পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পবিত্র জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন খুবই মর্যাদাপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা সূরা আল-ফজরে ইরশাদ করেন, “শপথ ফজরের, শপথ দশ রাতের”। গুরুত্ব বুঝাতে আল্লাহ তায়ালা যেই দশ রজনী দিয়ে শপথ করেছেন অধিকাংশ তাফসীর কারকগণের মতে সেই দশ রাত্রি বলতে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। জিলহজ্জ মাসের নয় তারিখের দিনে আল্লাহ তায়ালা সবচাইতে বেশী বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে মসজিদের পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতীব মুফতি মুহাম্মদ মুহিববুল্লাহিল বাকী আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, আসন্ন পবিত্র জিলহজ্জ মাসে হজ ও কোরবানি ছাড়া আরো কিছু ইবাদত রয়েছে। কেননা জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন খুবই মর্যাদাপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা সূরা আল-ফজরে বলেন, “শপথ ফজরের, শপথ দশ রাতের”। গুরুত্ব বুঝাতে আল্লাহ তায়ালা যেই দশ রজনী দিয়ে শপথ করেছেন অধিকাংশ তাফসীর কারকগণের মতে সেই দশ রাত্রি বলতে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। হযরত আব্দুলাহ ইবনে ওমর (রা.)বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জিলহজ্জ মাসের প্রথম দিনের আমল অন্য দিনের আমলের চাইতে আল্লাহ তায়ালার কাছে অধিক প্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ। অতএব এই দিন গুলোতে তোমরা বেশী বেশী তাহলীল তথা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়, তাহমিদ তথা আলহামদুলিল্লাহ পড়, তাকবীর তথা আল্লাহু আকবর পড়। আল্লাহ তায়ালা সূরা হজ্জে ইরশাদ করেন- “তারা যেন নির্ধারিত দিন গুলোতে জিকির করেন”। নির্ধারিত দিন বলতে জিলহজ্জ মাসের প্রথম তের দিনের কথা বলা হয়েছে। জিলহজ্জ মাসের প্রথম আটদিন ঘরে-বাইরে, দোকান ও কর্মক্ষেত্রে মৃদুস্বরে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জিকির করা অধিক ফযিলাত পূর্ণ। যেই আমলটি বর্তমানে মুসলমানদের থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তবে নয় তারিখের ফজর থেকে তের তারিখের আছর পর্যন্ত প্রত্যেক নামাজের পরে উচ্চস্বরে তাকবীর পড়া ওয়াজিব। মহিলারা আস্তে আস্তে তাকবীর পড়বেন।
এই দশ দিনের অন্য একটি মুস্তাহাব আমল হলো রোজা রাখা। হযরত হাফসা (রা.) বলেন, আমি চারটি আমল রাসুল (সা.) কে ছাড়তে দেখিনি। আশুরার রোজা, জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের রোজা, প্রত্যেক মাসের চাঁদের তের, চৌদ্দ, পনের তারিখের রোজা, ফজরের দুই রাকা’আত সুন্নাহ। উল্লেখ্য যে, জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের রোজা বলতে প্রথম নয় দিন পূর্ণরোজা, আর কোরবানির দিন কিছু না খেয়ে কোরবানির গোস্ত দিয়ে প্রথমে কিছু খাওয়া মুস্তাহাব তথা দিবসের কিছু অংশ রোজা। এরকমভাবে কোরবানি দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিগণ জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর কোরবানি করা পর্যন্ত নখ-চুল না কাটাও মুস্তাহাব। জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের সব রোজা রাখতে না পারলেও কমপক্ষে জিলহজ্জ মাসের নয় তারিখের রোজা রাখার চেষ্টা করতে হবে। যেহেতু এই রোজার ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেন আল্লাহ তায়ালার কাছে আমি আশা পোষণ করি যে এই রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এক বছর আগে ও পরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। অন্য একটি হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, জিলহজ্জ মাসের নয় তারিখের দিনে আল্লাহ তায়ালা সবচাইতে বেশী বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। যেইদিন গুলোতে আমল করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সেই দিনগুলোতে আমল ও তাওবা করে নিশ্চিত ভাবে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। পেশ ইমাম বলেন, এই পবিত্র দিন গুলোতে আমল ও তাওবার মাধ্যমে করোনা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে বিনয়ের সাথে দোয়া করুন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, পবিত্র জিলহজ্ব মাস মুসলিম উম্মাহর নিকট অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। এ মাসেই মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ঈদ উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা ও ফরজ ইবাদত হজ পালিত হয়। রাব্বুল আলামিনের প্রেম সাগরে ভাসে পবিত্র কাবা প্রাঙ্গন। ত্যাগ ও কোরবানির মহিমায় আল্লাহর মহব্বতের নজীর পেশ করে মুসিলম বিশ্ব। এছাড়াও মুসলিম উম্মাহর জন্য এ মাসে রয়েছে পবিত্র কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত ফযিলত সম্পন্ন বেশ কিছু আমল ও বর্জনীয় কাজ। তন্মধ্যে এ মাসের প্রথম ১০ দিনে রোজা রাখা, রাতে ইবাদত করা, এ সময় চুল-নখ না কাটা, আরাফার দিন রোজা রাখা এবং ৯ জিলহজ্জ থেকে ১৩ জিলহজ্ব আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবীরে তাশরিক (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) বলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন, সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে অস্বীকার করে, তার জেনে রাখা উচিৎ আল্লাহপাক বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ৯৭)। তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন, আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন ও কোরবানি করুন। ( সূরা কাউছার, আয়াত নং ৩)। হযরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২২৬)। তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন, জিলহজ্বের ১ম দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের তুলনায় অধিক প্রিয়, প্রত্যেক দিনের রোজা এক বছরের রোজার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায় (সওয়াব)। (তিরমিজী শরীফ, ১ম খন্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা)। তিনি আরও ইরশাদ করেন, আমি আশাবাদী আল্লাহর কাছে আরাফার দিনের রোজা পূর্ববর্তী ও পরবর্তি এক এক বছরের গুনাহর জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। (মুসলিম : হাদীস নং ১১৬৩ )।
রাসুল (সা.) আরও বলেন, আমার প্রতি আজহার দিন (১০ জিলহজ) ঈদ পালন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যা আল্লাহ এই উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। তখন এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) ! যদি আমার কোরবানির পশু ক্রয়ের সামর্থ্য না থাকে কিংবা আমার কাছে এমন উট বা বকরি থাকে, যার দুধ পান করা বা মাল বহন করার জন্য তা প্রতিপালন করি। আমি কি তা কোরবানি করতে পারি? তিনি বললেন, না। বরং (কোরবানির দিন) তুমি তোমার মাথার চুল, নখ, গোঁফ কেটে ফেলো এবং নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করো। ইহাই আল্লাহর নিকট তোমার কোরবানি। (আবু দাউদ, খন্ড-২, পৃষ্ঠা: ৩০৫)। আল্লাহ তায়ালা সকলকে এ মহিমান্বিত আমল সমূহ করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, ফযিলতপূর্ণ জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন সম্পর্কে কোরআনে কারীমে সূরা ফাজর আল্লাহ তায়ালা বলেন, শপথ ফজরের। শপথ ১০ রাত্রির। এর দ্বারা জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ রাত্রিকে বোঝানো হয়েছে। হাদীসে এসেছে আল্লাহ তায়ালার নিকট জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয় আর কোন এবাদত নেই। এর প্রতি দিনের রোজার এক বছরের রোজার সমতুল্য। আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদত এর সমতুল্য। বিশেষভাবে ৯ তারিখ আরাফার রোজা। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।