পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না, তাদের যারা দাম্ভিক, অহংকারী। (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ৩৬)। ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি লাভে উভয় প্রকার হক সংরক্ষণ করা মানুষের আবশ্যক কর্তব্য। আজ রাজধানীর জুমার নামাজ পূর্ব বয়ানে খতিব এসব কথা বলেন। নগরীর মসজিদগুলোতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেককেই বাইরে রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ পাকের নাফরমানি এবং তার আদেশ নিষেধ অমান্য করার কারণে কবরে শাস্তি ভোগ করতে হবে। বিশেষ করে দুটি গুনাহ গীবত এবং পেশাব থেকে পরিষ্কার পরিছন্নতা অর্জন না করার কারণে কবরে শাস্তি হবে।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে নবী করিম (সা.) একদিন কোথাও যাওয়ার সময় পথে সঙ্গীদের দুইটি কবর দেখিয়ে বলেন, এ দুইটি কবরে আজাব হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এদের একজন পেশাব করে পবিত্র থাকত না এবং অপরজন চোগলখোরি (কুটনামি) করে বেড়াত। বুখারী হাদীস নং৬০৫৫।
সুতরাং আমাদের সকল প্রকার গুনাহ থেকে বাচতে হবে। চোগোলখোরী এবং গীবত থেকে বাচতে হবে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫১। কোন ব্যক্তি তার এক ভাইয়ের মান-সভ্রমের হানি ঘটান তুল্য পাপ’অর্থাৎ গীবত করা চোগোলখোরী করা।
হযরত আবু বারযাহ আল-আসলামী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে সেসব লোক যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে কিন্তু ঈমান অন্তরে প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষ ত্রæটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষ ত্রæটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষ ত্রæটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষ ত্রæটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন; ‘কোরআন শরিফে ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যা তার তিলাওয়াতকারীকে ক্ষমা করে না দেয়া পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশ করতেই থাকবে। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বি ইয়াদিহিল মুলক, অর্থাৎ সুরা মুলক। (আবু দাউদ-১৪০২, তিরমিজি-২৮৯১, ইবনে মাজাহ-৩৭৮৬। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন।
ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনারারি খতিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। মানুষকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রধানতঃ দুটি দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে, একটি হচ্ছে, হাক্কুল্লাহ এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে হাক্কুল ইবাদ। মহান আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত অধিকার বা কর্তব্যকে বলা হয় হাক্কুল্লাহ। যেমন ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্জ ইত্যাদি। হাক্কুল ইবাদ হচ্ছে এক মানুষের প্রতি অন্য মানুষের পারস্পরিক কর্তব্য। ইসলামে যেমন হাক্কুল্লাহর ব্যাপরে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, অনুরূপ ভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে হাক্কুল ইবাদের প্রতিও। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ইবাদত করো আল্লাহর, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার করো মাতা-পিতার সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে, এতিম, মিসকিন, নিকটাত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথি, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না, তাদের যারা দাম্ভিক, অহংকারী। (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ৩৬)।
খতিব বলেন, ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি লাভে উভয় প্রকার হক সংরক্ষণ করা মানুষের আবশ্যক কর্তব্য। রাসুলুল্লাহসহ (সা.) পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসুলগণ সমাজে বাস করেছেন, সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায়, সমাজ উন্নয়নে ভ‚মিকা রেখেছেন। মা-বাবা, ভাই-বোন, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন নিয়েই একটা সমাজ গড়ে ওঠে। পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ব্যতীত কাঙ্খিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। যে কারণে কোরআন-হাদীসে বরংবার এ ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সকল সৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার পরিবারের সদস্যবিশেষ। সৃষ্টজীবের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয় সেই, যে তার পরিবার-পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ করে। (মিশকাত শরীফ)
হাক্কুল ইবাদ পালনের ক্ষেত্রে মানুষর প্রথম কর্তব্য মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের অধিকার আদায় করা। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার সদ্বাচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারী কে? তিনি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি আবারো জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি (সা.) বললেন, ‘তোমার বাবা’। অপর এক বর্ণনায় আছে যে, তিনি (সা.) বলেছেন, তোমার মা, অতঃপর তোমার মা, অতঃপর তোমার মা, অতঃপর তোমার বাবা, তারপর তোমার নিকট আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব। (বুখারী শরীফ) হাদীসে পাড়া প্রতিবেশীর প্রতিও সদ্বাচরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (বুখারী শরীফ)।
পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর ছাড়াও বিপদগ্রস্ত, অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করার নির্দেশ ইসলামে প্রদান করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। অন্য হাদীসে রাসুল (সা.) বলেন, বিধবা ও নিঃস্বদের জন্য উপার্জনকারী আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গকারীর মতো। (মিশকাত শরীফ)।
হক্কুল ইবাদ কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়, বরাং বাধ্যতামূলক। কেউ হাক্কুল ইবাদ আদায় না করলে কিংবা কারো হক নষ্ট করলে তার জন্য অপেক্ষা করছে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি। রাসুল (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে (আসল) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন অনেক নামাজ, রোজা ও জাকাতের নেকি নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু এর সঙ্গে সে এমন অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে। কারও প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারও মাল (অবৈধভাবে) ভক্ষণ করেছে, কারও রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে। অতঃপর অমুক অমুক (অত্যাচারিত) ব্যক্তিকে তার নেকিগুলো দেয়া হবে। পরিশেষে যদি তার নেকি অন্যদের দাবি পূরণ করার আগেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে তাদের পাপরাশি নিয়ে তার ওপর চাপানো হবে। অতঃপর (অন্যদের পাপের বোঝার কারণে) তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (তিরমিযী শরীফ)।
একটি সমাজকে শান্তির নীড় হিসেবে গড়ে তুলতে হাক্কুল ইবাদ আদায়ের বিকল্প নেই। এর মাধ্যমেই পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। সমাজের অবহেলিত, অসহায় মানুষের অধিকার আদায় ও সামাজেকে অনাচার, বৈষম্য-ভেদাভেদ থেকে মুক্ত করা সম্ভব। মহান আল্লাহ আমাদেরকে হাক্কুল ইবাদ আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, বাংলাদেশে আগামী বুধবার পালিত হবে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে এবারও দিবসটি পালন করবে বাংলাদেশ। দিবসটি উপলক্ষে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মূলত কন্যাশিশুর সুরক্ষা, বিকাশ, শিক্ষার অধিকার, পরিপুষ্টি, আইনি সহায়তা, চিকিৎসা সুবিধা ও বৈষম্য থেকে রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে এ দিবসটি পালন করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নারী কিংবা কন্যাশিশুর সুরক্ষায় এত উদ্যোগ এত আয়োজনের পরও তাদের প্রতি অমানবিক সহিংসতা ক্রমশ বেড়েই চলছে। এর কারণ কী? প্রতিকার কিভাবে হবে? সহজ ভাষায় এর উত্তর হলো, নারীর সুরক্ষায় ইসলামের ঐশ্বরিক বিধান না মানাই হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতার কারণ। কোরআন-হাদীসে বর্ণিত নীতিমালা অনুসরণ করার মধ্যেই এর বাস্তব যুগোপযোগী সমাধান এবং প্রতিকার রয়েছে। সন্তান-সন্ততি (ছেলে-মেয়ে উভয়েই) আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত ও শ্রেষ্ঠ উপহার। ইসলাম উভয়কেই আলাদা সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে। কাউকে কারও থেকে ছোট করা হয়নি কিংবা অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়নি। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো অনেক পরিবারে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে ইতিবাচক চোখে দেখা হয় না। অনেকে আবার মেয়ে সন্তানের মায়ের ওপর নাখোশ হন, তাকে নির্যাতন করেন, ঠিকমতো ভরণপোষণ দেন না, তালাক দেন ইত্যাদি। এসব কাজে আল্লাহ তায়ালা ভীষণ অসন্তুষ্ট হন। কারণ সন্তান জন্মদানে মানুষের কোন হাত নেই। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল। (সুরা আশ-শুরা : আয়াত ৪৯-৫০)। সুতরাং সাবধান! কন্যা সন্তান জন্ম নিলেই কোনো নারীকে দোষারোপ করা ঠিক নয়; বরং কন্যা সন্তানের প্রতি সুবিচার করুন। ছেলে সন্তানের মতোই তাকে আদর-যতেœ, মায়া-মমতায় বেড়ে ওঠার সব দায়িত্ব পালন করতে হবে।
খতীব আরও বলেন, ইসলাম কন্যা সন্তানের মর্যাদা সুসংহত করেছে এবং কন্যা সন্তানকে বিশেষ সৌভাগ্য ও বরকতের প্রতীক আখ্যা দিয়েছে। রাসুল সা. মেয়েদের অনেক বেশি ভালোবাসতেন। মেয়েরা ছিল তার আদরের দুলালী। আজীবন তিনি কন্যাদের ভালোবেসেছেন এবং কন্যা সন্তান প্রতিপালনে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। আউফ বিন মালেক আশজায়ি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি মেয়ে রয়েছে, যাদের ওপর সে অর্থ খরচ করে বিয়ে দেয়া অথবা মৃত্যু পর্যন্ত, তবে তারা তার জন্য আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। তখন এক নারী বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আর দুই মেয়ে হলে? তিনি বললেন, দুই মেয়ে হলেও'। (বাইহাকি)। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, ‘কারও যদি তিনটি মেয়ে কিংবা বোন থাকে অথবা দু’টি মেয়ে বা বোন থাকে, আর সে তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে এবং তাদের সঙ্গে সদ্বাচার করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। ’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং : ১১৪০৪)। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।