Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেপ্টেম্বরে কালনা সেতু চালু হবে

সড়ক প্রশস্ত না হওয়ায় পদ্মা সেতুর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না

আবদুস ছালাম খান, লোহাগড়া (নড়াইল) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০২২, ১২:১৮ এএম

আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই যানবাহন চলাচলের জন্য কালনা সেতু খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ঢাকা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল-লোহাগড়া-যশোর মহাসড়কের কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদীর উপর নির্মাণাধীন এই কালনা সেতুর কাজ প্রায় ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। তবে মহাসড়কের বিদ্যমান ১৮ ফুট অংশটি ২৪ ফুটে উন্নীতকরণের কাজ এখনও শুরু হয়নি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে বেনাপোল, যশোর, নড়াইল ও লোহাগড়া রুটে নিয়মিত বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। তাছাড়া এ অঞ্চলের ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন পন্যবাহী যানবাহনও এই পথে চলাচল শুরু করেছে। এই মহাসড়কটি ইতিমধ্যেই দেশের ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বেনাপোল যশোর, নড়াইল ও লোহাগড়ার বাস যাত্রীদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু পার হয়ে মাত্র দুই ঘণ্টায় ভাটিয়াপাড়া এসে সংযোগ সড়ক ও কালনাঘাটে ফেরি পার হবার জন্য অন্তত এক ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। অর্থাৎ সড়ক প্রশস্তকরণ ও কালনা সেতু চালু না হওয়ায় পদ্মা সেতুর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ অঞ্চলের মানুষদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পুরোপুরি সুফল পেতে কালনা সেতু চালু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
কালনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা এবং পূর্ব পাড়ে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর লোহাগড়া নড়াইলসহ যশোর বেনাপোল থেকে ঢাকাগামী যানবাহন মাগুরা-ফরিদপুর দৌলতদিয়া আরিচা পার হয়ে ঢাকা যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা সেতু পার হয়ে সংক্ষিপ্ত পথেই ঢাকা যাওয়া শুরু করেছে। সঙ্গত কারণেই এই মহাসড়কে কয়েকগুণ বেশি যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে কালনা সেতু খুলে দেওয়ার সাথেই কালনাঘাটÑযশোর ভায়া লোহাগড়া-নড়াইল মহাসড়কটি দ্রুত প্রশস্ত করা দরকার। অন্যথায় সড়কে যানজটসহ নানা ভোগান্তি ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দুর্ঘটনা বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে।
গত শনিবার সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নদীর পূর্ব পাড়ের সংযোগ সড়কের ভাটিয়াপাড়া গোল চত্ত্বরের কাছে একটি কালভার্টের কাজ চলমান রয়েছে। নদীর পূর্ব পাড়ে ডিজিটাল টোল প্লাজা ও উভয় পার্শ্বে মোট পৌনে চার কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর মাঝখানে ধনুকের মত বাঁকা সুদৃশ্য ডিজাইন করা হয়েছে। যাকে বলা হয় ‘নেলসন লোস আর্চ টাইপের সেতু’।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এটি হবে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এবং প্রশস্ত সেতু। ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। তবে নির্ধারিত মেয়াদের আগেই কালনা সেতু চালুর লক্ষ্য নিয়ে নির্মাণকাজ দিন-রাত দুই শিফটে চলছে। সংশোধিত পরিকল্পনা অনুসারে কালনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। ছয় লেনের এই সেতুতে দ্রুত গতির চার লেনের উভয় পাশে একটি করে লেন কম গতির যানবাহন চলাচলের জন্য থাকবে। সেতু নির্মানে ব্যয় হবে ৯৫৯ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা।
২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি একনেক-এর সভায় মধুমতি নদীর উপর কালনা সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। এ সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৭০ কোটি টাকা এবং সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ৬৮০ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ১৮.২০ মিটার। তখন কালনা সেতু ছিল চার লেনের। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদনের পর কালনা সেতুর সাথে রেললাইন স্থাপনের পরিকল্পনা, জমি অধিগ্রহণ ইত্যাদি নানা জটিলতার কারণে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। অবশেষে পৃথক রেল সেতু নির্মাণসহ সব জটিলতা কাটিয়ে ২০১৮ সালের ২৪ জুন সংশোধিত প্রকল্পে ছয় লেনের সেতু হিসাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তখন প্রকল্পের মেয়াদ ৩৬ মাস ধরে ২০২১ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার সময়ে কাজ বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এশিয়ান হাইওয়ে-১ এর অংশ ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন এই সেতু চালু হলে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে।
কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. আশরাফুজ্জামান জানান, সব জটিলতা কাটিয়ে সেতু নির্মানের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে মোট কাজের ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসেই চালুর আশা নিয়ে রাতদিন দুই শিফটে কাজ চলছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলি এ এম আতিকুল্লাহ জানান, কালনাঘাট থেকে ভাঙ্গুড়া পর্যন্ত বিদ্যমান ১৮ ফুট সড়ককে ২৪ ফুটে উন্নীতকরণ কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডারের জন্য ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ