নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী : টস থেকেই সব কিছু গেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। ঢাকায় পা রেখে গরমে অতিষ্ঠ ইংল্যান্ড দল এড়াতে চেয়েছিল প্রথমার্ধে ফিল্ডিং। ভাগ্য তাদের সেই চাওয়াই পূরণ করেছে! টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে প্রখর তাপে ফিল্ডং করতে হয়নি তাদের। ৩৭ দিন আগে নটিংহ্যামে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বরেকর্ড স্কোর (৪৪৪/৩) করেছে ইংল্যান্ড। ওয়ানডেতে এ বছর ১৫ ম্যাচে ৬ টি ৩শ’ প্লাস ইনিংসের সঙ্গে গতকাল ১৬তম ম্যাচে পেলো তারা আর একটি তিনশ’ স্কোর (৩০৯/৮)! এ সময়ে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ৩শ’ পর্যন্ত স্কোর টেনে নেয়া দূরুহ বলে ধরে নিয়েছেন যারা, তাদের চোখে আঙুল দিয়ে বছরটিতে নিজেদের ব্যাটিং ধারাবাহিকতাই প্রদর্শন করলো ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ২০০৫ সালে নটিংহ্যামে ৩৯১/৪ এবং ২০১০ সালে বার্মিংহ্যামে ৩৪৭/৭ স্কোরের রেকর্ড আছে ইংল্যান্ডের। তবে ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের মাটিতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ৩শ’ অতীত ছিল না কখনোই ইংলিশদের।২০১০ সালে চট্টগ্রামে ২৮৪/৫ স্কোরই ছিল এতোদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চÑ সেই স্কোর টপকে গতকাল করেছে তারা ৩০৯/৮! বাজে ফিল্ডিং এবং তিন তিনটি সহজ ক্যাচ ড্রপেই সফরকারীদের স্কোর ফুলে ফেঁপে উঠেছে।
প্রথম পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারে ৫৩ তে সন্তুষ্ট থেকেছে যে দলটি, দলের স্কোর ২শ’ পর্যন্ত স্ট্রাইক রেট যাদের ১০০’র নীচেÑতারাই কিনা সøগে বেপোরোয়া! শেষ ৬০ বলে ৮৯ রান, শেষ ৩০ বলে ৬৪ রান করেছে যোগ! ওভারপ্রতি রান নিয়ে গেল জস বাটলারের দল ৬.১৮ এ! কিভাবে সম্ভব হলো তা? এ প্রশ্নের প্রথম উত্তর ৪৭ থেকে ৪৯Ñএই তিন ওভারের ব্যাটিং। যে তিন ওভারে ৪৮ রান খরচা করেছে বাংলাদেশ বোলাররা। ৪৭তম ওভারে হাফ পীচে যেয়ে সাকিবকে ৫ম এবং ৬ষ্ঠ বলে লং অনের উপর দিয়ে বাটলারের দু’টি ছক্কা,সেই ওভারে ১৬ রান খরচায় সফরকারীদের ছন্দে এনেছে বাংলাদেশ দল। বাটলার ঝড়ে ৪৮তম ওভারে শফিউলের খরচা সেখানে ১৯ রান,৪৯তম ওভারে তাসকিনও করেছেন অনিয়ন্ত্রিত বোলিং (১৩ রান খরচা)। এই তিন ওভারই ইংল্যান্ডকে দিয়েছে ছন্দময় ব্যাটিংয়ে প্রেরনা। জানেন, ২৫১ থেকে ৩০০Ñ এই ৫০ রানে খেলেছে তারা মাত্র ২১টি বল!
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৫তম ম্যাচে এসে প্রথম সেঞ্চুরির মুখ দেখেছেন মিডল অর্ডার বেন স্টোকস। ৯৮ বলে ৬ চার ৪ ছক্কায় শোভিত এই সেঞ্চুরিই আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম দেখায় করেছেন উদযাপন তিনি। ওয়ানডে অভিষেকেই জাত চিনিয়েছেন বেন ডাকেটÑ৭৮ বলে ৬ বাউন্ডারিতে করেছেন তিনি ৬০। ৪র্থ উইকেট জুটিতে এই দুই বাঁ হাতির ১৫৩ রানের পার্টনারশিপেই কপালে দূর্ভাবনার ভাঁজ ফেলেছে বাংলাদেশকে। তবে ৬৩ রানের মাথায় বেয়ারস্ট্রকে ফিরিয়ে দিয়ে তৃতীয় উইকেট ফেলে চতুর্থ উইকেটের জন্য লম্বা সময় বাংলাদেশকে অপেক্ষায় রেখেছে ফিল্ডাররাই! যে পার্টনারশিপ ১০৮ রানে যেতে পারতো থেমে, সেই পার্টনারশিপের ২ ব্যাটসম্যান তিন তিনটি সহজ ক্যাচ দিয়ে গেছেন বেঁচে! সেঞ্চুরিয়ান বেন স্টোকস একাই পেয়েছেন ২ বার জীবন। ৩১তম ওভারে তাসকিনের বলে মিড অনে রিয়াদের হাতে দিয়ে প্রথম দফায় যখন গেছেন বেঁচে, তখন বেন স্টোকসের রান ৬৯,পরের ওভারে মাশরাফির বলে ডিপ কাভারে মোশারফ রুবেল যখন সহজ ক্যাচ দিয়েছেন ফেলে, তখন বেন স্টোকস ছিলেন ৭১ রানে! ৩৭তম ওভারে মোসাদ্দেকের বলে বেন ডাকেটের দেয়া ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগ পজিশনের ফিল্ডার মোশারফ রুবেলের হাত থেকে ক্যাচ ফসকে গেছে যখন,তখন এই অভিষিক্ত টপ অর্ডারের স্কোর ৫৯! ১৭১/৩ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত তিন তিনটি সহজ ক্যাচ ফেলে দেয়ায় এই পার্টনারশিপটি স্কোর টেনে নিয়েছেন ২১৬ পর্যন্ত!
শুধু কি এই তিনটি ক্যাচ ড্রপ? হাতের নাগালে পাওয়া ক্যাচ নেয়ার চেষ্টা পর্যন্ত করেননি দলের সবচেয়ে তরুন ক্রিকেটার মোসাদ্দেক! ৪৯তম ওভারে তাসকিনের বলে বাটলার মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েও দেখেছেন মোসাদ্দেক সৈকতের অসতর্ক ফিল্ডিং! স্ট্যাম্পিং মিসের খেসারত দিয়ে কিভাবে ২টি বোনাস রান উপহার দেয়া যায়, উইকেট কিপার মুশফিকুরের সেই মহড়া দেখেছেন সাকিব! আর নো ম্যানস ল্যান্ডে ক্যাচ ক্যারি না করার চেষ্টায় অমনোযোগী ফিল্ডিংয়ের দৃশ্য একবার নয়, বেশ ক’বার দেখেছে মিরপুরের দর্শক।
বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছেন ২টি ম্যাচ, দুই ইনিংসেই পেলেন বাটলার ফিফটি। ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের কাছে হারের ম্যাচে ৫২ বলে ৬৫ রানের ইনিংসটি দিয়েছিলেন উপহার। গতকাল মিরপুরে তার ব্যাট থেকে এলো ৩৮ বলে ৬৩ রানের ঝড়ো ইনিংস! ক্যারিয়ারের ৫ম ওয়ানডে ফিফটি উদযাপনে খেলতে হয়েছে তাকে মাত্র ৩৩টি বল। ৬৩ রানের ইনিংসে বাউন্ডারির চেয়ে ছিল ছক্কার আধিক্য (৩ চার ৪ ছক্কা)। এমন এক ইনিংসে প্রশংসিত বোলিং করেছেন শুধুই মাশরাফিÑঅমিতব্যয়ী প্রথম স্পেল (২-০-১৫-০) শেষে দ্বিতীয় স্পেলে দলের প্রয়োজনে টানা ৮ ওভার করেছেন বোলিং (৮-০-৩৭-২)। প্রথম ব্রেক থ্রু দিয়ে প্রশংসিত শফিউল কই মাছের প্রান হয়ে দাঁড়ানো চতুর্থ জুটিও দিয়েছেন ভেঙ্গে। তবে ওভারপ্রতি খরচা ৬.৫৫তে ¤øান হয়েছে সেই কৃতিত্ব। লাকি ভেন্যু মিরপুরে ৮৯তম ওয়ানডে ইনিংসে ২ উইকেট পেয়েছেন সাকিবও। তবে তার দ্বিতীয় স্পেল (১-০-২-১) এবং শেষ স্পেল (১-০-২-১) বাদ দিলে অন্য স্পেলগুলোতে করেছেন তিনি হতাশ। জেস রয় এবং বাটলারকে শিকারের বিপরীতে তার খরচা ৫৯! বাংলাদেশের বাঁ হাতি স্পিন মোকাবেলার পর্যাপ্ত প্রস্তুতিটা নিয়ে এসেছে ইংল্যান্ড দল,তা শুধু মুখে বলে নয়Ñপ্রমান দিয়েছে তা। বাঁ হাতি স্পিনার সাকিবকেই শুধু নয়, নির্বিষ করেছে ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা মোশারফ রুবেলকেও।
সর্বশেষ বিশ্বকাপে নেলসনে স্কটল্যান্ডের ৩১৮/৮ এবং ২০০৯ সালে বুলাওয়ে জিম্বাবুয়ের ৩১২/৮ স্কোর তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে বাংলাদেশ দলের। তবে দেশের মাটিতে ৩’শ প্লাস চেজ করে জয়ের রেকর্ড শুধুই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেÑ২০১৩ সালে ফতুল্লায় সফরকারীদের ৩০৭/৫ স্কোর তাড়া করে। ৩১০ চেজ করে জিততে পারলে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে নুতন ইতিহাস রচনা করবে বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।