বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার সাথে সড়ক পথে ঢাকার যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা ফেরিঘাটে নির্মানাধীন কালনা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। একই সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজও। প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে এটি প্রথম দৃষ্টিনন্দন ও ব্যতিক্রমী সেতু হবে। সেতুটি হবে ছয় লেনের। এই সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার অপার সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হবে। বদলে যাবে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা। সেতুটি বাস্তবায়ন হলে নড়াইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন আগামী বছর এ সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। এরই মধ্যে সেতুটির অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। সেতুটি নির্মাণ হলে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব কমবে ১৬০ কিলোমিটার। স্থাপিত হবে বেনাপোল-পদ্মা সেতু-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কের মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে আমদানি-রফতানি পণ্য সরাসরি কালনা এবং পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনে সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কালনা ফেরী ঘাটের দু’পারে আর বসে থেকে জনগণের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। সময় বাঁচবে। কৃষি পরিবহন ও বিপনণ সহজ হবে। এক কথায় বৃদ্ধি পাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, পাল্টে যাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান। ভৌগোলিকভাবে নড়াইল জেলার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে।
প্রকল্পটির প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইলে শিল্পায়নের ছোঁয়া লেগেছে। বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ঢাকা সড়কের হাইওয়ের দুই পাশে নড়াইল অংশে জমির দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এরই মধ্যে নড়াইল অংশে গড়ে উঠেছে কয়েকটি কলকারখানা। কালনা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে নড়াইল অংশ (৩৬ কিলোমিটার) অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে পরিণত হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা মহল। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরে সেতুর পাশে নড়াইলের অংশে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য ৩শ’ একর জমির একটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও প্রস্তাবিত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নড়াইলের সুলতান মঞ্চে এক নির্বাচনী জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এ অঞ্চলের উন্নয়নে লোহাগড়ার কালনা পয়েন্টে সেতু নির্মাণ করা হবে। ওই ঘোষণার আগে ও পরে আন্দোলন-সংগ্রাম, এ অঞ্চলের মানুষের দাবি এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অবশেষে বাস্তবায়ন হতে চলেছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতায় এ সেতু নির্মাণ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ওয়াইবিসি জেভি কোম্পানি ও বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে নড়াইল জেলার সীমান্তবর্তী লোহাগড়া উপজেলার কালনায় এ সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক হবে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মধুমতী নদীর কালনা ফেরিঘাটের লাগোয়া দক্ষিণে হচ্ছে সেতুটি। চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। নদীর পূর্বপাড়ে সংযোগ সড়ক করতে বালি ভরাটের কাজ চলছে। বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট গাড়ির চালকরা জানান, কালনা ফেরিঘাটে নদী পারাপারের জন্য রয়েছে নামমাত্র ফেরিসেবা। অপ্রতুল ফেরি ব্যবস্থার কারণে প্রয়োজন সত্তে¡ও এ ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন অল্পসংখ্যক গাড়ি পার হতে পারে। প্রায়ই নাব্যতা সঙ্কটে পড়ে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নদীর উভয় পাড়ে দীর্ঘ জটে পড়ে যানবাহন। তাই বাধ্য হয়েই ঘুরে মাগুরা, ফরিদপুর হয়ে গাড়ি চলাচল করে। এতে বছরে প্রায় দুই কোটি লিটারের বেশি অতিরিক্ত জ্বালানি তেল খরচ হয়। এছাড়া সময় অপচয় হয় ৫/৬ ঘণ্টা।
সওজের সেতুর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপ্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সংযোগ সড়কের জমি বুঝে পেতে দেরি হওয়ায় সেটির কাজ শুরু হয়েছে দেরিতে। এজন্য একটু পিছিয়ে আছি। তাছাড়া করোনার কারণে কাজে কিছুটা ধীরগতি হয়েছে। জাপানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু টেকনিশিয়ান আসতে পারছেন না। সেতুটির কাজ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে সেতুটির ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন এ কর্মকর্তা। কালনা সেতু নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন কনস্ট্রাকশানের হাইওয়ে প্রকৌশলী মোহাম্মদ জোনায়েদ রাহবার বলেন, করোনার কারণে কাজে কিছুটা ধীরগতি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২০২২ সালে কাজ সমাপ্ত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।