Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঠাকুরগাঁওয়ে সদ্যখোলা স্কুলে করোনার হানা/৫ স্কুলছাত্রী আক্রান্ত, ক্লাস বন্ধ

ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:১৭ পিএম | আপডেট : ২:০২ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

 

ঠাকুরগাঁওয়ে সদ্যখোলা স্কুলে হানা দিয়েছে মহামারী করোনা। সদর উপজেলার বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঁচজন শিক্ষার্থী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ঐ দুই শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রেখেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কলোনি এলাকায় অবস্থিত ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. ফারহানা পারভীন।

গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির ২ জন ও পঞ্চম শ্রেণির ৩ জন ছাত্রীর করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাদের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়।

করোনায় আক্রান্ত চতুর্থ শ্রেণির ২ জন ও পঞ্চম শ্রেণির ৩ জনের বয়স ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। তারা সবাই মেয়ে শিক্ষার্থী এবং ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবার বালিকার সদস্য।

প্রধান শিক্ষক মোছা. ফারহানা পারভীন বলেন, আমার বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৪২৬ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এরমধ্যে চতুর্থ শ্রেণিতে রয়েছে ৮৪ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে রয়েছে ৭৬ জন ছাত্র-ছাত্রী।

 

তিনি বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় স্কুল খোলা হয়। শিডিউল অনুযায়ী প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া হয়। বিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করার পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নেওয়া হয়।

ফারহানা পারভীন বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) করোনায় আক্রান্ত চতুর্থ শ্রেণির ২ জন ও পঞ্চম শ্রেণির ৩ জন ছাত্রী ক্লাসে উপস্থিত ছিল। কিন্তু সেদিন তাদের মধ্যে করোনার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। বিদ্যালয় থেকে যাওয়ার পর ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবার বালিকা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজখবর নেওয়া হয় ছাত্রীদের। এসময় সরকারি শিশু পরিবার বালিকা কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের ওখানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়েছে। এরপর থেকে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখতে শুরু করি। এছাড়াও বিদ্যালয় খোলার পর থেকে আমরা নিয়মিত প্রত্যেকটি ছাত্র-ছাত্রীর খোঁজখবর রাখছি।

ফারহানা পারভীন বলেন, গত মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) খোঁজ নিলে সরকারি শিশু পরিবার বালিকা কর্তৃপক্ষ জানায় আমাদের স্কুলে পড়ুয়া চতুর্থ শ্রেণির দুইজন ও পঞ্চম শ্রেণির তিনজন ছাত্রী জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়েছে। সেদিন তাদের করোনার নমুনা দেওয়া হয় পরীক্ষার জন্য। বুধবার আমরা জানতে পারি আমাদের স্কুলে পড়ুয়া চতুর্থ শ্রেণির ২ জন ও পঞ্চম শ্রেণির ৩ জন ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।

তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মৌখিক নির্দেশে আপাতত চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে এবং প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম সচল রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবার বালিকার উপ-তত্ত্ববধায়ক মোছা. রিক্তা বানু বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শহরের হাজীপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ১জন ছাত্রী জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও অনেকের পাশাপাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৫ জন ছাত্রী জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়।

গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত শিশু পরিবারের ২৫ জন ছাত্রীর নমুনা পরীক্ষার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৫ জনসহ মোট ১৩ জন ছাত্রীর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। আক্রান্ত সবাই আমাদের শিশু পরিবারের সদস্য।

রিক্তা বানু বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১৩ জন ছাত্রীকে আমরা আলাদাভাবে রেখেছি। তাদেরকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে তারা ভালো আছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা অফিসার মমতাজ ফেরদৌস বলেন, বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ জন ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়। এরপর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আগামী এক সপ্তাহের জন্য ঐ বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রকিবুল আলম চয়ন বলেন, সরকারি শিশু পরিবার বালিকার ১৩ জন ছাত্রীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আমরা তাদেরকে আলাদাভাবে আইসোলেশনে রেখেছি। এর পাশাপাশি আক্রান্তের দিন থেকেই আমরা তাদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। তারা বর্তমানে সুস্থ আছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উপজেলার প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বজায় রেখে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। আমরা সব বিদ্যালয়গুলোকে সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। স্কুলে আশা শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাণ করা হচ্ছে। যদি কোন শিক্ষার্থীর করোনার লক্ষণ দেওয়া যায় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তার নমুনা পরীক্ষা করছি।

তিনি বলেন, যেসব বিদ্যালয়ের শ্রেণির শিক্ষার্থীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, আমরা তাৎক্ষণিক সেসব শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রেখেছি এবং তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ