নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একজন সদস্যের পরিচালিত একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্পষ্টতই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের ‘নিরাপত্তা হুমকি’ সম্পর্কে জানতেন দলটি সফর থেকে বের হওয়ার প্রায় এক মাস আগে। গণমাধ্যমটির মালিক নরেন্দ্র মোদির অধীনে ২০১৬ সালের জুলাই এবং ২০১৮’র অক্টোবরের মধ্যে বিদেশ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নিউজিল্যান্ড একতরফাভাবে শুক্রবার ‘নিরাপত্তা উদ্বেগ’ উল্লেখ করে পাকিস্তান সফর বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাওয়ালপিন্ডিতে এদিনই দু’দলের মধ্যে প্রথম ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) জারি করা এক অফিসিয়াল বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আজকে (শুক্রবারে) আগে, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট আমাদের জানিয়েছে যে, তাদের কিছু নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এবং একতরফাভাবে সিরিজ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’।
‘পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এবং পাকিস্তান সরকার সফরকারী সব দলের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। আমরা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটকেও এর আশ্বাস দিয়েছি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে জানিয়েছিলেন যে, আমাদের কাছে বিশ্বের অন্যতম সেরা গোয়েন্দা ব্যবস্থা রয়েছে এবং সফরকারী দলের জন্য কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নেই’ - পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) জারি করা অফিসিয়াল বিবৃতিতে আরো যোগ করা হয়েছে।
পরদিন (গতকাল শনিবার) পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ বলেন, একটি আন্তর্জাতিক ‘ষড়যন্ত্রের’ অধীনে সফরটি বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন যে, তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের নাম বলবেন না। তবে, তিনি যোগ করেছেন যে, আফগানিস্তানে যা ঘটছে তার পরে কিছু শক্তি পাকিস্তানকে কোরবানির পশু বানাতে চেয়েছিল।
মোবাশ্বের জাভেদ আকবর ওরফে এমজে আকবরের মালিকানাধীন সানডে গার্ডিয়ান লাইভ গত ২১ আগস্ট ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার মুখোমুখি হতে পারে’ শিরোনামে একটি গল্প ফাঁদে। এতে দাবি করে যে, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর ‘সন্ত্রাসের হুমকির মধ্যে রয়েছে’। অস্থিতিশীল অঞ্চলে সক্রিয় অনেক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে একটির দ্বারা সফরকারী ক্রিকেটারদের আক্রান্ত হওয়ার একটি আসন্ন সম্ভাবনা রয়েছে’।
নিষিদ্ধ তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সাবেক মুখপাত্র এহসান উল্লাহ এহসানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, পাকিস্তানের আইএস গোষ্ঠী নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়দের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিনন্দন মিশ্র নামে একজন সাংবাদিক, যিনি ভারতের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র হিসেবে বিবেচিত। ‘সূত্র’ উদ্ধৃত করে ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি মিশ্র জানিয়েছিলেন যে, এহসান পাকিস্তান নিরাপত্তা সংস্থার হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছে।
ভারতীয় সাংবাদিকের ‘উৎস’ নিয়ে ভ্রু কুঁচকে যাওয়ার মাত্র এক মাস পরেই সরকার এ খবরটি নিশ্চিত করে। তার গল্পের নিবিড় পরিদর্শন থেকে জানা যায় যে, তাদের অধিকাংশই নামবিহীন ‘উৎস’ভিত্তিক এবং পাকিস্তান, তার সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ছিল। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বলছেন যে, ভারতের বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট নীতি রয়েছে, যার মধ্যে বিভ্রান্তি এবং অস্থিতিশীলতা মূল উপাদান।
ব্রাসেলস-ভিত্তিক ইইউ ডিসিনফোল্যাবের গবেষকরা ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় ৬৫টিরও বেশি দেশে কমপক্ষে ২৬৫টি ভুয়া স্থানীয় সংবাদ ওয়েবসাইটের উল্লেখ করেন, যা পাকিস্তান (এবং চীন) এর বিরুদ্ধে জনসাধারণের ধারণাকে দমন করার জন্য কাজ করছে। এসব সাইট ভারতীয় প্রভাব নেটওয়ার্কে পরিচালিত এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশী সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের লক্ষ্য করে। ২০২০ সালের মধ্যে এসব ভুয়া নিউজ ওয়েবসাইট - যেমন অপইন্ডিয়া এবং পোস্টকার্ড নিউজ, ১১৬টি দেশের ৭৫০টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। নেটওয়ার্কে অনেক সন্দেহজনক থিংক ট্যাঙ্ক এবং এনজিও অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং প্রায় ১৫ বছর ধরে চলছিল।
বিবিসির একটি প্রতিবেদন (শিরোনাম ‘ইন্ডিয়ান ক্রনিকলস’) এসব ভুয়া নিউজ ওয়েবসাইটের অনেকগুলো ভারতীয় কোম্পানি শ্রীবাস্তব গ্রুপের (এসজি) কাছে খুঁজে পেয়েছে যারা ইউরোপে পাকিস্তানবিরোধী প্রচেষ্টার জন্য তদবির করছে। এর মোডাস অপারেন্ডিতে অন্যান্য মিডিয়া আউটলেট থেকে সিন্ডিকেটেড সংবাদ বিষয়বস্তু কপি করা, মতামত প্রকাশ করা এবং পাকিস্তানের সমালোচনামূলক গল্পগুলো মূলত তাদের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত এনজিওগুলোর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
লক্ষ্য ছিল জেনেভাভিত্তিক জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি) এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মতো সংগঠনগুলোকে পাকিস্তানকে বদনাম করার জন্য প্রভাবিত করা। এসজি ওয়েবসাইট মিথ্যাভাবে তাদের অপ-এডসকে ইউরোপীয় আইনপ্রণেতা এবং ভুয়া সাংবাদিকদের মতো লেখকদের কাছে দায়ী করবে, যার বিষয়বস্তু বেশিরভাগই অন্যান্য উৎস থেকে চুরি করা হয়েছে।
গত মাসে, পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) মুঈদ ইউসুফ একটি সংবাদ সম্মেলনের সময় আফসোস করে বলেছিলেন যে, অনেক ভারতীয় এবং আফগান সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট পাকিস্তানকে কুৎসা রটানোয় জড়িত ছিল। এনএসএ বলেছে যে, সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য নকশাগুলো প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তথ্যের সাহায্যে তার বিশ্লেষণ উপস্থাপন করবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তথ্য দিয়ে সবকিছু প্রকাশ করব এবং বিশ্বকে সে সম্পর্কে বলব। আমরা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করব’।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের ১৪ আগস্ট #ইধষড়পযরংঃধহঝড়ষরফধৎরঃুউধু হ্যাশট্যাগসহ ১৫ হাজার টুইট ভারত থেকে এসেছে। তিনি বলেন, পশতুন তাহাফুজ মুভমেন্ট (পিটিএম) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৫০টি ট্রেন্ড তৈরি করেছে এবং সেগুলো ভারত সমর্থন করেছিল। তিনি আরো বলেন, ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামাজিক প্রচার-প্রচারণা চলছে’।
ফাওয়াদ বলেন যে, অনেক উইকিপিডিয়া পৃষ্ঠা ভারতীয়দের দ্বারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য সম্পাদনা করা হচ্ছে। ‘আমরা আবিষ্কার করেছি যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য ৮৪৫ ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে ... এসব ওয়েবসাইটের ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে’।
এদিকে কিউইদের সরে আসার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শুক্রবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ বলেন, নিউজিল্যান্ডের পাকিস্তান সফর বাতিলের পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে। ১৮ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই অঞ্চলের শান্তির জন্য পাকিস্তানের প্রয়াসকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী দেশের নাম বলেননি তিনি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপের (এসএসজি) ৪ হাজার সদস্য রাওয়ালপিন্ডিতে ম্যাচের জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী জানান, নিউজিল্যান্ড দলের নিরাপত্তা ইনচার্জ সকালে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের হুমকির কথা জানান।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশ্বসেরা উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, তাদের কারও কাছেই কোনো হুমকির তথ্য নেই। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পাকিস্তানকে হেয়ভাবে উপস্থাপন করেছে। তারা চায় না পাকিস্তান সমৃদ্ধি লাভ করুক। ভারতের এমন ষড়যন্ত্র বানচাল করা হবে। আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। এখানে যেকোনো মূল্যে শান্তির পক্ষে কাজ করব।
তিনি আরো জানান, দর্শক ছাড়া ম্যাচ খেলার জন্য নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তবে নিউজিল্যান্ড তাতেও রাজি হয়নি। এ ছাড়া ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেল কিউইদের সফর বাতিল না করার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করেছে, তাতেও তারা রাজি হয়নি। মন্ত্রী আরো বলেন, নিউজিল্যান্ডের নিরাপত্তা দল চার মাস আগে পাকিস্তানে এসে পর্যবেক্ষণ করে সফরটি ঠিক করেছিল। সেটিও আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের অনেক আগেই। ইংল্যান্ড দলের আসন্ন সফর নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব ব্যবস্থা করবে। দেশের ক্রিকেটে নিরাপত্তার কোনো সমস্যা নেই।
এক বিবৃতিতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজেডিসি) তাদের ‘নিরাপত্তা সতর্কতা’র কথা বলে একতরফাভাবে সিরিজ স্থগিত করেছে। এনজেডিসি বলেছে, পাকিস্তানের আয়োজন দুর্দান্ত ছিল। তবে, খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ডন অনলাইন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।