Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নদী ভাঙনে নিঃস্ব মানুষ

১৩ জেলার ২৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ভাঙতে পারে : সিইজিআইএস ভাঙন রোধে প্রচুর অর্থ খরচ হলেও অনিয়ম দুর্নীতির ফলে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না : ড. আইনুন নিশাত

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

নদী পাড়ের বাসিন্দাদের কাছে এক আতঙ্কের নাম ভাঙন। দেশে প্রতিবছরই বিস্তীর্ণ এলাকা নদীভাঙনের শিকার হয়। এতে বসতভিটা জায়গা-জমি সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের এক জরিপে বলা হয়, ভাঙনে প্রতিবছর প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর গতি রোখার চেষ্টার কারণে নদীভাঙন ঘটে। নদীতে বাঁধ দেওয়া, অপরিকল্পিতভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা নদী ভাঙনের এক অন্যতম কারণ। নদীর পাড়ের ঘাস, কাশবনসহ অন্যান্য বন উজাড় করে ফেললে মাটি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পানির তোড়ে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন বা ড্রেজিংয়ের কারণে ক্ষতির শিকার হয় নদী। আরেকটি বিষয় হচ্ছে দুর্নীতি। নদীভাঙন রোধে নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, যে প্রক্রিয়ায় এবং যে ধরনের দ্রব্য ব্যবহার করে নদীর পাড় মজবুত করতে বলা হয়, দুর্নীতি করতে গিয়ে তা করা সম্ভব হয় না। ফলে সরকারি উদ্যোগ থাকলেও বাস্তবে তা তেমন সহায়ক হয় না।

বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, নদীভাঙন রোধে সরকার প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে নদীর তীর রক্ষায় ও বাঁধ নির্মাণে প্রচুর অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। তবে বিনিয়োগ অনুপাতে সুফল পাওয়া যায়নি। সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব এবং অনিয়ম দুর্নীতির ফলে নদী রক্ষায় যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হয় সেগুলো মজবুত হয় না। ফলে প্রতি বছরই বাঁধ ভাঙে, আবার তা মেরামত করা হয়। এতে প্রচুর অর্থ খরচ হলেও নদীভাঙন রোধে খুব একটা কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।

বর্ষায় নদীভাঙন স্বাভাবিক হলেও এ বছর তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। এ বছর জুন মাস থেকেই অনেকগুলো জেলায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের প্রবেশমুখ কুড়িগ্রাম থেকে শুরু করে গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়ী পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে তীব্র নদীভাঙন। অন্যদিকে রাজবাড়ী থেকে শুরু হয়ে মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ঢাকা ও চাঁদপুর পর্যন্ত পদ্মার দুই পাড়ের বাসিন্দারাও নদীভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে। এছাড়া চাঁদপুর থেকে বঙ্গোপসাগরে যাওয়া পর্যন্ত মেঘনা এবং এর শাখা নদীগুলোও ভেঙে নিচ্ছে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলের মাঠ।

সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ট্রাস্টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের ১৩টি জেলার ২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা এ বছর ভাঙতে পারে। সিইজিআইএসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, তীব্র ভাঙনের মুখে পড়তে পারে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, রাজশাহী, ফরিদপুর ও মাদারীপুর। তবে নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিইজিআইএসের পূর্বাভাসের তালিকায় না থাকলেও শরীয়তপুর, চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় গত দুই বছর তীব্র ভাঙন দেখা যায়। এই তিন জেলায় এবারও নদীতীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে। সিইজিআইএস গত বছর থেকে দেশের ১৩টি জেলায় ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা ভাঙনের মুখে পড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ভেঙেছে ৩৮ বর্গকিলোমিটার। সিইজিআইএসের সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশের ১ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে প্রায় ১৭ লাখ ১৫ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

নদীভাঙন নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, পদ্মায় পানি দ্রুত গতিতে কমছে। পানি কমার সাথে নদীর দু’পাড়ে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাকা ইউনিয়ন থেকে রাজশাহী নাটোরের লালপুর পর্যন্ত শুরু হয়েছে ভাঙনের তাণ্ডব। রাজশাহীর গোদাগাড়ী আর বাঘা উপজেলায় ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। ভাঙনে নদীর দক্ষিণ পাড়ের চরখানপুরের আয়তন আরো কমেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোয়াডুবি ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে। কুড়ি বিঘা জমির ছিল আম বাগান, ষাল বাগান, ঘরবাড়ি ছিল গোয়াডুবি গ্রামের মাইনুল ইসলামের। মাত্র কদিনের ভাঙনে সব নদীগর্ভে চলে গেছে। সব হারিয়ে সে এখন একেবারে নিঃস্ব। ভাঙনের কবলে পড়ে ষাটটি পরিবারের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, কবরস্থান ও মসজিদ সব নদীর পেটে গেছে। এ গ্রামের সাড়ে তিনশ’ বিঘা ভেঙে বিলীন হয়েছে। এখনো হুমকির মুখে আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শত শত ঘরবাড়ি। এলাকায় কয়েকদিনের গেরস্ত এখন নিঃস্ব। ভাঙনে চরবাগডাঙ্গা আর শাজাহানপুর।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মা তীরবর্তী চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে ভাঙন। আলিপুর, খারিবাগাতি ও নিমতলা গ্রামে ভাঙনের তীব্রতা বেশি। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ বলছেন ১৯৯৬ সালের পর এবারের মতো ভাঙনের তীব্রতা তারা দেখেননি। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা ফেললেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি দ্রুত গতিতে কমছে। পাশাপাশি ভাঙছে নদীর পাড়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় প্রকৌশলীরা বলছেন, পুরো আগস্ট মাস জুড়েই যমুনা ও এর শাখা নদী বাঙালির পানি বাড়ছিল। শরতের বর্ষণ আর ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়া ঢলের পানিতে ওই সময় পানি বাড়তে বাড়তে যমুনায় এক পর্যায়ে পানি বিপদসীমার দিয়ে বয়ে যায়। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই পানি কমতে থাকে। বর্তমানে পানি প্রবাহ বিপদসীমার নিচে রয়েছে। তবে তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙছে নদীর পাড়। সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার ৩০টি পয়েন্টে ভাঙনের তীব্রতা বেশি।

ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ জানান, ফরিদপুরে তীব্র নদীভাঙনের মুখে ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইতোমধ্যেই পদ্মার বুকে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় দুইশত’ বাড়ি। ভাঙন কবলিত এলাকার স্কুলের ছাত্র, শিক্ষক ও এলাকাবাসীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তাদের ধারণা যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে স্ব স্ব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। প্রচণ্ড ভাঙনের মুখে থাকা চরভদ্রাসন উপজেলার চরভদ্রাসন ইউনিয়নের এমপি ডাঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সমাজসেবক জব্বার মাতুব্বর বলেন, স্কুলটি নদীর বুকে চলে গেলে বাচ্চাদের পড়াতে অনেক দুর যেতে হবে। ভাঙনের মুখে আছে একই উপজেলা ও ইউনিয়নের বাইলা ডাঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এবং সবুল্লা শিকদারদের ডাঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যলয়টিও। ঝুঁকিতে থাকা পশ্চিম চরনারাণদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নব খাতুন বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৮০ সালে স্থাপিত। এরপর ১৯৯৩ সালে পুনঃনির্মাণ করা হয়। বর্তমান বিদ্যালয়টির টিনসেড ভবন থেকে নদী মাত্র ৩ হাত দূরে অবস্থান করছে। আর একতলা ভবন থেকে ২০ হাত দূরে রয়েছে নদী। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এবার আর বিদ্যালয়টি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, সিরাজগঞ্জে নদীভাঙনের তাণ্ডব চলছে। বন্যায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ও পাহাড়ি ঢলে যমুনায় ঘূর্ণাবর্তা সৃষ্টি হওয়ায় জেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙনের শুরু হয়েছে। তাণ্ডব চলছে। সিরাজগঞ্জ সদর কাজিপুর, চৌহালী, শাহাজাদপুর, বেলকুচি উপজেলায় ইতোমধ্যে নদীভাঙনে ৫০ হাজার পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছে। জানাগেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলায় চলছে অব্যাহত ভাঙন। লাগাতার ভাঙনে সর্বস্ব হারা হয়েছে ৫০ হাজার পরিবার। দূর্ঘম চরাঞ্চলের মানুষ ঘরের টুইয়ে মাচাল পেতে বসবাস করছে। চোর ডাকাত তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। জেলার শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামে ও জালালপুর ইউনিয়নে পাকুরতলা, এনায়েতপুর, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর ও চৌহালী, খাসকাউলিয়া, ওমরপুর যমুনা নদীর ভাঙনের মুখে পড়ে সর্বস্ব হারা মানুষ নিদারুন দুঃক্ষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ভেঙে গেছে রাস্তা-ঘাট, বসতভিটা ও শতশত একর জমি।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে কোনো ক্রমেই থামছে না তিস্তা-ধরলার ভাঙন। প্রতিদিন রাক্ষুসে তিস্তার পেটে চলে যাচ্ছে মানুষের বসতভিটা, ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা। তিস্তা ও ধরলার তীব্র ভাঙনে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশাম, চরগতিয়াশাম বগুড়াপাড়া, তৈয়বখাঁ, বুড়িরহাট এবং ছিনাই ইউনিয়নে জয়কুমোর, কিং ছিনাইসহ ১২টি গ্রামে এক মাসে দুই সহস্রাধিক মানুষ গৃহহারা হয়েছে।

লালমনিরহাট থেকে মো. আইয়ুব আলী বসুনীয়া জানান, তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা নদী পাড়ের মানুষ। তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে ভিটেবাড়ি হারানোর শঙ্কায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের দশ গ্রামের মানুষ। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিস্তার ভাঙনে সিন্দুর্না ইউপির চর সিন্দুর্না গ্রামের ৭টি পরিবার ও কয়েকশ’ একর ফসলি জমি, পাটিকাপাড়া ইউনিয়নে ৪টি পরিবার ও ডাউয়াবাড়ীতে ৮টি পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। অনেকগুলো পরিবার বসতবাড়ি ভেঙে নিয়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে। হুমকির মুখে এই এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা।

টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি কমছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে যমুনা ও ধলেশ্বরীতে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় ইতোমধ্যে বসতভিটা, মসজিদ, বাঁধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে রয়েছে। টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, কালিহাতী ও ভূঞাপুর উপজেলায় দেখা দেয় ব্যাপক ভাঙন।
গাইবান্ধা থেকে আবেদুর রহমান স্বপন জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পানি হ্রাস পাওয়ায় ঘড় বাড়ি থেকে পানি সরে যাচ্ছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করায় ব্যাপক আকারে নদীভাঙণ দেখা দিয়েছে। নদীভাঙনে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ।

চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবাহ শহর রক্ষা বাঁধে আঘাত হানছে। সৃষ্ট ঘূর্ণী স্রোতের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছ শহররক্ষা বাঁধের মোলহেড। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, শহর রক্ষা বাঁধ টিকিয়ে রাখতে জরুরি ভিত্তিতে চর খননের পাশাপাশি বাঁধের স্থায়ী সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে চাঁদপুর শহর মেঘনায় তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না জানান, নদীর পানি কমছে সেই সাথে বাড়ছে নদীভাঙন। শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার বসতবাড়ি এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে সাময়িক প্রতিরক্ষা স্বরূপ জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্তাবধানে অন্তত ৩ হাজার বস্তা ফেলা হয়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় নদীভাঙনের এ খেলা প্রতি বছরের নিত্যদৃশ্য, তারা এর স্থায়ী সমাধানের দাবি করেছেন।
মানিকগঞ্জ থেকে শাহীন তারেক জানান, পদ্মা-যমুনাসহ জেলার অভ্যন্তরীণ নদনদীর পানি কমার সাথে সাথে তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখে দিয়েছে। চলতি বছর নদীভাঙনে জেলার হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ ৩ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকায় শত শত মানুষ। ইতোমধ্যে নদীভাঙনে অনেক পরিবারের ঘর-বাড়ি, বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক পরিবার সহায়-সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

মুন্সীগঞ্জ থেকে মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, পদ্মা ও ইছামতি নদীর ভাঙনে শতাধিক বাড়িঘর এবং প্রায় ৩০ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, মসজিদ মাদ্রাসাসহ অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি। দিশেহারা নদী তীরবর্তী গ্রামবাসী। পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করলে এ ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। নদীভাঙন এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙনে লৌহজং উপজেলার তেওটিয়া ইউনিয়নের তিন চতুর্থাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মা নদীর গ্রাসে আংশিক বিলীন হয়ে গেছে ব্রাহ্মণগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের আংশিক একাডেমিক ভবন। নদীভাঙনে ডহুরী ইউনিয়নের ৫৭ নং ডহুরী চটকিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ও খেলার মাঠ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে বিদ্যালয়ের মূল ভবন। গাওদিয়া ইউনিয়নে হাড়িদিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প নদীভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে।



 

Show all comments
  • Selina Yesmin Shelly ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২৭ এএম says : 0
    নদীকে ব্যবসায়িক কাজের জন্য দখলদারদের অভাব নেই।অথচ, নদী রক্ষা বিভাগ রয়েছে। জনগণের ঘাম ঝড়ানো টাকায় চলছে বেতন ভাতা বোনাস। সাথে আখেরি লুটপাটের উৎসব। কেউই কথা রাখেনি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Ferdous Alam ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশের নদী ভাঙ্গন এলাকার সকল বাঁধ নির্মান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে করার দাবি জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Shuvojit Mondal ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২৭ এএম says : 0
    টেকসই বেড়িবাঁধ চাই যা আমাদের অগ্রগতি শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে এবং আগামী বছর গুলোতে যাতে আমরা এমন সমস্যা আর না পড়তে হয়,,,,,,, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই ।
    Total Reply(0) Reply
  • M Aziz Rafat ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২৮ এএম says : 0
    পাউবো নামক প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি টেকসই বাঁধ ব্যাতিত সকল প্রকার বাঁধ আপনি পাবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Safaeth Kiron ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২৮ এএম says : 0
    দেশ নাকি সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে!!! অথচ স্বাধীনতার এত বছর পরও উপকূলীয় অঞ্চলে টেঁকশই বাঁধ নির্মাণ করতে পারি নাই!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Saumen Mondal ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২৮ এএম says : 0
    উন্নয়নের জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে নিচু এলাকা আর দুর্নীতিবাজরা গভীর জলে প্রচুর মাছ শিকার করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kabirul Islam ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২৮ এএম says : 0
    পানি উন্নয়ন বোর্ড না হয়ে পকেট উন্নয়ন বোর্ড হওয়া উচিত ছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Sagor ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২৯ এএম says : 0
    প্রতিবছরই একই অবস্থা। কয়েকটা কর্মকর্তাকে যদি গুলি করে মারা হতো তাহলে কিছুটা সমস্যা দুর হতো
    Total Reply(0) Reply
  • Sheikh Farid ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২৯ এএম says : 0
    পানি উন্নয়ন বোর্ডের কমকর্তারা চাই বছর বছর বাধ ভেঙ্গে যাক, তাহলে ১ কোটি টাকার কাজের জন্য ১০ কোটি টাকা পাশ করে বাকি ৯ কোটি টাকা তারা ধান্দা করতে পারবে
    Total Reply(0) Reply
  • Tuman Mollik ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৩০ এএম says : 0
    · আল্লাহ সবাইকে হেফাযত করুন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী ভাঙন

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ