Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাবালিকা ধর্ষণ মামলার সুবিচার চান প্রতিবন্ধী পরিবার!

ময়মনসিংহ ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:১৫ পিএম

আব্দুল হাই (৫২)। তাঁর শারীরিক উচ্চতা মাত্র আড়াই ফুট। তিন কন্যা সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার তার। তারা সবাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘ডোয়ার ফিজম বা বামুন’ রোগে আক্রান্ত। সবাই প্রতিবন্ধী, তাদের শারীরিক গঠনও এক। ময়মনসিংহের গফরগাঁর উপজেলার পাগলা থানা এলাকার বেলদীয়া গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা তারা।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হিসেবে স্থানীয় হাট-বাজারে বাদাম বিক্রি করে চালান সংসার ডোয়ার ফিজম বা বামুন রোগে আক্রান্ত আ: হাই। তার বড় মেয়ে রাহেলার (ছদ্মনাম) বয়স মাত্র ১৩ বছর। সে স্থানীয় একটি মাদরাসার তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী। তাঁর ছোট দুই বোন, এখনো তাদের স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি।

পিতার অভাব অনটনের সংসারে লেখাপড়ার পাশাপাশি ঘরের কাজে নিয়মিত মায়ের সাথে সময় দেয় রাহেলা। লেখাপড়া ও কাজের ফাঁকে প্রতিবেশী পোল্টি শ্রমিক ইলিয়াস হোসেনের(৩০) ঘরে গিয়ে প্রায়ই টেলিভিশন দেখতে যেত সে। এ সুযোগে রাহেলার প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে পোল্টি কর্মচারী লম্পট ইলিয়াসের। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল নাবালিকা এ প্রতিবন্ধী মেয়েকে ধর্ষণ করে ওই লম্পট। সেই সাথে ঘটনাটি কাউকে বললে খুন করারও হুমকি দেয় ইলিয়াস। এতে ভয় পেয়ে যায় প্রতিবন্ধী রাহেলা। কাউকে কিছু না বলেই কাটছিল তাঁর দিন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই প্রকৃতির নিয়মে রাহেলার শারীরিক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। তখন মেয়ে অসুস্থ ভেবে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় প্রতিবন্ধী বাবা-মা। ডাক্তার জানায়, মেয়ে ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এতে আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা এ প্রতিবন্ধী পরিবারের।

দিশেহারা পরিবারটি বাড়ী ফিরে এসে গত ৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় শালিস-দরবারের ঘটনার বিচার দাবি করেন। শালিসে লম্পট ইলিয়াস হোসেন হাজির না হলেও তার মালিক পোল্টি ব্যবসায়ী মো: রুহুল আমিন উপস্থিত হয়ে জানায় ইলিয়াস আসবে না, সে এক জায়গায় আছে।

ধর্ষিতার পিতা আ: হাই জানান, ‘ইলিয়াসের পোল্টি মালিক রুহুল আমিন আমি ও আমার ভগ্নীপতি রাশিদ মিয়া ও তার ভাই জুয়েলকে সাথে নিয়ে কুকসাইর এলাকায় ইলিয়াসের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে রুহুল আমিন বলে ইলিয়াস কোন ফয়সালা দিবে না, তোমরা তাকে থানায় নিয়ে যাও।

তখন আমরা তাঁর কথামত ইলিয়াসকে অটো যোগে কুকসাইর বাজারে আসলে দেখি ইলিয়াসের স্ত্রী সোনিয়া বেগম (২৪) সাথে পুলিশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় ইলিয়াস চিৎকার করে বলে যে আমাকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে, বাঁচাও। তখন পুলিশ আমাদের থানায় নিয়ে গিয়ে আমাকে বাদী করে নারী শিশু মামলা করায় এবং ইলিয়াসের স্ত্রীকে বাদী করে আমার আত্মীয়দের আসামি করে অপহরণ মামলা করে।’

এই ঘটনাটি এখন ওই প্রতিবন্ধী পরিবারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বিপদে এগিয়ে এসে আত্মীয়রা এখন অপহরণ মামলায় কারাগারে।

প্রতিবন্ধী আ: হাই দাবি করেন, মূলত রুহুল আমিন ও ইলিয়াস ষড়যন্ত্র করে এ অপহরণ নাটক সাজিয়েছে। রুহুল আমিন ওই অপহরণ মামলার সাক্ষী। আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পোল্টি ব্যবসায়ী রুহুল আমিন। তিনি বলেন, কোন ধরনের ষড়যন্ত্রে সাথে আমি জড়িত নই। তবে ধর্ষণ ঘটনা ঘটেছে এটা সত্য কিন্তু ইলিয়াস এ ঘটনায় দোষী নয়।

এবিষয়ে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাগলা থানার উপ-পরিদর্শক মো: আক্তারুজ্জামান বলেন, ধর্ষণ ও অপহরণ অভিযোগে পৃথক দুটি মামলার আসামিরা কারাগারে আছে। এখনো মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

এ ঘটনায় সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক সুবিচার দাবি করে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ধর্ষিতার পিতা আ: হাই।

এবিষয়ে ময়মনসিংহের রেঞ্জ ডিআইজি ব্যারিষ্টার হারুন অর রশিদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তার অফিস সহকারীরা অভিযোগ দায়েরর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ময়মনসিংহ

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ