সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
হো সে ন মো তা লে ব
স্কুলের দেয়াল ঘড়িতে বারটা বাজার সংকেত দিতেই ঢং ঢং করে বেজে উঠল ছুটির ঘণ্টা। সাথে সাথে পুরা তিন তলা থেকে ফুর্তিতে ধিং ধিং করে নামতে শুরু করল লাবনীরা। কেউবা আবার মুখে হাসির ছড়া কাটতে কাটতে বেরিয়ে এলো। ‘আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি, বাসায় গিয়ে খাব মোরা গরম গরম রুটি।’ সত্যি আনন্দ পরম আনন্দ। ক্লাস শেষে ছুটির ঘণ্টা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পরম আনন্দ বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। আর শিশুদের ক্ষেত্রে তো কথাই নেই। লাবনীদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তাই খুশীতে আটখানা হয়ে সবাই জমা হয় মেঘ শিমুল বিদ্যা নিকেতনের গেটে। বারটা বাজতেই কার, বেবী জমা হয় গেটের সামনে। কারণ টানা পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস করার পর শিশুরা ক্লান্ত হয়ে পরে। তাই বাবা মারা নিজেরাই গাড়ি নিয়ে এসে ভিড় জমায় গেটের সামনে। লাবনীরা মধ্যবিত্ত। নিজের গাড়ি নেই। এ জন্য ওর বাবা মাসে এক হাজার টাকা দিয়ে একটি রিকশা রিজার্ভ করে দিয়েছে। ভোরে লাবনীকে নামিয়ে দিয়ে অন্যত্র ট্রিপ মেরে যথা সময় গেটের নারিকেল গাছের নিচে হাজির হয় রিকশা ওয়ালা। এক এক করে সবাই চলে যায় নিজ নিজ বাসায়। মুহূর্তের মধ্যে নিস্তব্ধ হয়ে গেল বিদ্যালয় এলাকা। অপেক্ষা করছে লাবনী পনের মিনিট, বিশ মিনিট, না এক ঘণ্টা পার হয়ে গেল তবুও আসছে না রিকশাওয়ালা। কেন আসছে না, সে কি এক্সিডেন্ট করেছে, নাকি অন্য কিছু, এমনি হাজারো প্রশ্ন ওর মাথায় তালগোল পাকাতে থাকে। নয় বছরের মেয়ে লাবনী। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছাত্র হিসেবে খুবই ভাল। গত বার্ষিক পরীক্ষায় ১ম হয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছে সে। স্কুলটা অবশ্য বাসা থেকে অনেক দূরে। হোক না দূর তবুও তো স্কুলটার একটা সুনাম আছে। প্রতি বছর প্রাইমারী বৃত্তি পরীক্ষায় এখান থেকেই জেলার অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী বৃত্তি পায়। তাছাড়া ১ম, ২য়, ৩য় তো এখান থেকেই হয়। লাবনীর মাও তাই বিরাট আশা নিয়ে ওকে ভর্তি করিয়েছে সেখানে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল রিকশাওয়ালার দেখাই নেই। থাকবে কিভাবে ওর ধারণাটাই তো থিক হয়েছে। প্যাসেঞ্জার নিয়ে একটু দূরে গিয়েছিল কিনা, তাই তাড়াহুড়া করে আসার পথে চৌরাস্তায় হয়েছে বেবীর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ। আহারে বেচারা এখন হাস্পাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লাড়ছে। আর একটু হলে কিনা ঘটনা স্থলেই মারা যেত। লাবনী অগত্যা পায়ে হেঁটে যাত্রা করল। ঠিক এমনি মুহূর্তে একটি সাদা মাইক্রোবাস এসে থামল ওর পাশে। ড্রাইভার মৃদু হেসে বলল খুখু মনি কোথায় যাচ্ছ। লাবনী মলিন মুখে বলল বাসায়। তবে হেঁটে কেন চল আমরা তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেই, বলেই লাবনীকে টেনে তুলল গাড়ীতে। ওকে নিয়েই গাড়ীটি ছাড়ল তুমুল বেগে। ক্ষণিকের মধ্যে শহর থেকে অনেক দূরে চলে গেল ওরা। সূর্য তখন লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বসে আছে। ওদের অবস্থা দেখে লাবনী বুঝতে পারল, ওরা কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে ওর গা ছমছম করে উঠল ও আর ঠিক থাকতে পারল না। কাঁদ কাঁদ স্বরে বলে উঠল- আপনারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন আমি আম্মুর কাছে যাব। -চুপ কোন কথা বলবে না। বলে ভয় দেখাল ওরা। না, লাবনী থামছে না। ও কাঁদছে, গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছে। ও মাকে বাবাকে স্মরণ করছে। স্মরণ করছে সেই টিয়া পাখিটাকে। সাজুই দিয়েছে সেটা ওকে। সাজু ওর মামাত ভাই। ও পাখি পুষতে খুব ভালবাসে। সাজু টিয়া পাখির সাথে কথা বলে, গল্প করে। তাই লাবনীর শখ টিয়া পাখির সাথে কথা বলবে। ছয় মাসে সে পাখিটাকে শুধুমাত্র মেহমানকে সালাম করতে শিখিয়েছে। আর নাইট কুইন নাকি খুব কম ফুটে। যার বাগানে ফুটে তার নাম ও ছবি পত্রিকাতে ছাপা হয়। তাই ওর বিরাট কৌতূহল। শত কষ্ট হলেও গাছটার যতœ ও করবেই। এ জন্য মা-বাবার বকাঝকাও শুনতে হয়েছে অনেক। সেদিন তো গাছটাতে পানি দিতে গিয়ে বালতিটা ছুটে পড়েছিল পায়ের উপর। এখনও ঠিক মত পা-ই ফেলতে পাওে না। আর একটু হলেতো পঙ্গুই হয়ে যেত।
প্রথমে বন্ধুর গিরিপথ পেরিয়ে নিবিড় অরণ্যের আঁকাবাঁকা রাস্তা পাড়ি দিয়ে এক হাজামজা প্রাসাদে। জনমানবশূন্য এক নতুন স্থানে আটকে রাখে ওকে। কক্ষের পাশ দিয়ে নিচের দিকে একটা সিঁড়ি চলে গেছে। তিন দিন পর সেটা দিয়েই স্থানান্তর করা হল লাবনীকে। যেখানে ওর মত অনেক শিশুই রয়েছে, তবে সেখানে আলো নেই, বাতাস নেই। সেখানে কেউ লাবনী বলে ডাকে না, মাথায় স্নেহের হাত বুলায় না। সেখানে আছে হাজারো কোমলমতি শিশুর কান্নার সুর। কিন্তু মাটির নিচের সে চাপা কান্নার সুর একটুও বের হয় না। এমনি নিদারুণ কষ্টে কাটতে থাকে দিন। এক গভীর রাতে কাল পোশাক পরা একদল লোক গেটের সামনে গাড়ী রেখে হুড়মুড় করে ঢুকে পরে সেখানে। তার পর হিন্দি বাংলায় বুলি আওড়াতে থাকে। ওদের চেহারায় একটুও মায়ামমতার ছাপ নেই। বাজ পাখির মত ধরে ধরে উঠাতে থাকে গাড়ীতে। তার পর পাড়ি জমায় অজানার পথে।
হঠাৎ গাড়ীটা এসে থামে একটা জেব্রা ক্রসিংয়ের কাছে। সিগনাল বাতিতে তখন লাল আলো। লাবনী গাড়ীর পাশেই দেখতে পেল এক পুলিশকে। সে চিৎকার করে উঠ্ল, বাঁচান, আমাদেরকে বাঁচান। সাথে সাথে গাড়ীটিকে ঘিরে ফেলল পুলিশ। ধরা পরল অপরাধীরা। লাবনীর সাহসে মুক্তি পেল অনেকগুলো অসহায় শিশু।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।