Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যা-নদীভাঙনের অবনতি

অব্যাহত ভারতের ঢল : ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-পদ্মাসহ ছয় নদী ১৫ পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে উত্তাল নদী গ্রাস করছে বসতভিটা ফসলি জমি রাস্তাঘাট

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

উজান থেকে ভারতের ঢল আসা অব্যাহত রয়েছে। এরফলে দেশের প্রধান নদ-নদী ছাড়াও উপনদী, শাখা-প্রশাখাগুলোতে বাড়ছে পানি। গতকাল রোববার ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মাসহ ছয়টি নদ-নদী ১৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। পানি বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন নদী উত্তাল হয়ে উঠেছে অনেক স্থানে। বন্যা ও নদীভাঙন পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। উজানে ভারত আবারও গজলডোবা বাঁধ খুলে দেয়ায় তিস্তা নদীর পানি গতকাল সকালে বিপদসীমা অতিক্রম করে। তবে বিকাল নাগাদ পানি হ্রাস পায়।

উজানে অতি বৃষ্টির সঙ্গে নদ-নদীসমূহের উৎসে অববাহিকায় ভারতের বাঁধ-ব্যারেজগুলো খুলে দেয়ায় ঢলের তোড় বেড়েই চলেছে। দেশের উত্তর জনপদ, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল থেকে ভাটির দিকে মোহনা পর্যন্ত বন্যা এবং নদীভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে। এসব অঞ্চলে লাখো পানিবন্দি মানুষ দুর্বিষহ জীবন করছে। প্রতিদিন ভাঙনে নদী গ্রাস করছে বসতভিটা, ফসলি জমি, বাগান, ক্ষেত-খামার, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে জানা গেছে, আজ সোমবার উত্তর জনপদের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, উত্তর-মধ্যাঞ্চলে জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মধ্যাঞ্চলে টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর হয়ে ভাটিতে শরীয়তপুর ও দক্ষিণভাগে মোহনায় চাঁদপুর এই ১২টি জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

দেশের নদ-নদী পরিস্থিতি সম্পর্কে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানা যায়, গতকাল বিকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, ধরলা, ধলেশ^রী, আত্রাই এই ৬টি নদ-নদী ১৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৫০টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৫৩টি স্থানে হ্রাস ও ৬টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে।

শনিবার নদ-নদীর ৫৩টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৫২টি স্থানে হ্রাস, ৬টি স্থানে অপরিবর্তিত এবং এরমধ্যে ১৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল। শুক্রবার নদ-নদীর ৬১টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৪২টিতে হ্রাস, ৬টি স্থানে অপরিবর্তিত এবং এরমধ্যে ১২টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল।
নদ-নদীর প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল রয়েছে। যমুনা নদে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুশিয়ারা ব্যতীত প্রধান নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

গতকাল বিকাল পর্যন্ত প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, উত্তর জনপদ ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলে অন্যতম প্রধান অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে যমুনা নদ এবং এর শাখা-প্রশাখা নদীসমূহে ভারতের উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদ কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
যমুনা নদের ৮টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে ফুলছড়িতে বিপদসীমার ৩ সে.মি., বাহাদুরাবাদে ১৩ সে.মি., সারিয়াকান্দিতে ৩১ সে.মি., কাজীপুরে ২৯ সে.মি., সিরাজগঞ্জে ৩৪ সে.মি., পোড়াবাড়ী ও মথুরায় ৭ সে.মি., আরিচায় ৪ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে।

ধরলা নদীর পানি হ্রাস পেয়ে আরও কুড়িগ্রামে বিপদসীমার ২৩ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে দুধকুমার নদী পাটেশ^রীতে ৪ সে.মি. নিচে নেমেছে। উজানে ভারতে গজলডোবা বাঁধের পানি ছেড়ে দেয়ায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডালিয়া পয়েন্টে সকালে বিপদসীমা বরাবর প্রবাহিত হয়। তবে বিকাল নাগাদ ডালিয়া ও কাউনিয়ায় তিস্তা বিপদসীমার ১২ সে.মি. নিচে নেমেছে।
উত্তর-মধ্যাঞ্চলে আত্রাই নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বাঘাবাড়ীতে বিপদসীমার ৩৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্যাঞ্চলে ধলেশ^রী নদীর পানি কিছুটা বেড়ে টাঙ্গাইল জেলার এলাসিন ঘাটে বিপদসীমার ৪১ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে।

পদ্মা নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে গোয়ালন্দে বিপদসীমার ৪৪ সে.মি. এবং সুরেশ^রে ১১ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাওয়ায় বিপদসীমা বরাবর এবং ভাগ্যকুলে মাত্র এক সে.মি. নিচে রয়েছে।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়ায় যমুনার পানি বেড়ে জমির ফসল ডুবে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া ৫০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রংপুরের ৩টি উপজেলার প্রায় ৩০টি চরাঞ্চলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বাধ উপচে ও ভেঙে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত ২৮ আগস্ট রাত ১১টার দিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়াও লেছড়াগঞ্জ ও সুতালড়ীসহ চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, হাট-বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক স্থাপনাও ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

নীফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা-নদী ভাঙন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ