পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সমাজের সর্বস্তরে মাদকের বিস্তার লাভ করেছে। মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ইসলাম মাদককে পরিপূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। পবিত্র কোরআন কারিমে মাদক নিষিদ্ধের বিষয়টি তিনটি ধাপে এসেছে। প্রথমে বলা হয়েছে, ‘লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, এগুলোর মধ্যে আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য অপকারও, কিন্তু এগুলোতে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২১৯)। আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেছেন, শিশুকাল যৌবনকাল আর বার্ধক্য সবই আল্লাহ তায়ালার দান। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের দুর্বলরূপে সৃষ্টি করেন, অতঃপর দুর্বলতার পর তিনি শক্তি দান করেন, শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৫৪। ইসলামে মানবাধিকারের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব ধরনের মানুষের অধিকার রক্ষা করেছে ইসলাম। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বৃদ্ধদের প্রতি যতœ নেয়ার বিষয়ে রয়েছে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে মুমিনের বয়স বৃদ্ধি তার প্রভূত কল্যাণই বয়ে আনে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৮২) । একবার মুআজ (রা.) নামাজে কেরাত লম্বা করেছিলেন। মুসল্লিরা অভিযোগ করলে নবীজি (সা.) বললেন, তুমি লম্বা কেরাত পড়ছ অথচ তোমার পেছনে মুরব্বি, বয়স্ক ব্যক্তি এবং দুর্বল শ্রেণির মানুষরাও নামাজ পড়ছে। (বুখারি, হাদিস : ৭০৫)। ইসলাম বয়স্ক ব্যক্তিদের সেবাযতেœর প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের (বিরক্তিসূচক শব্দ) ‘উফ’ বলোনা এবং তাদের ভর্কোরো না; বরং তাদের সঙ্গে বলো সম্মানসূচক নম্র কথা। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)। পেশ ইমাম বলেন, আজ সমাজের সর্বস্তরে মাদকের বিস্তার লাভ করেছে। মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ইসলাম মাদককে পরিপূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে।
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, পূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, এগুলো শয়তানের কার্য। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো’ (সুরা-৫ মায়েদা, আয়াত: ৯০)। সর্বশেষে ঘোষণা করা হলো, ‘শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রæতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদিগকে আল্লাহর স্মরণে ও নামাজে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না?’ (সুরা-৫ মায়েদা, আয়াত: ৯১)। সাহাবি হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলো ইলম লোপ পাবে, অজ্ঞানতার বিস্তার ঘটবে, মদ্যপান ও মাদকের প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে’ (বুখারি, প্রথম খÐ, হাদিস: ৮০)। মাদকের বিষাক্ত ছোবল থেকে আমাদের সমাজকে বাঁচাতে শুধু মাদক ব্যবসায়ী নয়, মাদকসেবীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালাতে হবে। তাদের মধ্যে আল্লাহভীতি তৈরি ও ধর্মীয় জীবনযাপনে অভ্যস্ত করাতে হবে। শুধু ইয়াবা নয়, নেশাজাতীয় সকল দ্রব্যের উৎপাদন ও বেচাকেনা নিষিদ্ধ করতে হবে।
ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, হিজরী বছরের গুরুত্বপূর্ণ মাস সফরের শেষ প্রান্তে আমরা উপনীত। আগামী বুধবার অর্থাৎ সফরের শেষ বুধবারকে আখেরী চাহার শোমবাহ বলা হয়। এটি ফার্সি শব্দ। বলা হয়, রাসুল (সা.) যে অসুস্থতার কারণে রবিউল আউয়াল মাসের শুরু ভাগে ইন্তেকাল করেন, সে অসুস্থতা থেকে সফর মাসের শেষ বুধবারে অর্থাৎ আখেরী চাহার শোমবায় কিছুটা সুস্থতা বোধ করেছিলেন।
খতিব আরও বলেন, মানুষের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা ঈমানের মতো অমূল্য সম্পদ দান করেছেন তাদের মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে। তারা আল্লাহর প্রিয়ভাজন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি অবশ্যই মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি এবং স্থলে ও সমুদ্রে প্রতিষ্ঠিত করেছি'। (সুরা ইসরা, আয়াত-৭০)। সুতরাং সম্মানিত ও প্রিয় বান্দা হিসেবে আমাদের চলাফেরা ও দৈনন্দিন কাজগুলো আল্লাহ তায়ালার পছন্দনীয় কাজ হওয়া দরকার। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের জান, মাল ও ইজ্জত হারাম। (মুসলিম, হাদীস নং ২৫৬৪)। এ বিষয়ে আমাদের যতœবান হওয়া প্রয়োজন। আমাদের দ্বারা যেন কারও জান, মাল ও ইজ্জতের ক্ষতি না হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।
দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এ খতিব মাওলানা রেজাউল করিম জুমার পূর্বে খুৎবার বয়ানে বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন তুমি আল্লাহকে ভয় করো যেখানেই থাকো না কেন এবং কোন মন্দ কাজ হয়ে গেলে তারপর নেক কাজ করে নাও তাহলে সেই নেক কাজ সেই মন্দ কাজকে মিটিয়ে দিবে আর মানুষের সাথে উত্তম চরিত্রের মোয়ামালা করো। কোরআনে কারীমে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে চলে আল্লাহ তার মুক্তির পথ করে দেন এবং তাকে এমন জায়গা হতে রিযিক প্রদান করেন যার সে ধারনাও করতে পারে না। ( সূরা তালাক) অবশ্যই নেক কাজ মিটিয়ে দেয় মন্দকাজকে (সূরা হুদ)।
পুরোনো ঢাকার বেগম বাজার শাহী মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম আজ জুমার বয়ানে বলেন, সন্তান আল্লাহ পাকের অনেক বড় নেয়ামত। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন, “সম্পদ ও সন্তান দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য।” তবে এই সন্তান যাতে করে সু-সন্তান হয় সে বিষয়ে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম (৬৬) : ৬)। সুতরাং সন্তানদেরকে সু-সন্তান হিসেবে গড়ে তুলে তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাচানো পিতা মাতারদায়িত্ব। কারন সন্তান যদি কু-সন্তান হয় তাহলে এর বোঝা দুনিয়া এবং আখেরাতে পিতা মাতাকেই বহন রতে হবে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে । তোমাদের প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে তার অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) জনগণের দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ পরিবারের দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। মহিলা তার স্বামীর ঘর ও সন্তানের দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হবে। গোলাম তার মনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল। তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সহীহ বুখারী।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি শিশু ফিতরত (সত্য স্বভাব)-এর উপর জন্মগ্রহণ করে। পরে তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি বানায় কিংবা খ্রিস্টান বানায় কিংবা অগ্নিপূজক বানায়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৫৮)। এ কারনেই সন্তান যদি পথ হারা হয়ে জাহান্নামী হয়ে যায় তাহলে এই আদরের সন্তানই কেয়ামতের মাঠে যাদের কারনে তারা বিপদগামী হয়েছে তাদেরকে এভাবে খুজতে থাকবে। তারা বলতে থাকবে কাফিরেরা বলবে হে আমাদের রাব্ব! যে সব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল তাদের উভয়কে দেখিয়ে দিন, আমরা উভয়কে পদদলিত করব, যাতে তারা লাঞ্ছিত হয়। (সুরা হামীম সেজদা ২৮)। আল্লাহ পাক আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে যতœবান হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।