বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে কোন ক্রমেই থামছে না তিস্তা-ধরলার ভাঙন। প্রতিদিন রাক্ষুসে তিস্তার পেটে চলে যাচ্ছে মানুষের বসতভিটা,ফসলী জমি সহ নানা স্থাপনা। তিস্তা ও ধরলার তীব্র ভাঙনে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশাম,চরগতিয়াশাম বগুড়াপাড়া,তৈয়বখাঁ,বুড়িরহাট এবং ছিনাই ইউনিয়নে জয়কুমোর,কিং ছিনাই সহ ১২টি গ্রামে এক মাসে দুই সহ¯্রাধিক মানুষ গৃহহারা হয়েছে ।
কুড়িগ্রাম পাউবো জানায়, স্থায়ী ভাবে ভাঙন প্রতিরোধ কল্পে সরকার একটি মহা-পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। যা বাস্তবায়ন হলে ভাঙন প্রতিরোধ সহ নদী পাড়ের বাসিন্দাদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে আমূল পরিবর্তন আসবে। তবে দীর্ঘদিনেও ওই প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছেন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে তিস্তা এবং ছিনাই ইউনিয়নে ধরলা নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ,বুড়িরহাট,গতিয়াশাম,চরগতিয়াশাম বগুড়াপাড়া,বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি,কালির মেলা,চতুরা,গাবুর হেলান,রতি,তৈয়বখাঁ,চর বিদানন্দ এবং ছিনাই ইউনিয়নে ধরলা নদীর ভাঙনে কিং ছিনাই ও জয়কুমোর সহ ১৩টি গ্রামের বিভিন্ন স্থানে দুই সহস্রাধিক মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েকশত একর ফসলী জমি,৪কিলোমিটার রাস্তা,গাছপালা,স্থাপনা সহ বসতভিটা। অব্যাহত ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী পাড়ের মানুষদের। খোলা আকাশের নীচে ও ত্রিপল-পলিথিন টাঙ্গিয়ে এর নীচে মানবেতর দিনাতিপাত করছেন অনেকে।
এছাড়া তীব্র ভাঙনের কারনে হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পরেছে তৈয়বখাঁ বাজার,কালিরহাট বাজার,বুড়িরহাট বাজার,তৈয়বখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ২০টি প্রতিষ্ঠান,নানা স্থাপনা ও ফসলী জমি। দিনের পর দিন ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে দু’টি ইউনিয়নের মানচিত্র । এলাকাবাসীর জানান,জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে যেকোন মুহুর্তে নদী গর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এসব প্রতিষ্ঠান। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে গ্রাম ছেড়েও চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। এমতাবস্থায় তারা স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে সরকারের মহা-পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবী জানান।
চরগতিয়াশাম বগুড়াপাড়া গ্রামে দেখা যায়,ওই গ্রামের বাদশা মিয়া (৫৫) এর আধাঁপাকা বিল্ডিং বাড়িটি নদী গর্ভে বিলীনের উপক্রম হওয়ায় তিনি নিজের হাতে গড়া বাড়িটি ভেঙ্গে টিন,ইট,রড সহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর দিনাতিপাত করছেন। তিনি বলেন,আমাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই,এখন কি হবে আল্লাহ জানেন”।
একই গ্রামের নুর ইসলাম (৬০) বলেন“মোর তিন শতক জমি-বাড়িভিটা আছিল নদী কিছু থোয় নাই,আপাতত অন্যের জমিত একটা ধাপরি তুলি আছং।
একই অবস্থা উক্ত গ্রামের সত্তুর উর্দ্ধ আবিতন বেওয়ার । তারও এখন নিজের কোন জায়গা জমি নেই। আপাতত অন্যের জমিতে অস্থায়ী ঘর করে আছেন। তিনি জানান,“সকালে অন্যের দেয়া একমুট ভাত খেয়েছেন,বিকেল পর্যন্ত আর কিছু জোটে নাই।”
ছিনাই ইউনিয়নের কিং ছিনাই গ্রামের নুরইসলাম (৪০) জয়কুমোর গ্রামের নবুরুদ্দিন (৮০) আজিউল্লাহ (৭৫) তাদের বসতভিটা হারিয়ে অসহায়ত্বের কথা জানান। এই দুটি গ্রামেও শতাধিক পরিবার নদী গৃহহারা হয়েছেন। ফসলি জমি ও গাছপালাও চলে গেছে নদীতে।
এবিষয়ে কুড়িগ্রাম পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন,ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের যেসব এলাকায় তীব্র নদী ভাঙন চলছে,সেখানে জিও ব্যাগ দিয়ে নদী ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব না হওয়ায় আমরা আপাতত জিও ব্যাগ দিচ্ছি না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।