। সূত্র: ফরচুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।