বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সম্প্রতি ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে এমএলএম কোম্পানির ফাঁদ তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান ও তার সহযোগী মো. আবুল বাশার খানকে গ্রেফতার করে র্যাব। সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়ার এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শুরু হয়েছে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়।
এবার সেই ঝড়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইসলামী বক্তা মাওলানা হাফিজুর রহমান ছিদ্দিকের (কুয়াকাটা) একটি ওয়াজ মাহফিলের ভিডিও। এহসান গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আয়োজিত ওই মাহফিলে তিনি এহসান গ্রুপের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্য ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, ইসলামী বক্তা মাওলানা হাফিজুর রহমান ছিদ্দিক (কুয়াকাটা) বলছেন, ‘এত আলেমের বক্তব্য শোনার পর এই গ্রুপ নিয়ে প্রশ্ন করা সুযোগ থাকে না। যারা আমাদের ভালোবাসবেন, তারা এহসান নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না। শুধু জানার থাকলে প্রশ্ন করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, সুদের গুনাহ হলো মায়ের সঙ্গে জেনা করার সমতুল্য। গুনাহ থেকে হেফাজতের জন্য আমার বন্ধুবর প্রাণের মানুষ কলিজার টুকরো মুফতি রাগীব আহসান একটি সেবামুলক প্রতিষ্ঠান এহসান পরিবার এটা চালু করেছেন। এটা পিরোজপুর নয়, গোটা জগতের জন্য রহমত।’ তিনি জানান, আমিও এহসান পরিবারের একজন সদস্য।
তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ না করুন, যদি দুনিয়ার কোন লোভ ভেতরে এসে যায়, ওল্লাহু আ’লাম। আমরা হেদায়েতের দোয়া চাই।’
এর তিব্র সমালোচনা করে কলামিস্ট রাজু আহমেদ লিখেন, ‘মাত্র ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এহসান গ্রুপের মালিক রাগীব হাসান গ্রেফতার হলেন। সরলমনা মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে যারা এটাকে প্রমোট করে মানুষের সর্বস্ব হারানো দ্বার উম্মুক্ত করলেন তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে? ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, আলাদীনের চেরাগদের কি খবর? প্রস্তাব- শুধু মাদ্রাসায় পড়লেই তাদের হুজুর হুজুর ডাকা বন্ধ হোক। অন্তত যারা মসজিদে ইমামতি করে এবং মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে এদের বাইরে আর কাউকে হুজুর সম্মোধনের ব্যাপারে আবারও ভাবা হোক। মুফতি রাগীবদের মত ছদ্মবেশীরাই ইসলাম ও মুসলমানের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। ভন্ডামী যদি করতেই হয় তবে আসল সুরতে কর। ব্যাটা-পূর্বতনদের নাম ডোবাচ্ছিস কেন?’
আবু আহমেদ তাওহিদ লিখেন, ‘এহসান গ্রুপ বিরাট বে-ইনসাফি করেছে জাতির সাথে। আত্মসাৎ করেছে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টোপার্জিত টাকা। সর্বত্র ধর্মের নামে বাহারি রঙের রমরমা ব্যবসা চলছে। সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে প্রতারিত করে চলছে নিরন্তর। এহসান গ্রুপ সম্পর্কে দীর্ঘদিন যাবত আত্মসাতের অভিযোগ শুনে আসছি। নামধারী কিছু আলেম সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে রিতিমত তাদের সফাই গেয়েছেন। রাগিব হাসানের কাছেও বেশ কয়েকবার জানতে চাওয়া হয়েছিল এহসান গ্রুপ সম্পর্কে । কিন্তু, সে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। মুখে হাসি ঝুলিয়ে অভয় দিয়েছে । তার সবকিছুই ছিল লৌকিকতা । আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখিয়ে সবকিছু আত্মসাৎ করে নিয়েছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাংলাদেশের নামিদামি বক্তা এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের জড়ো করতো তার মাহফিলে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। এত টাকা সে কোথায় পেতো? যেসব বক্তা এবং ব্যক্তিদের পিছনে বছরের পর বছর ঘুরেও সিরিয়াল পাওয়া দায়! সেখানে হঠাৎ করে কিভাবে সে তাদেরকে নিয়ে আসে? এই সংগঠন একদিনে গড়ে ওঠেনি। আত্মসাতের নীলনকশা একদিনে আঁকা হয় নি। এর পেছনে সুদীর্ঘ পরিকল্পনা ছিল। যে সমস্ত বক্তা এবং আলেমরা তাদের প্রমোট করেছে তারাও আত্মসাতের অভিযোগ থেকে পবিত্র নয়। তারাও আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত। ফিরিয়ে দেয়া হোক দরিদ্র মানুষের ঘাম ঝরা সম্পদ। আইনের আওতায় আনা হোক ধোঁকাবাজ সংগঠনের হোতাদেরকে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে সাইফুর রহমান লিখেন, ‘মাওলানা হাফিজুর রহমান ছিদ্দিকের (কুয়াকাটা) মত একজন ইসলামী বক্তা হয়ে কিভাবে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের এভাবে সরাসরি প্রচার করেন, সেটাই আমার বুঝে আসে না। এর কি কোন দ্বায়ভার তার উপর বর্তায় না?’
কাওসার আহমেদ লিখেন, ‘আলেমদের কথা মানুষ শুনে। তাই তাদেরকে বুঝে শুনে যেকোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অবস্থান নিতে হবে। না হলে এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাস তাদের উপর কমে যাবে।’
রেজাউল করিম লিখেন, ‘এদেশের মানুষ প্রতারণার শিক্ষার হয় কারণ তাদের লোভ বেশি। আর আলেমদের কথায় মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করা ক্ষেত্রে এদের কাছে টাকা থাকে না। পকেটে হাত দিলে ছেঁড়াফাটা নোট বের হয়। আর এসব জায়গায় টাকা দেয়া ক্ষেত্রে বান্ডেল বান্ডেল টাকা বের হয়ে আসে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।